আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার ও দেশটির অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
2021-07-17 17:56:26

আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান ছাড়তে যাচ্ছে সব মার্কিন ও ন্যাটো সেনা। এই সুযোগে বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে দেশটির তালিবান গোষ্ঠী। ইতোমধ্যে তালিবান ও আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘাতের কিছু খবর পাওয়া গেছে। যে উদ্দেশ্যে মার্কিন সেনারা আফগানিস্তানে অভিযান চালায় তা শেষ না করেই দেশটি ছেড়ে যাওয়াতে কার লাভ হলো- তা বিশ্লেষণের দাবি রাখে। ইতোমধ্যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ বলেছেন- প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এ পদক্ষেপ সঠিক নয়। এদিকে, দুই দশকের যুদ্ধে বিভিন্ন পক্ষের প্রাণহানি, ব্যয় ও ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ও ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়।

শ্রোতাবন্ধুরা, এসব বিষয়ে বিস্তারিত থাকছে আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

 

সম্প্রতি জার্মান সংবাদমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকার দেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ। তিনি বলেন, অ্যামেরিকান ও ন্যাটো সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের নারীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি চিন্তিত। বাইডেন প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে ভুল হিসেবে অভিহিত করেছেন সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। দুই দশক পর সেখান থেকে সব সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে ভুল হিসেবে অভিহিত করে বুশ বলেন, ‘‘আফগান নারী ও মেয়েরা যে অবর্ণনীয় ক্ষতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে তা নিয়ে আমি ভীত।’’

এরই মধ্যে দেশটির রাজনৈতিক ও সামরিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব আফগান সরকারের হাতে ন্যাস্ত করেছে মার্কিন সেনারা। অন্যদিকে আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে দেশটির উল্লেখযোগ্য একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে তালিবানের হাতে। এ অবস্থায় আফগানিস্তানে পুনরায় হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন জো বাইডেন। ‘নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতদের ও ওসামা বিন লাদেনের বিচারের মাধ্যমে’ যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি। বাইডেন দাবি করেন,  ‘আফগানিস্তানকে গড়ার জন্য’ যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে যায়নি। নিজেদের ভবিষ্যৎ ও দেশ কীভাবে চলবে তা নির্ধারণের দায়িত্ব আফগান জনগণের।

 

কিন্তু ২০ বছরের দীর্ঘ যুদ্ধ শেষে আফগানিস্তানকে কেমন রেখে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো? এ প্রশ্ন সবার মুখে। স্থানীয় এক সাংবাদিক বলেছেন- ‘‘বাস্তবতা হচ্ছে তালিবান এখনও সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য হুমকি, এখনও আমরা যুদ্ধের মধ্যে আছি এবং এখনও আমরা জিজ্ঞাসা করছি নারী, শিশুদের কী হবে। ২০ বছর পরে এসেও এমন পরিস্থিতিই বিরাজ করছে।’

প্রায় ২০ বছরে কোন পক্ষের কতজন প্রাণ হারিয়েছেন, খরচ কত হয়েছে তার খবর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ও ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণায় দেখা গেছে ২০০১ সালে আফগান যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মারা গেছেন এক লাখ ৭২ হাজার ৩৯০জন।

যুদ্ধে মারা যাওয়া মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যের সংখ্যা দুই হাজার ৪৪৮জন। এছাড়া মার্কিন কন্ট্রাক্টর মারা গেছেন তিন হাজার ৮৪৬জন। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আফগানিস্তানে যুদ্ধ করা ন্যাটো ও অন্যান্য দেশের এক হাজার ১৪৪জন ব্যক্তিও মারা গেছেন।

যুদ্ধে আফগানিস্তানের সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর প্রায় ৬৬ হাজার সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। সাধারণ নাগরিক মারা গেছেন ৪৭ হাজার ২৪৫জন। তালিবান ও অন্যান্য বিরোধী যোদ্ধা মারা গেছেন ৫১ হাজার ১৯১জন। আফগান যুদ্ধে ৪৪৪জন ত্রাণকর্মী ও ৭২জন সাংবাদিকও মারা গেছেন।

২০২০ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান ও ইরাকে যুদ্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র আনুমানিক প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।

যুদ্ধে খরচের জন্য দুই ট্রিলিয়ন ডলার জোগাড় করতে যে ঋণ নেয়া হয়েছে তার সুদ আনুমানিক ৯২৫ বিলিয়ন ডলার। ২০৩০ সালে সুদের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে দুই ট্রিলিয়ন ডলার।

যুদ্ধ শেষ হলেও খরচ শেষ হচ্ছে না। আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে অংশ নেওয়া প্রায় ৪০ লাখ সেনাকে আজীবন দেখভাল করবে মার্কিন প্রশাসন। এতে প্রায় ১.৬ থেকে ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে বলে জানিয়েছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক।