আজকের টপিক: ফোর্ড ডেট্রিকে তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের ভয় কেন?
2021-07-29 19:22:51

জুলাই ২৯: কোভিড-১৯ মহামারীর উতস বিশ্বব্যাপী অনুসন্ধানের দাবী উঠেছে। এ কাজ অবশ্যই বৈজ্ঞানিক নীতিমালা মেনে করতে হবে। চলতি বছরের মার্চে ডব্লিউএইচও এবং চীনা বিশেষজ্ঞরা যৌথভাবে উহানে ট্রেসিবিলিটি গবেষণা চালিয়েছিলেন এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন যে, ল্যাবরেটরির মাধ্যমে ভাইরাসটির ফাঁস হওয়ার ‘সম্ভাবনা’ খুবই কম। চীনের বাইরে মারাত্মক মহামারী আক্রান্ত দেশ বা অঞ্চলগুলিতে ট্রেসিবিলিটি চালানো উচিত। যুক্তরাষ্ট্র, যে কিনি কেস ও মৃত্যুর সংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বে প্রথম স্থান অর্জন করেছে, পরবর্তী ট্রেসিবিলিটি কাজের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত। বিশেষত, ফোর্ট ডেট্রিক বায়োল্যাবে তদন্তের জন্য ডাব্লুএইচও'র দাবি জানানো উচিত।

ফোর্ট ডেট্রিক বায়োল্যাব হল কোল্ড ওয়ারের যুগে একটি কুখ্যাত জৈব-রাসায়নিক অস্ত্র বেস। গত শতাব্দীর ৯০-এর দশকে মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের স্ট্রেইনের বিস্তার ঘটেছিল এবং আন্তর্জাতিক সমাজে দীর্ঘকাল এটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০১৯ সালের অগাস্টে  সিবিএসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফোর্ট ডেট্রিক যেখানে অবস্থিত সেই মেরিল্যান্ডে ‘ই-সিগারেটের সাদা ফুসফুস’ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এর খুব অল্প সময় পরে, ফোর্ট ডেট্রিকের ইউএসএএমআরআইডি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। ২০২০ সালের মার্চ মাসে মার্কিন নেটিজেনরা হোয়াইট হাউসের ওয়েবসাইটে একটি আবেদন করে। তাতে মার্কিন সরকারকে ফোর্ট ডেট্রিক পরীক্ষাগার বন্ধের প্রকৃত কারণ ঘোষণা করতে বলা হয়। তবে মার্কিন সরকার এ বিষয়ে নীরব থাকে। নিউইয়র্ক টাইমসের মতে, বন্ধ ল্যাবরেটরিতে স্টাডিতে এমন কিছু বিষাক্ত বিষয় জড়িত যেগুলি সরকার ‘জনসাধারণ, প্রাণী এবং উদ্ভিদের স্বাস্থ্য, বা প্রাণী এবং উদ্ভিদজাত পণ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে।

চীনের ‘গ্লোবাল টাইমস’ দ্বারা পরিচালিত একটি অনলাইন স্বাক্ষর অভিযানে ১৩ কোটিরও বেশি চীনা নেটিজেন একটি যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছে। তারা চায় ফোর্ট ডেট্রিক পরীক্ষাগারটি তদন্তের জন্য ডাব্লুএইচও-র সামনে খুলে দেওয়া হোক। তবে, যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে নীরব আছে।

যুক্তরাষ্ট্রে কেন এমন রোগী রয়েছে যাদের শরীরে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শুরুতে নভেল করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে? মেরিল্যান্ডের ‘ই-সিগারেট হোয়াইট লুঙ্গ’ ঘটনা এবং ফোর্ট ডেট্রিক ল্যাবরেটরি বন্ধের মধ্যে কী সম্পর্ক? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ধীরে ধীরে নিশ্চিত হওয়া কেস এবং মৃত্যুর দিক দিয়ে ‘ডাবল চ্যাম্পিয়ন’ হয়ে উঠল? আন্তর্জাতিক সমাজের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে, বধির ও বোবা হওয়ার ভান করা অসম্ভব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি স্বচ্ছ এবং দায়িত্বশীল মনোভাব গ্রহণ করা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ট্রেসিবিলিটি গবেষণা, বিশেষত ফোর্ট ডেট্রিক ল্যাবরেটরির তদন্তের জন্য আমেরিকা যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো।

আসলে যুক্তরাষ্ট্র ভাইরাসের উত্স নিয়ে শুধু রাজনীতিই করে যাচ্ছে। ২৩ জুলাই ব্রিটিশ সাহিত্যিক টম ফোর্ডি ‘রাশিয়া টুডে’ পত্রিকায় ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাভাবিক কাজ দেখতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত তাকে বলির পাঠা না-বানানো’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। এতেও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভাইরাসের উত্স অনুসন্ধান নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ তোলা হয়।

উল্লেখ্য, মানবজাতির সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই কেবল কোভিড-১৯ ভাইরাসকে পরাজয় করা সম্ভব। নিজের স্বার্থের জন্য এ নিয়ে রাজনীতি করছে এবং অন্যদের ওপর দোষাপরো করছে যুক্তরাষ্ট্র, যা গোটা মানবজাতির বৈশ্বিক মহামারী ঠেকানোর জন্য ক্ষতিকর। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)