যে কারণে পরপর দুই বছর লোকসানে পড়লো কোরবানির পশু ব্যবসায়ীরা
2021-07-29 19:25:32

আজহার লিমন, ঢাকা: দেশের দক্ষিণের জেলা ফরিদপুর থেকে ১৩টি গরু নিয়ে কোরবানির ঈদের ৮ দিন আগে, চট্টগ্রামের বিমানবন্দর হাটে গিয়েছিলো মৌসুমী বিক্রেতা কাজী ওবায়দুর রহমান। বলছিলেন, লাভ তো দূরের কথা গরুর কেনাদামে বিক্রি করাটাই তার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো হাটে।

যে কারণে পরপর দুই বছর লোকসানে পড়লো কোরবানির পশু ব্যবসায়ীরা_fororder_jing3

ছবি: কাজী ওবায়দুর রহমান, গরু ব্যবসায়ী

কাজী ওবায়দুর রহমান বলেন, মোটামুটি ৬ হাজার গরু বিক্রি হয়ে যাওয়ার পরপরই হাটে হাহাকার লাগা শুরু হয়ে। পরে এমন হলো চালানই টিকে না।

কাজী ওবায়দুর আরও জানান, ১৯ লাখ টাকা দিয়ে ১৩টি গরুতে তার প্রত্যাশা ছিলো ২ লাখ টাকা লাভ হবে। কিন্তু উল্টো ১ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে তার

কিছু লোকসান হলেও কাজী ওবায়দুর চট্টগ্রামের হাটে তার সবগুলো গরুই বিক্রি করে এসেছেন। তবে সেটাও করতে পারেননি অনেকে। বিশেষ করে বিক্রি করতে না পারায় ঋণের টাকায় কেনা বড় গরু মাত্রাতিরিক্ত পরিবহন খরচ দিয়ে ফেরত আনতে বাধ্য হয়েছেন অনেক পাইকার। ফলে ঘর ছাড়া হচ্ছেন অনেকে।

সরকারি হিসেবও বলছে, গেল ২ বছর ধরে ক্রমাগত কমছে কোরবানির পশু বেচাকেনা। ২০১৯ সালে সবশেষ ১ কোটি ৬ লাখ কোরবানির পশু বিক্রি হলেও ২০২০ সালে তা সাড়ে ৯৪ লাখে এসে নামে। চলতি বছর বিক্রি হয়েছে আরও কম। প্রাণি সম্পদের অধিদপ্তরের হিসেবে, চলতি বছরে কোরবানীকে লক্ষ্য করে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ পশু পালন করেছে কৃষকেরা। এর বিপরীতে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৯১ লাখ। কিন্তু কেন? জানতে চেয়েছিলাম অধিদপ্তরের প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ বিভাগের পরিচালক ড. দেবাশীষ দাসের কাছে।

যে কারণে পরপর দুই বছর লোকসানে পড়লো কোরবানির পশু ব্যবসায়ীরা_fororder_jing4

ছবি: ড. দেবাশীষ দাস, প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ বিভাগ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

 

তিনি বলেন, করোনায় মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা গত দু বছর আগে যেমন ছিলো তেমনটি নেই। যে কারণে মানুষ অনেক দাম দিয়ে কিনতে হয়তো আগ্রহী হয় নি। কিন্তু এর আগের সময়ে আমরা দেখেছি, আমাদের বড় গরু কখনও পড়ে থাকে নাই। ফাইন্যান্সিয়ালি যারা সলভেন্ট তারা দুটো তিনটে গরু কিনতো। এবার তারা একটা দিয়েই কোরবানি করেছে। আমরা মনে করি এ ধারাবাহিকতাটা অক্ষুন্ন থাকবে যদি আমাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আবার ঘুরে দাড়ায়।

এই কর্মকর্তা বলছেন, করোনাকালীন সময়ে প্রায় পৌনে ৬ কোটি খামারিকে প্রায় পৌনে ৭ কোটি টাকা প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এর বিপরীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি পশু সরবরাহ হয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবেশি দেশগুলো থেকে পশু ঢোকা বন্ধ থাকার পরও কোনরকম সংকট তৈরি না হওয়াকে সফলতা হিসেবেও দেখছেন এই কর্মকর্তা। কিন্তু কোরবানিকেন্দ্রিক মৌসুমী ব্যবসায়ীদের ক্ষতি লাঘবে তাদের পরিকল্পনা কী?

ড. দেবাশীষ দাবী করেন, একটি ফেস্টিভেলকে কেন্দ্র করে যারা গরু তৈরি করেছিলো তাদের বড় অংশ কিন্তু গরু বেঁচতে পেরেছে। আমরা বলবো গরু ব্যবসায়ী বা পাইকার যারা তারাই বড় বড় গরুগুলো কেনে আর কি। তাদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি আলোচনা হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। সরকার বিবেচনা করলে হয়তো সামনে দেওয়া হবে। তবে আমরা খামারিদের অর্থনৈতিক সহায়তা করার যে  প্রক্রিয়া সেটার মধ্যে কিন্তু আমরা আছি।

এই কর্মকর্তা বলছেন, আমিষে স্বয়ংসম্পূর্ণতার এ ধারা ধরে রাখতে তৃণমূল কৃষকদের মাঝে প্রণোদনামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। তবে উৎপাদন ও বিপণন শৃঙ্খলের বড় অংশীদার, মৌসুমী ব্যবাসায়ীদের ক্ষতি পোষাতে না পারলে, খামারিরা কতটা উৎসাহিত হবে সে প্রশ্নই থেকেই যায়।