যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের স্বীকৃত ‘গোপন চুরির সাম্রাজ্য’
2021-07-30 15:01:01

সংবাদ পর্যালোচনা

 

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিভাগের পরিচালক, মুখপাত্র, সিনিয়র কর্নেল উ ছিয়েন গতকাল (বৃহস্পতিবার) এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইবার ইন্টেলিজেন্স অপারেশনে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের স্বীকৃত ‘দ্য ম্যাট্রিক্স’ (The Matrix) এবং ‘গোপন চুরির সাম্রাজ্য’। এসময় যুক্তরাষ্ট্র কিছু বৈশ্বিক ইস্যুতে দায়িত্বহীন আচরণের জন্য বিশ্বের নিন্দা কুড়িয়েছে। বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

 

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ডেনমার্কের গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে মিত্র দেশের নেতাদের ওপর নজরদারি করেছে। এ বিষয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এটি শুধু ভাসমান বরফখণ্ডের দৃশ্যমান অংশ মাত্র, মার্কিন বাহিনীর সাইবার কমান্ড দফতর সম্প্রতি সাইবার ইন্টেলিজেন্স অপারেশনে বাজেট বাড়িয়েছে এবং একটি নতুন সাইবার মিশন বাহিনী গঠন করেছে। এ সম্পর্কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র উ ছিয়েন বলেন,
 

“যুক্তরাষ্ট্র সাইবার খাতের সামরিকীকরণ এবং সাইবার হামলার শক্তি জোরদার করছে। উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র দুই হাজারেরও বেশি ধরনের সাইবার অস্ত্র তৈরি করেছে; বিশ্বের এক নম্বর সাইবার অস্ত্র শক্তির অধিকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আমরা আন্তর্জাতিক সমাজকে যৌথভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার বুলিংয়ের বিরোধিতা করার আহ্বান জানাই। যুক্তরাষ্ট্রকে তার মনিটর কার্যক্রম ব্যাখ্যা করতে হবে এবং গ্লোবাল সাইবার স্পেসে সৃষ্টি উত্তেজনা ও বৈরিতা বন্ধ করতে হবে। চীন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশের নেটওয়ার্কের সার্বভৌমত্ব, তথ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করবে।”

 

উ ছিয়েন উল্লেখ করেন, দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাসঙ্গিক সংস্থা বিদেশি সরকার, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিদের উপর বড় আকারের, সংগঠিত সাইবার চুরি, মনিটর ও আক্রমণ চালিয়ে আসছে। ‘উইকিলিক্স’, ‘স্নোডেন ঘটনায়’ সম্প্রতি ডেনমার্কের গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে মিত্র দেশগুলির নেতাদের মনিটর করার ঘটনা প্রমাণ করে যে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের স্বীকৃত দ্য ম্যাট্রিক্স (The Matrix) এবং ‘গোপন চুরির সাম্রাজ্য’। গ্লোবাল নেটওয়ার্ক নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় হুমকি যুক্তরাষ্ট্র। উ ছিয়েন এদিন যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত ‘চীনা সামরিক হুমকির’ দাবি খণ্ডন করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হলো চীনের উন্নয়ন বন্ধ করা এবং নিজের সামরিক শক্তি উন্নয়নের জন্য অজুহাত খুঁজে বের করা। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে তার ভুল মন্তব্য ও আচরণ বন্ধ করার দাবি জানান। উ বলেন, চীনের সামরিক বাহিনী মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটির ধারণা অনুসারে ইতিবাচকভাবে বড় দেশের বাহিনীর আন্তর্জাতিক দায়িত্ব সক্রিয়ভাবে পালন করছে এবং আন্তর্জাতিক সমাজকে আরও বেশি জন-নিরাপত্তা সংক্রান্ত পণ্য সরবরাহ করার চেষ্টা করছে।

 

চীনা নৌবাহিনীর নিয়মিত নৌবহর এডেন উপসাগর, সোমালিয়ার সমুদ্রসীমায় নিয়মিত এসকর্ট করে এবং ইতিবাচকভাবে ইন্দোনেশিয়াকে সহায়তা করে বিধ্বস্ত সাবমেরিন উদ্ধারের মতো মানবিক উদ্ধার অভিযানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। পিস আর্ক ভাসমান জাহাজ ("Peace Ark" hospital ship) অনেকবার বিদেশে গিয়ে চিকিত্সার কাজ করেছে। এটি এমন একটি সত্য যা আন্তর্জাতিক সমাজ প্রত্যক্ষ করেছে।

 

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৩১ অগাস্টের আগে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে উ ছিয়েন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে বাহিনী প্রত্যাহারের ঘোষণা করার পর থেকে আফগান পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হয়েছে। এসব ঘটনা বার বার প্রমাণ করে যে বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের ঝামেলা সৃষ্টি করার অভ্যাস আছে এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় দায়িত্বহীন দেশ। তিনি বলেন,

 

“যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে সমস্যা তৈরি করেছে। আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির সম্পূর্ণ দায় যুক্তরাষ্ট্রের। যুক্তরাষ্ট্র তা অস্বীকার করতে পারে না এবং এই ‘বোঝা’ অন্য অঞ্চল বা দেশের ওপর চাপিয়ে দেবে।”

 

তিনি আরো জোর দিয়ে বলেন, চীন ও আফগানিস্তান ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ। চীন সবসময় মনে করে, রাজনৈতিক সংলাপ হলো আফগানিস্তান জাতীয় সমঝোতা এবং স্থায়ী শান্তি বাস্তবায়নের মৌলিক উপায়। চীন আফগান শান্তি প্রক্রিয়াকে সমর্থন দেবে এবং আফগানিস্তানের শান্তিপূর্ণ পুনর্গঠনে সহায়তা করবে।

(জিনিয়া/তৌহিদ/শুয়েই)