চীনের হ্যনান প্রদেশের বন্যাকবলিত শহরবাসীর সেবায় ইন্টার্ন ডাক্তার
2021-08-03 16:23:44

গত মাসে চীনের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হয় এবং বহু এলাকায় দেখা দেয় বন্যা। এসব এলাকার মধ্যে হ্যনান প্রদেশের চেংচৌ শহরের অবস্থা বেশি মারাত্মক আকার ধারণ করে। ২০ জুলাই চেংচৌ শহরের ৫ নম্বর সাবওয়ে ঝড়বৃষ্টির কারণে পানিতে ডুবে যায় এবং সাবওয়ে’র অনেক যাত্রী ট্রেনের বগিতে আটকা পড়েন। তেমনই একটি বগিতে একজন ইন্টার্ন ডাক্তার ছিলেন। তিনি নিজে সাবওয়ে স্টেশন থেকে বের হওয়ার পর অন্যান্য যাত্রীদের উদ্ধারে অন্যান্য আটকে পড়া বগিতে ফিরে যান। আজকের আসরে আমরা এ ডাক্তারের গল্প শেয়ার করবো।

চীনের হ্যনান প্রদেশের বন্যাকবলিত শহরবাসীর সেবায় ইন্টার্ন ডাক্তার_fororder_yyf

গত ২০ জুলাই চেংচৌ শহরে ঝড়বৃষ্টির কারণে সাবওয়ে ৫ নম্বর লাইনে গুরুতর জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তখন ৫০০ জনেরও বেশি যাত্রী ট্রেনের বগিতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। ১২ জন প্রাণ হারান। বগি থেকে উদ্ধারপ্রাপ্ত যাত্রীরা দুর্ঘটনার দৃশ্য স্মরণ করে বলেন, তখন পানির উচ্চতা বুক পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, অনেকে নিঃশ্বাস নিতে পারছিলেন না।

চেংচৌ পিপলস হাসপাতালের ইন্টার্ন ডাক্তার ইয়ু ই ফেই প্রথম দলের যাত্রী হিসেবে সাবওয়ে’র বগি থেকে বের হয়ে আসেন। তিনি হাসপাতালের দায়িত্ব পালনশেষে বাসায় ফিরছিলেন। একসময় তিনি সাবওয়েতে লোকজনের চিত্কার শুনতে পান। তারা চিত্কার করে সাহায্য চাইছে। চিত্কার শুনে তিনি আবারো সাবওয়েতে ফিরে যান এবং যাত্রীদের উদ্ধারকাজে অংশ নেন।

২০ তারিখ সন্ধ্যা ৬টা থেকে তিনি টানা ৬ ঘন্টার মতো অন্যান্য যাত্রীদের জন্য সিপিআর করেছেন এবং অন্যদের সিপিআর করা বুঝিয়ে দেন। এভাবে আরো বেশি যাত্রী এ উদ্ধারকাজে অংশ নিতে সক্ষম হয়। যখন সরকারি উদ্ধারকারীরা সাবওয়েতে পৌঁছান, ততক্ষণে তিনি ১০ জনেরও বেশি যাত্রীকে উদ্ধার করেছেন। ওই দিন রাত ১২টার দিকে ডাক্তার ইয়ু হাঁটুতে আঘাত পান। বন্যায় সাবওয়ে’র অনেক গ্লাস ভেঙ্গে গিয়েছিল। তিনি দৌঁড়াদৌড়ি করে যাত্রীদের উদ্ধারের সময় ভাঙা গ্লাসে পা কেটে ফেলেন। টানা কয়েক ঘন্টা যাত্রীদের উদ্ধার করে তার শরীরের সকল শক্তি ততক্ষণে নিঃশেষ হয়েছে। তখন তিনি সাবওয়ে স্টেশন থেকে বাসায় ফিরে যান। পরে সংবাদদাতাদের সাক্ষাত্কার দেওয়ার সময় ইয়ু বলেন, “তখন ভয়ডর কিছু পাইনি। শুধু জানতাম আমি একজন ডাক্তার, অন্যদের জীবন বাঁচানো আমার কাজ।” ডাক্তার ইয়ু তাঁর কাজের পুরষ্কারও হাতেনাতে পেয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ইন্টার্ন ডাক্তার থেকে সরাসরি আনুষ্ঠানিক ডাক্তার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।

 

