একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষিকা রেহানা মরিয়ম নূর। মধ্য বয়সী এই নারী যেমন ৬ বছর বয়সী এক কন্যার মা তেমনি একজন বোন, একজন মেয়ে ৷ একজন সিঙ্গেল মা হিসেবে মেয়েকে বড় করা, বাবা, মা ও ভাইয়ের দেখাশোনা,তাদের খরচ জোগাড়- সবই করতে হয় তাকে ৷ মেডিকেল কলেজের এই শিক্ষকের প্রুচুর জেদ। এক ধূর্ত ছাত্রীর নকল করা, খুব বিচক্ষণতার সাথে ধরে, তার কঠোর শাস্তি দিয়ে নিজের দৃঢ় মনোভাবের পরিচয় দেন পর্দায়।
সন্ধ্যায় কলেজ থেকে বেরোনোর সময় শিক্ষকের দ্বারা এক কলেজের ছাত্রীর উপর নির্যাতনের অপ্রত্যাশিত ঘটনার সাক্ষী হন তিনি। এরপর তার কলেজের ছাত্রীর পক্ষ হয়ে সহকর্মী শিক্ষকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে শুরু করলেন তিনি। আর এ প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ক্রমেই যেন একরোখা হয়ে ওঠেন। একই সময়ে তার মেয়ের সাথে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের রূঢ় আচরণের বিরুদ্ধেও অবস্থায় নেন তিনি। অনড় রেহানা বিদ্যালয়ের তথাকথিত নিয়মের বাইরে গিয়ে নিজ সন্তান ও ওই ছাত্রীর জন্য ন্যায়বিচারের খোঁজ করতে থাকেন।
মেয়ের ওপর কঠোর শাসন, মায়া-মমতা, বোন-মেয়ে হিসেবে দায়িত্ব, শিক্ষক হিসেবে একদিকে শিক্ষার্থীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান অন্যদিকে শিক্ষার্থীর ওপর হওয়া অন্যায়ে তার পাশে নিজের সর্বস্ব দিয়ে দাঁড়ানো, এই চরমতম কঠিন বাস্তবতায় এক নারীর জীবনের সিনেমা রেহানা মরিয়ম নূর।
সিনেমা প্রদর্শনের শেষে দর্শক ও চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের দাঁড়িয়ে মুহুর্মুহু করতালিই বলে দেয় রেহানা মরিয়ম নূর তাদেরকে কতোটা মুগ্ধ করেছে।
২০২১ সালের ৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের আঁ সের্ত্যাঁ রেগার বিভাগে নির্বাচিত এই সিনেমাটি প্রদর্শিত হয় চলতি বছরের ৭ জুলাই ।
কান নির্বাচিত হওয়া প্রথম বাংলাদেশী এই চলচ্চিত্র নিয়ে অ্যামেরিকান ডিজিটাল ম্যাগাজিন দ্য হলিউড রিপোর্টার-এ ডেবোরা ইয়ং লিখেন, "রেহানা মরিয়ম নূর একটি দৃঢ়ভাবে বোনা মনস্তাত্ত্বিক জীবনবর্ণনা যা মানুষকে ভাবাতে বাধ্য করবে।
পরিচালক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের তীক্ষ্ণ চিত্রনাট্য, তুহিন তমিজুলের অসাধারণ সিনেমাটোগ্রাফি এবং আজমেরি হক বাধনের গভীর প্রভাব বিস্তারকারী অভিনয়ের সমন্বয়ে নির্মিত এই সিনেমাটি অসাধারণ একটি আবেগপূর্ণ গতি সঞ্চার করে।
বিশেষ করে এই সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড শব্দ ছিল বেশ প্রশংসনীয় , অনেকটা বলতে গেলে, আপনি ব্যাকগ্রাউন্ড শব্দ শুনেই সিনেমা উপভোগ করতে পারেন।