মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর চীন সফর ও চীনের স্পষ্ট বার্তা
2021-07-30 10:33:08

এ সপ্তাহের গোড়ার দিকে দুদিনের জন্য চীন সফর করেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যান। এ সফরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিয়ে ফেং-এর সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। ওয়েন্ডি শেম্যানের চীন সফরে চীনের নেতাদ্বয় বরাবরের মতো বিভিন্ন ইস্যুতে চীনের সার্বিক ও ন্যায়সঙ্গত অবস্থান তুলে ধরেন। তা ছাড়া, মার্কিন একতরফা ও একগুঁয়েমি আচরণ সংশোধনের পরামর্শ দেন। বিস্তারিত শুনুন আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

গত সোমবার চীনের থিয়েনচিন সফররত মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েনডি শেরম্যানের সঙ্গে চীনা নেতাদের বৈঠক হয়। বৈঠকে চীনের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, যুক্তরাষ্ট্র চীনকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে এবং চীনকে একটি কাল্পনিক শত্রু হিসাবে গণ্য করছে।

চীনা নেতারা সুস্পষ্টভাবে জানান যে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো চীন কখনও অন্য কোনো দেশে আগ্রাসন চালায়নি বা নিজের মতাদর্শ অন্য কোনো দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেনি।

চীন অন্য কোনো দেশকে দাবিয়ে রাখার নীতিতে বিশ্বাসী নয়; আবার নিজেও বাইরের চাপে নতি স্বীকার করে না। বাইরের আগ্রাসন হলে চীন নিজের অধিকার রক্ষায় রুখে দাঁড়ায়।

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে চীনা নেতারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে জবরদস্তির কূটনীতির প্রবর্তক। দেশটি একপক্ষবাদ অনুসরণ করে থাকে এবং যখন-তখন অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে দ্বিধা করে না। যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত ‘নিজের শক্তি ও অবস্থান থেকে অন্য দেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপন’-এর আসল কথা হলো অন্য দেশের ওপর অন্যায় বল-প্রয়োগ ও অন্য দেশকে হুমকি-ধামকির মধ্যে রাখা। এটাই জবরদস্তির কূটনীতি, যার স্বত্ব একান্তই যুক্তরাষ্ট্রের নিজের।

চীনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বৈঠকে বলেন, চীনের বৈশিষ্ট্যময় সমাজতান্ত্রিক পথ ও ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ, অপবাদ বা উত্খাতের অপচেষ্টা বেইজিং সহ্য করবে না । চীনের পথ ও ব্যবস্থাপনা ঐতিহ্যিক সিদ্ধান্ত ও জনগণের সিদ্ধান্ত; যা দেশের ১৪০ কোটি মানুষের দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণ এবং চীনা জাতির ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িত। চীনের কেন্দ্রীয় স্বার্থে তা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি বলেন, চীনা জনগণের সুখী জীবনের অধিকার রয়েছে, চীনের আধুনিকায়নের যোগ্যতা রয়েছে; আধুনিকায়ন যুক্তরাষ্ট্রের একক অধিকার নয়। চীনের বিরুদ্ধে একতরফা নিষেধাজ্ঞা, উচ্চ শুল্ক ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি খাতের অবরোধ নির্মূলের তাগিদ দেয় বেইজিং।

ওয়াং ই আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও ভূভাগের অখণ্ডতা লঙ্ঘন করতে পারে না। তিব্বত, সিনচিয়াং, হংকং ইস্যু মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক ব্যাপার নয়, বরং এটি বিচ্ছিন্নতাবাদী বিষয়। কোনো দেশ নিজের সার্বভৌমত্বের ক্ষতি সহ্য করতে পারে না। তাইওয়ান ইস্যুটি আরো গুরুত্বপূর্ণ, যদিও ‘পুনর্মিলন’ এখনো বাস্তবায়ন হয় নি, তবে তাইওয়ান চীনা ভূখণ্ডের একটি অংশ; এ বাস্তবতা কখনও পরিবর্তন হয় নি এবং হবে না। তাইওয়ান ইস্যুতে মার্কিন পক্ষকে তার প্রতিশ্রুতি মেনে চলার তাগিদ দেয় বেইজিং।

 

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী সিয়ে ফেং মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েনডি শেরম্যানের সঙ্গে বৈঠকে দুটি দাবি জানান। তিনি চীনের প্রতি ভুল মার্কিন নীতিমালা ও মন্তব্য সঠিক করার দাবি জানান এবং চীনের উদ্বেগ-সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মামলার তালিকা দেন।

এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ওই দিন অর্থাত্ সোমবার জানায়, মার্কিন কূটনীতিক শেরম্যান চীনা কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের তীব্র প্রতিদ্বন্দিতাকে স্বাগত জানায়, তবে চীনের সঙ্গে কোনো বিরোধ চায় না আমেরিকা।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নেড প্রাইস এক বিবৃতিতে জানান, শেরম্যান ও ওয়াং ই চীন- যুক্তরাষ্ট্র বন্ধুত্বের দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনার শর্তাবলী নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাদের আলোচনার বিশেষ বিষয় বস্তুর মধ্যে ছিল, হংকং, সিনচিয়াং, সাইবার হামলা-সহ নানা উত্তপ্ত ইস্যু যাতে আমেরিকার উদ্বেগ রয়েছে।