উন্নত অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, এবং সুষম ও সচ্ছল সমাজ গড়ে তোলা হল চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) প্রতিষ্ঠার শততম বার্ষিকীর মূল সংকল্প। এটি চীনের দুই শতকের লক্ষ্যের অন্যতম। চলতি বছর পালিত হচ্ছে সিপিসি প্রতিষ্ঠার শততম বার্ষিকী। চীন সময় মতো এসব লক্ষ্য পূরণে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে।
এককালের দরিদ্র ও দুর্বল দেশ থেকে বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন। চীনের এই অর্জন সারা বিশ্বের এক বিস্ময়। প্রথম শতকের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করে দ্বিতীয় শতকের উদ্দেশ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি।
ক্যাপিটাল আয়রন এন্ড স্টীল কোম্পানিকে আমরা সুও কাং বলে ডাকি। ১৯৪৮ সালে এ কোম্পানির উত্পাদন পরিমাণ ছিল এক লাখ টনের চেয়ে কম। তার মানে চীনের প্রতিটি পরিবারের জন্য একটি ইস্পাতের ছুরি তৈরির জন্য যথেষ্ট পরিমাণ ইস্পাত তখন ছিল না। পাশাপাশি, কোম্পানিটি কেবল নিম্নমানের বিল্ডিং উপকরণ নির্মাণ করতে পারত। আজকাল সুও কাং কোম্পানি হাজার হাজার বৈজ্ঞানিক ফলাফল অর্জন করেছে। চীন এমনকি সারা বিশ্বে নানা রের্কড সৃষ্টি করেছে। ঘরের সরঞ্জাম এবং গাড়ির ইস্পাত প্লেটসহ উচ্চমানের উপকরণ নির্মাণ করছে কোম্পানিটি।
যখন গণতান্ত্রিক চীন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন স্ক্রু এবং ম্যাচও বিদেশ থেকে আমদানি করতে হত। তত্কালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, চীনের ইতিহাসে কোন সরকারই সেদেশের জনগণের খাদ্য সমস্যা সমাধান করতে পারেনি, তাই সিপিসিও পারবে না।
কখনো কেউ ভাবেনি, চীন বিশ্বের একমাত্র দেশ হিসেবে শিল্পের সব খাতের উন্নয়ন করবে। চীন প্রায় সব ধরনের শিল্প নির্মাণ করতে পারবে। গাড়ি ও কম্পিউপারসহ ২২০টি পণ্যের উত্পাদন পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বের প্রথম স্থান ধরে রাখবে। এটিই এখন চীনের বাস্তবতা। তাই বর্তমান শতককে অনেকে চীনা শতাব্দী বলে অভিহিত করছে।
১৯৫২ সালে চীনের জিডিপি ছিল ৬৭৯০ কোটি ইউয়ান, যা ১৯৮৬ সালে এক ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে। চীনের জিডিপি ২০০০ সালে ১০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে, যা ২০১০ সালে ৪০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান নিয়ে জাপানকে ছাড়িয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক সত্তা হয়েছে। আর ২০২০ সালে চীনের জিডিপি ১০০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িছে। নয়া চীন প্রতিষ্ঠার ৭০ বছরে দেশটির অর্থনীতি মোট ১৮৯ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি আসলে অনেকের কল্পনারও বাইরে।
১৯৪৯ সালে চীনের খাদ্যশস্য উত্পাদন পরিমাণ ছিল ১১৩৪০ কোটি কেজি। আর গত ছয় বছর ধরে চীনের খাদ্য উত্পাদন ৬৫০০ ট্রিলিয়ন কেজির বেশি। বিশ্বের নয় শতাংশ চাষের ভূমি দিয়ে ২০ শতাংশের লোকের খাবার সরবরাহ করছে চীন। আর এসব অর্জনন মার্কিন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘কে চীনকে খাওয়াবে?’ প্রশ্নের সবচেয়ে ভাল একটি উত্তর।
বিশ্বে দ্বিতীয় এমন কোনো দেশ নেই, যেটি চীনের মতো এত অল্প সময়ে দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের অনুপাত ১৯৭৮ সালের ১.৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২০ সালে ১৭ শতাংশ হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের অবদান ৩০ শতাংশের নিচে নামছে না। কোভিড-১৯ মহামারি সত্ত্বেও চীন বিশ্বের একমাত্র দেশ হিসেবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
গত জুন মাসে দক্ষিণ চীন সাগরের তীরে হাইনান অবাধ বাণিজ্য বন্দর চালুর প্রথম বার্ষিকী পালিত হয়। এর কিছু দিন আগে সেখানে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম চীনা আন্তর্জাতিক ভোগ্য পণ্য প্রদর্শনী। তা ছাড়া, কুয়াং চৌ বিনিময় মেলা, পরিষেবা মেলা, রপ্তানি মেলা, ভোগ্য মেলা, এক একটি আন্তর্জাতিক মেলার মাধ্যমে সুযোগ ভাগাভাগির উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়।
সিলিন্ডার থেকে হাইড্রলিক সিস্টেমের সরবরাহকে পরিণত হয় চিয়াং সু হেং লি কোম্পানি। বর্ম মেশিনের সিলিন্ডার জগতের বৃহত্ শক্তিবর্গের একচেটিয়া আধিপত্য খর্ব করেছে কোম্পানিটি।
কোম্পানির সিএফও বলেন, “গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নে বিনিয়োগ করা আমাদের সফলতার মূল কারণ। সরকারও আমাদেরকে অনেক সহায়তা দেয়। চলতি বছরে গবেষণা ক্ষেত্রে আমাদের সব বিনিয়োগের শুল্ক মওকুফ করেছে সরকার।”
ত্রয়োদশ পাঁচসালা পরিকল্পনা চলাকালে চীনের গবেষণা বিনিয়োগ সূচক ২.০৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২.৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মৌলিক গবেষণার তহবিল এক গুণ বৃদ্ধিপায়। নবায়ন দক্ষতা র্যাঙ্কিংয়ে চীনের স্থান ২০১৫ সালের ২৯তম থেকে ২০২০ সালের ১৪তমে পৌঁছায়। বিগ ড্যাটা, ও ক্লাউড কম্পিউটিংসহ নানা ক্ষেত্রে চীনের ভবিষ্যত সম্ভাবনা অনেক।
প্রথম এক’শ বছরে চীন শূন্য থেকে বড় সফলতা অর্জন করেছে। আর দ্বিতীয় এক’শ বছরে চীন আরও বিশাল সফলতা অর্জন করবে। আরও সামনে এগিয়ে যেতে দীর্ঘ এ যাত্রায় পরিশ্রম ও সংগ্রামের বিকল্প নেই। একশ’ চল্লিশ কোটি চীনা মানুষ উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতি আশাবাদী। ২০৪৯ সালে তারা দ্বিতীয় এক’শ বছর উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারব বলে বিশ্বাস করে। (শিশির/এনাম/রুবি)