ডাক্তার ইয়ু’র সাক্ষাত্কার থেকে জানতে পেরেছি যে, তিনি ব্রিটেনের লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইউসিএল’ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। তাঁর মেজর ছিল মেরুদণ্ডের চিকিত্সা। চলতি বছরের মার্চ মাসে তিনি স্নাতক হন। তাঁর অনার্স ডিগ্রী হ্যনান প্রদেশের সিনসিয়াং চিকিত্সা একাডেমি থেকে নেওয়া। তাই ব্রিটেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য তাকে অনেক প্রচেষ্টা চালাতে হয়। তখন তিনি প্রতিদিন ৫-৬ ঘন্টার বেশি বিশ্রাম নিতেন।

ইউসিএল বিশ্ববিদ্যালয় ১৮২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বিশ্বের সেরা রাঙ্কিংয়ের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, ইম্পেরিয়াল কলেজ এবং লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স (এলএসই)-এর মতো ব্রিটেনের সেরা পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম। বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের কিউএস রাঙ্কিংয়ে ইউসিএলের অবস্থান অষ্টম। এর স্নাতক শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোট ৩৫ জন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এবং ডিএনএ’র আবিষ্কারক ফ্রান্সিস ক্রিক এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছেন।

চীনের হ্যনান প্রদেশের বন্যাকবলিত শহরবাসীর সেবায় ইন্টার্ন ডাক্তার_fororder_ucl

ডাক্তার ইয়ু ইউসিএলের মেডিকেল একাডেমিতে পড়াশোনা করেছেন। একাডেমির বেসিক মেডিসিন খাতে গবেষণার দক্ষতা বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। একাডেমির শিক্ষার পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা বিশ্বমানের।

ব্রিটেনে চিকিত্সা বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় ব্যাপার। ব্রিটেনে চিকিত্সক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া বড় অর্জন হিসেবে ধরা হয়। তবে মহামারীর কারণে গত বছর থেকে ব্রিটেনে বিদেশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অনেক বাধার সম্মুখীন হয়।

ইউসিএএস পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০২১ সালে ব্রিটেনে চিকিত্সা খাতে পড়াশোনার জন্য চীন থেকে আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ, যা ২০২০ সালের তুলনায় ২৬.৭ শতাংশ বেশি। তাহলে ব্রিটেনে পড়াশোনা করতে চাইলে কী কী শর্ত মেটাতে হবে?

অনার্স পর্যায়ে পড়তে আগ্রহীদের আন্তর্জাতিক মানের উচ্চ বিদ্যালয় বা ব্রিটেনে এ লেভেল পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করতে হবে। তাদের রসায়ন বিষয় থাকতে হবে এবং পদার্থবিদ্যা, গণিত বা জিওসায়েন্সের মধ্যে একটি মেজর বেছে নিতে হবে। অধিকাংশ চিকিত্সা বা মেডিকেল কলেজের কোর্সে ভর্তির জন্য তিনটি এ+ থাকতে হয়। যদি পরীক্ষার ফলাফল যথেষ্ট ভালো না হয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিমেডিসিন কোর্সে পড়তে হবে, পড়াশোনার সময়ও ৬ বছরে দাঁড়াবে।

মেডিকেল অনার্স স্নাতক হওয়ার পর মাস্টার্স ডিগ্রীতে পড়ার আবেদন করতে চাইলে জনস্বাস্থ্য, সংক্রমণ রোগের গবেষণা, পুনর্বাসন এবং ফিজিওথেরাপি ও ফার্মেসিসহ বিভিন্ন মেজর থেকে বেছে নিতে হবে।

যে-কোনো দেশের শিক্ষার্থী ব্রিটেনের মেডিকেল বিভাগে পড়াশোনা করতে চাইলে সেই দেশের ভর্তি পরীক্ষায়ও অংশ নিতে হবে। স্বদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষার ফলাফলও ভালো হতে হবে।

বিদেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রে কী কী পরিবর্তন ঘটেছে?

