দেহঘড়ি পর্ব-২৮
2021-07-30 19:24:24

‘দেহঘড়ি’র এ পর্ব আমরা সাজিয়েছি স্বাস্থ্যখাতের একটি প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য বুলেটিন, খাদ্যের গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা ‘কী খাবো, কী খাবো না’ এবং সাক্ষাৎকারভিত্তিক আয়োজন ‘আপনার ডাক্তার’ দিয়ে।

## প্রতিবেদন

শ্রীলঙ্কার গবেষণা: ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকর সিনোফার্মের টিকা

করোনারভাইরাসের সবচেয়ে ভয়ংকর ধরন ডেল্টার বিরুদ্ধে সিনোফার্মের টিকা অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। সিনোফার্মের দুই ডোজ টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের শরীরে অন্টিবডি তৈরি করে ডেল্টার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বড় সফলতার কথা উঠেছে এসেছে শ্রীলঙ্কায় পরিচালিত এক গবেষণায়। দেশটির শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় শ্রী জয়াবর্ধনপুরা বিশ্ববিদ্যালয় ওই গবেষণা চালায়। করোনার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ধরন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে এই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টেকে। ভারতের পর বর্তমানে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোতে তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনার এই ধরন।

দেহঘড়ি পর্ব-২৮_fororder_sheng

Chinese COVID-19 Vaccine Is 86% Effective, UAE Says | Timeওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে এই টিকা অত্যান্ত শক্তিশালী। সাধারণ প্রাকৃতিক সংক্রমণগুলোর ক্ষেত্রে শরীর যেমন অ্যান্টিবডি তৈরি করে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে, ডেল্টার ক্ষেত্রেও সিনোফার্মের টিকা একই রকম অ্যান্টিবডি তৈরি করে।

ওই গবেষণা দলে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ইমুউনোলজি অ্যান্ড মলিকিউলার বিভাগের প্রধান নীলিকা মালাভিক, গবেষক ডাক্তার চান্দিকা জীওয়ান্দারা, এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক গ্রাহাম ওগ ও আলেন টাউনসেন্ড।

অধ্যাপক নীলিকা মালাভিক জানান, ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে ৯৮ শতাংশ এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের শরীরে ৯৩ শতাংশ অ্যান্টিবডি তৈরি করছে সিনোফার্মের টিকা।

ওই গবেষণায় দেখা যায়, যারা সিনোফার্ম টিকার দুটো ডোজ নিয়েছেন তাদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনা থেকে সুস্থ হওয়া মানুষের মতো একই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। আর ভ্যাকসিনের দুটো ডোজ-প্রাপ্তদের মধ্যে ৮১.২৫ শতাংশ মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি নিউট্রালাইজ করতে সক্ষম সিনোফার্মের এই টিকা।

শ্রীলঙ্কায় এখন পর্যন্ত ৪৬ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ সিনোফার্ম টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন এবং উভয় ডোজ নিয়েছেন ১২ লাখ ৯০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এই বিশাল সংখ্যক মানুষ সিনোফার্মের টিকা নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কায় কোনও বড় ধরনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তানজিদ/রহমান

 

##হেল্‌থ বুলেটিন

দ্বিতীয়-তৃতীয় সন্তানের জন্য প্রণোদনা চীনের সিচুয়ানে

চীনের সিচুয়ান প্রদেশের পানজিহুয়া পৌরসরকার সেখানকার বাসিন্দাদের দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় সন্তান জন্মদানের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। বুধবার দেওয়া এ ঘোষণায় বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ২১ জুনের পর জন্ম নেওয়া দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় শিশুর জন্য মাসে ৫০০ ইউয়ান ভাতা পাবে তার পরিবার। শিশুটির বয়স তিন বছর হওয়া পর্যন্ত এ ভাতা অব্যাহত থাকবে।

টিকার আওতায় বাংলাদেশের ১ কোটি ২৬ লাখ মানুষ

ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর এ পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন প্রায় ১ কোটি ২৬ লাখ মানুষ। এদের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৮২ লাখ ৭০ হাজার আর উভয় ডোজ নিয়েছেন ৪৩ লাখ ২২ হাজার ব্যক্তি। এর মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ১ লাখ ১৮ হাজার ডোজ, চীনের সিনোফার্মের টিকা ১৮ লাখ ৭৮ হাজার ডোজ, ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা ৫০ হাজার ৫২৩ ডোজ আর মডার্নার টিকা ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫৩ ডোজ। 

