চীনে কোভিড-১৯ মহামারি ঘোষণার আগেই ইতালিতে করোনাভাইরাস ছিল- গবেষণার ফলাফল
2021-07-23 18:16:17

সম্প্রতি ইতালিতে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে সংগৃহীত রক্তের নমুনা পরীক্ষায় তাতে ফের নভেল করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুরোধে দু’টি ইউরোপীয় গবেষণাগার ইতালির মিলানোর ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের নমুনা পরীক্ষা করেন। গত মঙ্গলবার ব্রিটেনের ‘ফিনান্সিয়াল টাইমস’-সহ বেশ কিছু গণমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে। এর মাধ্যমে আরেকবার বোঝা গেল যে, কোভিড-১৯ রোগটি চীনের উহানে সংক্রমণ ঘোষণার অনেক আগেই তা ইতালিতে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

 

ইতালির মিলানো থেকে সংগৃহীত রক্তের নমুনাগুলো ২০১৯ সালের। নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর প্রকোপের আগে ৯৫৯জন স্বেচ্ছাসেবক টিউমার স্ক্রিনিংয়ে অংশ নেন। তাদের রক্তের নমুনায় ইতালির গবেষকরা নভেল করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি খুঁজে পান। তারপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুরোধে ইউরোপের দুটি পরীক্ষাগার ফের এসব নমুনা পরীক্ষা করে। এতে দেখা যায় যে, নয়টি নমুনার সিরাম পরীক্ষার ফলাফলে ইমিউনোগ্লোবুলিন এম (আইজিএম) ইতিবাচক ছিল, এর মাধ্যমে তাদের নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তবে নমুনার আইজিএমের পরিমাণ সংক্রমণ নিশ্চিত করার মানদণ্ডে পৌঁছায় নি বলে গবেষকরা জানান। তারা জোর দিয়ে বলেছেন, মহামারী প্রকোপের আগে ভাইরাস এতটা সংক্রামক নাও হতে পারে। আরও সংবেদনশীল সনাক্তকরণ পদ্ধতি গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।

 

ব্রিটেনের‘ফিনান্সিয়াল টাইমস’ পত্রিকা মিলানোর ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের একজন গবেষকের বরাদ্দ দিয়ে বলেছে, পুনরায় পরীক্ষার ফলাফল সবার আগে ইতালিতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ইঙ্গিত হতে পারে। গবেষকরা মনে করেন, যদি এ বিষয়টি নিশ্চিত হয়, তাহলে ২০২০ সালে ইতালিতে রোগীর সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধির অবস্থা ব্যাখ্যা করা যায়।

ক্যান্সার গবেষক জিওভ্যানি এপোলোন ফিনানন্সিয়াল টাইমসকে বলেন, এই পরীক্ষার ফলাফলে বোঝা গেছে মহামারি সংক্রমণের আগে নেওয়া রক্তের নমুনায় কোভিড-১৯ রোগের সঙ্গে জড়িত এন্টিবডি রয়েছে।

 

আরেক বিশেষজ্ঞ বলেন- পরীক্ষার ফলাফল বলছে, পূর্বে আমরা যা জানিয়েছিলাম, তা মূলত করোনাভাইরাসের লক্ষণহীন রোগী এবং তা ইতালিতে আগে ছড়িয়ে পড়েছিল। এটা নিশ্চিত হলে ইতালিতে মহামারি বিস্ফোরণের ব্যাখ্যা দেওয়া যাবে। এটা হয়তো SARS-COV-2, অথবা একটি পূর্ববর্তী সংস্করণ, যা নীরবে চুপচাপ ছড়িয়ে পড়েছিল।"

মহামারী শুরু হলে করোনাভাইরাসের উত্স অনুসন্ধানের তত্পরতা শুরু হয়। দেশে দেশে গবেষণাকাজে নেতৃত্ব দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- হু। হু আরও বিস্তারিত পরীক্ষার জন্য ভিশমেদেরি ল্যাবরেটরিতে এবং নেদারল্যান্ডসের ইরাসমাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতালির পুরানো রক্তের নমুনাগুলো পাঠানোর আহ্বান জানায়। এ গবেষণাগার দুটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনপ্রাপ্ত। পরবর্তী গবেষণায় এসব নমুনার মধ্যে ভাইরাসের এন্টিবডি পাওয়া যায়।

 

এই পরীক্ষার ফলাফলটি বিজ্ঞান ওয়েবসাইট মেড্ররেক্সিভে প্রকাশিত হয়েছে। তবে, ইরাসমাস ইউনিভার্সিটির ভাইরলজির প্রধান মারিয়ন কুপম্যান বলেছেন, নতুন গবেষণাটি এখনও চূড়ান্ত নয়। তিনি বলেন, নতুন গবেষণায় ফলাফলগুলি "আকর্ষণীয়”। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কঠোর মানদণ্ড অনুযায়ী, নমুনাটি পূর্ববর্তী কোভিড-১৯ সংক্রমণের চূড়ান্ত প্রমাণ নয়। বৈশ্বিক মহামারির আগে ইতালিতে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিশ্চিত করতে আরও প্রমাণের দাবি জানান তিনি।

 

ইতালির অন্য এক গবেষক গাব্রিয়েল্লা সোজি বলেন, নেদারল্যান্ডের ইরাসমাস থেকে বের হওয়া ফলাফলে যে নয়টি নমুনায় কোভিড-১৯ এন্টিবডি পাওয়া গেছে তার আইজিএম লেভেল মানদণ্ডের তুলনায় কম। তিনি বলেন, হতে পারে ব্যাপক সংক্রমণের আগে এ ভাইরাসটি ‘কম আক্রমণাত্মক বা কম সংক্রামক’ ছিল। এজন্য আরও গবেষণার কথা বলেন তিনি।

এদিকে, সম্প্রতি চীনের রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য কমিশনের উপ-মহাপরিচালক চেং ই সিন জানান, গত ৩০ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে সংস্থার উদ্যোগে ভাইরাসের উত্স অনুসন্ধানের গবেষণাপত্র প্রকাশ করে। এতে করোনাভাইরাসের উত্স অনুসন্ধানে চীনের অংশের রিপোর্টে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, ভাইরাস সংক্রমণের কয়েকটি আশঙ্কা আছে। প্রথমত, মানুষ ও পশুর অভিন্ন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হওয়া। এর আশঙ্কা বেশি। দ্বিতীয়ত, কোনো হোস্টের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া; এর যথেষ্ট সুযোগ আছে। তৃতীয়ত, কোড চেইনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া। চতুর্থত, পরীক্ষাগার থেকে বের হওয়া প্রায় অসম্ভব।

মূলত, ভাইরাসের উত্স অনুসন্ধান একটি জটিল বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। এ কাজে পর্যাপ্ত গবেষণা ও সময় প্রয়োজন। তাই, গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের সমন্বিত গবেষণা ও সহযোগিতা প্রয়োজন।