সম্প্রতি চীনের শিক্ষাবিষয়ক আন্তর্জাতিক বিনিময় পরিষদের উদ্যোগে ‘চীনের আন্তর্জাতিক শিক্ষা অনলাইন মেলা’ আয়োজিত হয়েছে। বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের ৪০০টিরও বেশি স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে। এখন গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলছে। প্রতিবছরের নতুন সেমিস্টারে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে যারা বিদেশে পড়াশোনা করতে চায়, তাদের সবচেয়ে ব্যস্ততার সময় এটি। এ বছর বিদেশে পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে কী কী পরিবর্তন ঘটেছে? আজকে এ বিষয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরবো।

কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এবারের মেলা অনলাইনে আয়োজিত হয়। অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন স্কুল ‘অনলাইন ভিআর প্রযুক্তি ও লাইভ শো’ পদ্ধতিতে ছাত্রছাত্রীদের জন্য সর্বশেষ নীতিমালা তুলে ধরে এবং সংশ্লিষ্ট পরামর্শ ও প্রস্তাব দেয়। তা ছাড়া, চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় অনলাইন প্ল্যাটফর্মও গড়ে তোলা হয় এসময়।

অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ভিআর প্রযুক্তির প্রয়োগ করে ক্যাম্পাসের দৃশ্য তুলে ধরেছে, যাতে ছাত্রছাত্রীরা এবং তাদের পিতামাতারা স্কুলে না-গিয়েও ক্যাম্পাসের সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন। এবারের অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগসংলগ্ন দেশগুলোর সংখ্যা অনেক বেড়েছে।

এ মেলা সম্পর্কে চীনের শিক্ষাবিষয়ক আন্তর্জাতিক বিনিময় পরিষদের মহাসচিব ওয়াং ইয়োং লি বলেন, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশগুলো চীনা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে সহযোগিতা করতেও তারা ইচ্ছুক।

এবারের মেলায় কানাডার ২১টি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। চীনে নিযুক্ত কানাডার দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা জানান, মহামারীর কারণে চীনা শিক্ষার্থীদের বিদেশে পড়াশোনার পরিকল্পনা ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে, কানাডার সরকার এ ব্যাপারে বিকল্প চেষ্টা-তদবির করছে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ধারাবাহিক ব্যবস্থা নিয়েছে কানাডার সরকার। বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা আবেদনে সহায়তা দিচ্ছে সরকার। এ বছরের শরত্কালীন সেমিস্টারে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অফলাইন ক্লাস নেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

ব্রিটিশ সংস্কৃতি ও শিক্ষা পরিষদের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, ব্রিটেনও কোয়েরিন্টিনসংশ্লিষ্ট সহায়তা দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে বিদেশি শিক্ষার্থীদের সমর্থন দেবে।

একটি উল্লেখ্যযোগ্য ব্যাপার হলো, গত পয়লা জুলাই থেকে ব্রিটেনে স্নাতক শিক্ষার্থীদের কর্মভিসার আবেদন আবার গ্রহণ করা শুরু হয়েছে। চীনা শিক্ষার্থীরা সেখানে স্নাতক হওয়ার পর উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করতে আরও দুই থেকে তিন বছর থাকতে পারবে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে যারা সময়মতো ব্রিটেনে যেতে পারেনি, তাদের ভিসা আবেদনের সময়ও শিথিল করা হয়েছে। ২৭ সেপ্টেম্বরের আগে শিক্ষার্থীরা ভিসা নিয়ে ব্রিটেনে প্রবেশ করলে তারা স্নাতক শিক্ষার্থীদের কর্মভিসার জন্যও আবেদন করতে পারবে।

জানা গেছে, ব্রিটেনের লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমি, এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলতি বছরের শরত্কালীন সেমিস্টারে ক্যাম্পাস খুলবে। অনলাইন ও অফলাইন দুই পদ্ধতিতেই শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হবে। চীনা শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসে গিয়ে ক্লাস করার প্রস্তুতি নিতে পারে।

সুপ্রিয় বন্ধুরা, সময় দ্রুত চলে যায়, আজকের বিদ্যাবার্তা এখানে শেষ হয়ে এলো। আমাদের অনুষ্ঠান যারা মিস করেছেন, তারা আমাদের ওয়েবসাইটে তা শুনতে পারেন। ওয়েবসাইট ঠিকানা www.bengali.cri.cn,ফেসবুকে CRIbangla মাধ্যমে চীন ও বিশ্ব সম্পর্কে আরও অনেককিছু জানতে পারেন। তাহলে এবার বিদায় নিচ্ছি, সবাই ভালো থাকুন, সুন্দর থাকুন, আগামী সপ্তাহে আবার কথা হবে,যাইচিয়ান। (সুবর্ণা/আলিম/মুক্তা)