করোনা টিকা সরবরাহে সিনোভেক-ইউনিসেফ চুক্তি

চীনের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিনোভেক বায়োটেকের সঙ্গে করোনা টিকা সরবরাহে চুক্তি করেছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক জরুরি শিশু তহবিল-ইউনিসেফ। সোমবার স্বাক্ষরিত ওই চুক্তি অনুযায়ী ইউনিসেফ ২০২১ সালের মধ্যে সিনোভেকের কাছ থেকে ২০ কোটি ডোজ টিকা পাবে। সুবিধাভোগী দেশগুলোর চাহিদার ভিত্তিতে আসছে আগস্ট থেকে এই টিকা সরবরাহ শুরু করবে চীনা প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত জুনে জরুরি ব্যবহারের জন্য সিনোভেকের টিকা অনুমোদন দেয়।

৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হচ্ছে

বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ নাগরিককে টিকার আওতায় আনার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সরকার চায় দেশের সব নাগরিককে টিকার আওতায় আনতে। এরই অংশ হিসেবে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। - তানজিদ/রহমান

 

## কী খাবো, কী খাবো না

দুনিয়ার সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ফল আনারস

বাইরে কঠিন ও কণ্টকময়, কিন্তু ভিতরটা সুগন্ধযুক্ত, সুস্বাদু ও ভীষণ স্বাস্থ্যকর। হ্যাঁ আনারসের কথা বলছি। স্বাস্থ্যগত গুণের জন্য আনারসকে পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ফল বলে মনে করা হয়। আনারস সম্পূর্ণ ফ্যাট বা চর্বিমুক্ত, তবে এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি ও সি, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, তামা ও আরও এক ডজনের মতো খনিজ পদার্থ ও পুষ্টি উপাদান, যেগুলো শরীরের জন্য প্রতিদিন দরকারী। আসুন জেনে নিই মানবদেহের জন্য আনারসের উপকারিতা সম্পর্কে:

দেহঘড়ি পর্ব-২৮_fororder_sheng1

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: আনারস ভিটামিন সি’র একটি শক্তিশালী উৎস। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (ইউএস এফডিএ) একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য দিনে যেটুকু ভিটামিন সি গ্রহণের সুপারিশ করে, আনারসে তার অর্ধেক পাওয়া যায়। ভিটামিন সি পানিতে দ্রবণীয় একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা দেহকোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।

ভাইরাসজনিত রোগ থেকে বাঁচায়: আনারসে থাকা ভিটামিন সি ভাইরাসজনিত ঠাণ্ডা ও কাশি কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া জ্বর ও জন্ডিসের প্রকোপ কমাতেও আনারস বেশ কার্যকরী। নাক দিয়ে পানি পড়া, গলাব্যথা ও ব্রংকাইটিসের ওষুধ হিসেবে আনারসের জুস ভাল কাজ করে।

হাড় শক্ত করে: আনারসে থাকা ম্যাঙ্গানিজ হাড় ও তার সঙ্গে সংযুক্ত কোষকে মজবুত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাসিক ঋতুচক্র বন্ধ হয়েছে এমন নারীদের অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের টিস্যু-ক্ষয়জনিত রোগ থেকে রক্ষা করে ম্যাঙ্গানিজ। এছাড়া আনারসে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক কাপ আনারসের জুস থেকে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক প্রয়োজনীয় ম্যাঙ্গানিজের ৭০ শতাংশ পাওয়া যায়। সেকারণে শরীর শক্ত রাখতে শিশু, পূর্ণবয়স্ক মানুষ ও প্রবীণদের প্রতিদিন কয়েক টুকরা আনারস খাওয়া উচিৎ।

ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধ করে: ক্যান্সার ও হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগ সৃষ্টি হয় মানবদেহের কোষের ওপর ফ্রি-রেডিকেল বা মুক্তমুলকের বিরূপ ক্রিয়ার ফলে। তবে ফ্রি-রেডিকেলের এমন ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দেহকোষকে রক্ষা করে আনারসে থাকা পানিতে দ্রবণীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অর্থাৎ ভিটামিন-সি। ফলে ক্যান্সার ও হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগ বাধাগ্রস্থ হয় দেহে বাসা বাঁধতে।

