একজন সাংবাদিক হিসেবে আমরা অবশ্যই অনেক মানুষকে চিনতে পারি। যেমন, যে মানুষ কঠিন সময়ে আপনাকে সহায়তা করেছেন অথবা পথ হারিয়ে যাওয়ার সময় আপনাকে গাইড করেছেন, এমন মানুষকে ভুলে যাওয়া কঠিন। কিন্তু সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে আমি বুঝতে পেরেছি যে, কোনো কোনও মানুষ এতো গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এমন কি জীবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ! কিন্তু আমরা তাঁদের নাম জানি না!!
কিছুদিন আগে আমি আমার সহকর্মীদের সঙ্গে সিনচিয়াংয়ের থাছেং সড়ক পরিচালনা ব্যুরোর এডমিন শাখার মাইথাসি বাতাস ও তুষার উদ্ধার ঘাঁটিতে সাক্ষাত্কার নিয়েছি। ঘাঁটিটি সিনচিয়াংয়ের বিখ্যাত দৃশ্যস্থান সুরক্ষা করে। শীতকালে সবসময় বাতাস ও তুষার থাকে এখানে। তখন গুরুতর ট্র্যাফিক সমস্যা দেখা যায়। পরিবহনব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়।
সাক্ষাত্কার নেয়ার সময় সেখানে প্রচণ্ড বাতাস ছিল। সামান্য দূরেও কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। রাস্তায় বিভিন্ন বাধা ছিল। ঘাঁটিটি তখন অনেক টেলিফোন পায়। আমরা একজন সিনিয়র উদ্ধারকারীর সঙ্গে ট্র্যাফিক জ্যামের স্থানে গিয়েছিলাম।
উদ্ধারদল ঘাঁটি থেকে বের হয় রাত ১০টায়। তখন ভয়াবহ বাতাস ছিল। সাথে ঘন তুষার। যদিও আমরা গাড়িতে ছিলাম, তবুও কানে বাতাস লাগছিল, চোখের কোণে আঘাত হানছিল তুষারকণা।
গাড়িচালক ছাও আমাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ ধরণের আবহাওয়ায় ছাও সামনে পথ দেখতে পান না। তিনি ঘনিষ্ঠভাবে সামনের গাড়িকে শুধু অনুসরণ করেন। যদি এখানে গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা কম হয়, তাহলে অবশ্যই এখানে গাড়ি চালানো মুশকিল।
এক বা দুই ঘন্টা পর আমরা সামনের গাড়ি হারিয়ে ফেলি। তখন ভোর হয়েছে। আস্তে আস্তে আবহাওয়া কিছুটা ভাল হয়েছে। আমাদের গাড়ি চালানোর গতি প্রতি ঘন্টায় মাত্র ১০ কিলোমিটার।
গাড়ির জানালায় জমে থাকা বরফ গলার জন্য গাড়িচালক গাড়ির হিটার ছাড়েন। এতে গাড়ির ভিতরের গরম হয়ে যায়। আমার অনেক তৃষ্ণা লাগে। কিন্তু পানি খেতে পারি না।
অবশেষে আমরা গন্তব্যে পৌঁছাই। সেখানে গাড়িতে ঘন বরফ ও তুষার ছিল। ভেতরে মানুষ আছে কি না দেখা যায় না। উদ্ধারকারীরা ভয়াবহ তুষারে গাড়ির বাইরে গিয়ে অন্যকে উদ্ধার করা শুরু করেন।
গাড়ির দরজা খোলার সময় বাইরে বাতাস ও তুষার আমাদের মুখে লাগছিল। কয়েক মিনিট পর চালক ছাও একটি গাড়ির পাঁচ জন যাত্রীকে উদ্ধার করেন।
আমাদের গাড়িতে ফিরে আসার পর তার পুরো শরীরে তুষার ও বরফ ছিল। একটি মেয়ে আমাদেরকে জানাল, তাঁরা পাঁচ জন গাড়িতে উদ্ধারকারীদের জন্য পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা অপেক্ষা করেছেন।
তখন গাড়ির বাইরের তুষার কিছুটা কমেছে। গাড়ি তুষারে যেন সমুদ্রে একটি ছোট জাহাজ। আমরা বাতাস ও তুষারে খুব কাঁপছিলাম। প্রায় ভোর তিনটায় আমাদের শারীরিক শক্তি প্রায় শেষ। আমরা সবাই ঘুমিয়ে পড়ি। যখন আমি ঘুম থেকে জেড়ে উঠি, তখন চালক ছাও গাড়ি চালাচ্ছিলেন।
দুর্গন্ধযুক্ত তাপ, যানজট এবং গাড়ির ধোঁয়ার গন্ধে আমাদের বমি বমি লাগছিল। সকাল ৬টায় চালক ছাও সড়কে বিশ্রাম স্টপে থামেন। আমরা দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে যাই।
প্রায় দুই ঘন্টার বিশ্রাম নেয়ার পর চালক ছাও পুনরায় উদ্ধারকাজ শুরু করেন।
তখন পর্যন্ত আমরা চালক ছাও’র নাম জানতাম না। আমার এতে লজ্জা বোধ হয়। পরে তাঁর কর্মীদের কাছ থেকে জেনেছি, চালক ছাও’র পুরো নাম ছাও ইউ লিয়াং।