ভাইরাসের উত্স অনুসন্ধান নিয়ে হু’র সাম্প্রতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবে চীন
2021-07-23 14:04:58

চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্যকার্যালয় আয়োজিত গতকালের (বৃহস্পতিবার) এক সাংবাদিক সম্মেলনে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন, চীনা বিজ্ঞান একাডেমির উহান জাতীয় জীব নিরাপত্তা পরীক্ষাগারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা করোনাভাইরসের উত্স অনুসন্ধান নিয়ে সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরেছেন।

তাঁরা মনে করেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের উত্স অনুসন্ধানে চীনের যৌথ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও ইতিহাসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে এবং ভবিষ্যতে  বিশ্বের নানা দেশ ও জায়গায় এ বিষয় নিয়ে গবেষণা করা যাবে।

গত ৩০ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে হুর উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের উত্স অনুসন্ধান গবেষণার চীনা প্রতিবেদন।

গতকালের সাংবাদিক সম্মেলনে, চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের উপ-পরিচালক চং ই সিন আবারও জোর দিয়ে বলেন, উন্মুক্ত, স্বচ্ছ, বৈজ্ঞানিক ও সহযোগিতামূলক নীতি অনুসরণ করে চীন হুর বিশেষজ্ঞ দলের কাজকে সমর্থন এবং সমন্বয় করেছে। তা বিশেষজ্ঞ দলের চাহিদা পুরোপুরি পূরণ করেছে। তাঁরা যেখানে পরিদর্শন করতে চেয়েছেন, এবং যাদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন, তার সবই করেছেন।

তিনি বলেন, যৌথ বিশেষজ্ঞ দলের মতে ভাইরাস সাধারণত তিনটি উপায়ে সংক্রমিত হয়। প্রথমত, মানুষ ও পশু সম্ভবত একসাথে আক্রান্ত হয়। দ্বিতীয়ত, খুব সম্ভবত কোন বাহকের মাধ্যমে মানুষ আক্রান্ত হয়। তৃতীয়ত, কোল্ড চেইনের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়াও সম্ভব। তবে, পরীক্ষাগারে এই ভাইরাস তৈরি করা অসম্ভব। সেসঙ্গে পরীক্ষাগার থেকে এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া প্রায় অসম্ভব। হুর এ প্রতিবেদনটি অনেক বেশি বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে তৈরি হয়।

তিনি আরো বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত ১৫ জুলাই ভাইরাসের উত্স অনুসন্ধানের দ্বিতীয় পর্যায়ের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। তাতে চীনা পরীক্ষাগার থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার অনুমানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এমন অনুমান সাধারণ জ্ঞান এবং বৈজ্ঞানিক নিয়মের লঙ্ঘন। চীন এমন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে না।

তিনি বলেন, “হুর এমন পরিকল্পনা দেখে আমি অবাক হয়েছি। এ পরিকল্পনায় পরীক্ষাগার থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টিকে নতুন গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। তা সাধারণ জ্ঞান ও বিজ্ঞানের প্রতি অসম্মান। আমরা এমন পরিকল্পনা গ্রহণ করব না।”

চীনা বিজ্ঞান একাডেমির উহান জাতীয় জীব নিরাপত্তা পরীক্ষাগারের পরিচালক, ও উহান ভাইরাস গবেষণালয়ের গবেষক ইউয়ান চি মিং সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, সর্বোচ্চ পর্যায়ের জৈবিক নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার পরীক্ষাগার হিসেবে ২০১৮ সালে চালু হবার পর থেকে উহান ভি-৪ পরিক্ষাগার থেকে কোন ভাইরাস ছাড়িয়ে পড়া বা কোনো কর্মীর আক্রান্ত হবার ঘটনা ঘটেনি।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, উহান ভাইরাস  গবেষণালয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারগুলো ভিত্তিহীন।

তিনি বলেন, কোন কোন খবরে বলা হয়, উহান ভাইরাস গবেষণালয়ের তিনজন কর্মী ২০১৯ সালে নভেম্বর মাসে হাসপাতালে গিয়ে চিকিত্সা গ্রহণ করেছেন এবং তাদের মধ্যে কোভিড-১৯-এর লক্ষণ বিদ্যমান ছিল। এমন সংবাদ পুরোপুরি মিথ্যাচার। প্রকৃত সত্য জানতে হলে এ তিনজনের নাম আমাদেরকে জানাতে হবে। আমরা এমন প্রস্তাবও দিয়েছি। তবে, এ পর্যন্ত আমরা কোন জবাব পাই নি।”

“আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত উহান ভাইরাস গবেষণালয়ে কোন করোনাভাইরাস সংরক্ষণ হয়নি এবং এ নিয়ে কোন  গবেষণাও সেখানে হয়নি। উহান ভাইরাস গবেষণালয় কখনও করোনাভাইরাসের নকশা তৈরি করেনি এবং ছড়িয়ে দেয়নি। এ পর্যন্ত উহান ভাইরাস গবেষণালয়ের কোন কর্মী ও শিক্ষার্থী কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়নি,” তিনি যোগ করেন।

চীন-হু করোনাভাইরাসের উত্স অনুসন্ধান যৌথ গবেষণা দলের চীনা পক্ষের প্রধান লিয়াং ওয়ান নিয়ান আগামিতে ভাইরাসের উত্স অনুসন্ধান গবেষণা সম্পর্কে বলেন, নানা দেশের বিজ্ঞানীগণ ভাইরাসের উত্স নিয়ে ক্রমাগত গবেষণা করে চলছেন এবং নানা গবেষণা ফলাফল প্রকাশ করছেন। এই ভাইরাস জানা সময়ের আগে নানা জায়গায় হাজির হয়েছে। উহান প্রথম দৃশ্য নয়। আর ভাইরাসের সংক্রমণ একটি জটিল প্রক্রিয়া। এতে মানুষ, পশু-পাখি, ও পরিবেশের ভূমিকা রয়েছে। (শিশির/এনাম/রুবি)