উচ্চ রক্তচাপ কমায়: অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের পাশাপাশি আনারসে থাকে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। পটাশিয়াম একটি  শক্তিশালী প্রাকৃতিক ভ্যাসোডায়ালেটর বা রক্তনালী প্রশস্তকারী। অর্থাৎ পটাশিয়াম রক্তনালীর টান কমায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তচলাচল নির্বিঘ্ন করে, যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ কমে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে: আনারসে কোনও ফ্যাট না থাকায় পরিমিত পরিমাণে এ ফল খেলে বা এর জুস পান করলে তা শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। যারা ওজন কমানের চেষ্টা করছে, তাদের জন্য একটি ভালো পথ্য হতে পারে আনারস।

সাইনোসাইটিস ও অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণ করে: আনারসে থাকা ভিটামিন সি এবং ব্রোমেলেইন নামক এনজাইম গলা ও নাকের ভিতরে শ্লেষ্মা কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে সাইনোসাইটিস ও অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই যারা মৌসুমী অ্যালার্জিতে আক্রান্ত তাদের উচিৎ খাদ্যতালিকায় আনারস রাখা।

হজমশক্তি বাড়ায়: হজমশক্তি বৃদ্ধিতে আনারসের তুলনা নেই। এ ফলে থাকা ব্রোমে্লেইন হজমশক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে। তাই বদহজম বা হজমজনিত যে কোনও সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আনারস হতে পারে একটি মহৌষধ।

দাঁত ও মাড়ি রক্ষা করে: আনারসে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট এজেন্ট, যা মাড়ির কোষকে দৃঢ় করে এবং এমনকি মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। সেকারণে যাদের দাঁত নড়বড়ে হয়ে গেছে, তাদেরকে আনারস খাবার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এছাড়া আনারসে থাকা ক্যালসিয়াম দাঁতের সুরক্ষায় কাজ করে। নিয়মিত আনারস খেলে দাঁতে জীবাণুর সংক্রমণ কম হয়, যার ফলে দাঁত ঠিক থাকে।

চোখ বাঁচায়: চোখের একটি রোগ ‘ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন’ যার ফলে রেটিনা নষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে আক্রান্ত ব্যক্তি অন্ধ হয়ে যায়। তবে আনারসের বেটা ক্যারোটিন এই রোগ থেকে রক্ষা করে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় আনারস রাখলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

ক্রিমি নাশ করে: ক্রিমিনাশক হিসেবে আনারস অতুলনীয়। নিয়মিত আনারস বা তার রস খেলে কয়েকদিনের মধ্যেই কৃমির উৎপাত বন্ধ হয়ে যায়। কৃমি দূর করতে সকালবেলায় ঘুম থেকে জেগে খালি পেটে আনারস খাওয়া উচিত। - রহমান

দেহঘড়ি পর্ব-২৮_fororder_sheng2

## আপনার ডাক্তার

আজ আমরা কথা বলেছি বাতরোগ নিয়ে। Community-Oriented Program for Control of Rheumatic Diseases অর্থাৎ COPCORD পরিচালিত ২০০৫ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে ১৫ বছরের অধিক বয়সী মানুষদের মধ্যে ২৪ শতাংশই কোনও না কোনও ধরনের বাতরোগে  আক্রান্ত। বাত একটি সিস্টেমিক রোগ। অর্থাৎ এই রোগ পুরো শরীরে প্রভাব ফেলে। অস্থিসন্ধিতে ইউরিক অ্যাসিড জমা হয়ে এ রোগের উৎপত্তি হয়। বাত সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি হয়ে থাকে। মহিলাদের ক্ষেত্রে সাধারণত এটি রজঃনিবৃত্তির পর দেখা দেয়। বাতরোগের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ইত্যাদি নিয়ে কথা বলতে আজ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও রিউম্যাটোলজিস্ট ডাক্তার শোয়েব মোমেন মজুমদার। তিনি কাজ করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে।

  •  দেহঘড়ি অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cnর মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।