হু’কে যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ট ডেট্রিক ল্যাবে তদন্ত চালানোর দাবি চীনা নেটিজেনদের
2021-07-28 10:49:12

২০১৯ সালের শেষের দিকে কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর আগেই যুক্তরাষ্ট্রের বহুল আলোচিত ও সমালোচিত ফোর্ট ডেট্রিক ল্যাবে সন্দেহজনক দুর্ঘটনা ঘটে। তাতে অত্যন্ত বিপজ্জনক ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া সংরক্ষিত রয়েছে। মার্কিনীরা এসব নিয় গবেষণা করে সেখানে। তার আগেও কয়েক বার সেখানে দুর্ঘটনা ঘটে, তবে, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে দুর্ঘটনার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করার বৈশ্বিক এবং অভ্যন্তরীণ দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

এবার কিছু চীনা নেটিজেন গত জুন মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (হু) একটি খোলা চিঠি পাঠিয়ে ফোর্ট ডেট্রিকে তদন্তের দাবি জানিয়েছে। নেটিজেনরা মনে করছে, চীনের উহানের ল্যাবে হু যেভাবে পরীক্ষা করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের বাদ দিয়ে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ফোর্ট ডেট্রিকে তদন্ত চালালে করোনাভাইরাসের উত্স খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।

অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র চীনা নেটিজেনদের দাবিকে ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি, উহান ল্যাব সম্পর্কে আবারও গুজব ছড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনা নেটিজেনদের অনুরোধে গ্লোবাল টাইমস অনলাইনে একটি যৌথ স্বাক্ষর অভিযান শুরু করেছে। যারা চীনা নেটিজেনদের দাবির সাথে একমত, তাদেরকে সেখানে নিজেদের নাম লেখাতে বলা হয়। এ পর্যন্ত এক কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ তাতে স্বাক্ষর করেছেন।

এদিকে, খোলা চিঠি নিয়ে চীনা নেটিজেনরা হুকে আরেকটি চিঠি পাঠায়। তাতে উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালের জুন মাসে চীনা নেটিজেনরা একটি খোলা চিঠিতে স্বাক্ষর করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফোর্ট ডেট্রিক ল্যাবে তদন্তের অনুরোধ করে। খোলা চিঠিতে বলা হয়, পরবর্তী মহামারী প্রতিরোধ করতে হলে যেসব পরীক্ষাগারগুলোতে বিপজ্জনক ভাইরাস তথা জৈবিক এবং রাসায়নিক অস্ত্র নিয়ে গবেষণা চলে, সেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গভীর নজর দেওয়া উচিত।

এর মধ্যে খোলা চিঠিতে বিশেষ করে মার্কিন সেনাবাহিনীর ফোর্ট ডেট্রিক বায়োলজিক্যাল ল্যাবরেটরির নাম উল্লেখ করা হয়। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক এবং সংক্রামক ভাইরাস রয়েছে। যেমন, ইবোলা ভাইরাস, গুটি বসন্ত ভাইরাস, সার্স ভাইরাস, এবং নতুন করোনভাইরাস।

যে কোনো ধরণের ভাইরাসের ফাঁস সমস্ত মানবজাতির জন্য মারাত্মক সর্বনাশ বয়ে আনবে। মার্কিন পরীক্ষাগারটির কুখ্যাত নিরাপত্তা রেকর্ড রয়েছে। সেখান থেকে অ্যানথ্রাক্স ব্যাকটেরিয়া একবার চুরি হয়েছে। বহু মৃত্যু এবং বিষাক্ত সংক্রমণ কেলেঙ্কারীর সাথে জড়িত এই ল্যাব। ২০১৯ সালের শরত্কালেও নিরাপত্তার অজুহাতে এটি সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে অনেকে মনে করেন, তখন সেখান থেকে কোনো ঘাতক ভাইরাস ফাঁস হয়েছিল। তার কিছু দিন পরই যেহেতু করোনাভাইরাস ছড়িয়েছিল, তাই অনেকে বিশ্বাস করেন মার্কিন সেই কুখ্যাত ল্যাব থেকেই মহামারি সৃষ্টিকারী এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। তবে, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় নিরাপত্তার অজুহাতে এর বিস্তারিত তথ্য গোপন রেখেছে।

করোনাভাইরাসের উত্স অনুসন্ধান গবেষণার সমর্থনে চীন পাশ্চাত্য দেশের ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের উহান পরিদর্শনের অনুমতি দেয় এবং তাদের জন্য এমনকি আমেরিকান গণমাধ্যমকেও উহান ল্যাব উন্মুক্ত করে দেয়। তবে, যুক্তরাষ্ট্র কেন চীনের জন্য ফোর্ট ডেট্রিক পরীক্ষাগার উন্মুক্ত করতে পারে না। ফোর্ট ডেট্রিক পরীক্ষাগারে তদন্তের চীনা জনগণের দাবিকে যুক্তরাষ্ট্র উপেক্ষা ও বিকৃত করছে  এবং একে "ষড়যন্ত্র" হিসাবে অভিহিত করছে। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র চীনের উহান ল্যাব নিয়ে মিথ্যাচার করছে।

সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি মর্মান্তিক খবর এসেছে। চীনের গবেষণাগারগুলকে বিতর্কিত করার জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে মিথ্যা গল্প তৈরির পরিকল্পনা ফাঁন হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে আমেরিকান রাজনীতিকরা নির্লজ্জ, এবং ফোর্ট ডেট্রিক পরীক্ষাগারে তদন্তের জরুরি।

এ পর্যন্ত ভয়াবহ এ মহামারী বিশ্বকে বিধ্বস্ত করেছে। কেবল কয়েক মিলিয়ন মানুষকে সংক্রমিত করেনি, এটি লক্ষ লক্ষ জীবনও কেড় নিয়েছে। চীন সর্বপ্রথম এ ভাইরাস সম্পর্কে বিশ্বকে সতর্ক করেছিল। তবে, পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে চীনের আগেই এই ভাইরাসের উপস্থিতি ছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু চীন বিরোধীরা চীনের সরলতা ও মানবতার প্রতি দায়বোধকে চীনের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। অনেক বিশ্লষক মনে করছেন, চীনের আগ থেকে ভাইরাসের উপস্থিত থাকা সত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বকে জানাতে না-পারা কোনো স্বাভাবিক ব্যর্থতা নয়, বরং ষড়যন্ত্র।  তারা এই ষড়যন্ত্র ঢাকতেই চীনকে দোষারোপ করে চলছে।

ভাইরাসের উত্স অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের পেন্ডোরার বাক্স খুলে যাওয়ার ভয় থেকেই তারা এই কাজের অগ্রগতিতে হস্তক্ষেপ করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তার ফোর্ট ডেট্রিক পরীক্ষাগারে তদন্ত করতে দিচ্ছে না। মহামারী প্রতিরোধে ব্যর্থতার দায়ে ৬ লাখেরও বেশি আমেরিকান প্রাণ হারিয়েছে। তাই বলে আমেরিকা কি এখন পুরো বিশ্বকে কবরস্থানে পরিণত করতে চায়? এমন প্রশ্ন অনেক বিশেষজ্ঞের।

চীনা নেটিজেনরা ভাইরাসের উত্স অনুসন্ধানের দ্বিতীয় পর্যায়ে নিরপেক্ষে ও স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ট ডেট্রিক পরীক্ষাগারে তদন্ত চালানোর যে দাবি জানিয়েছেন, তা আমলে নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। (শিশির/এনাম/রুবি)