গত ১৩ জুলাই তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ান এবং চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এক ফোনালাপে মিলিত হন।
এসময় প্রেসিডেন্ট সি বলেন, চীন ও তুরস্কের মধ্যে বাস্তব সহযোগিতা ফলপ্রসূ হচ্ছে। বিশেষ করে, কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় দু’দেশের ঘনিষ্ঠতা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার সুপ্তশক্তির প্রতিফলন। দু’দেশের সম্পর্ককে নতুন পর্যায়ে উন্নীত করতে চায় বেইজিং।
সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, দু’দেশের উচিত পারস্পরিক আস্থা আরও বাড়াতে সচেষ্ট থাকা। তুরস্কের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও ভূভাগীয় অখণ্ডতার পক্ষে থাকার পাশাপাশি, সন্ত্রাসদমন ও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন খাতে দেশটির সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করতে ইচ্ছুক বেইজিং। দু’দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার মান উন্নত হবার সাথে সাথে, কোভিড-১৯ টিকা খাতে সহযোগিতাও উন্নত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
একই দিন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সন্ধ্যায় বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী মিয়া মাট্লের সঙ্গেও টেলিফোনে কথা বলেন।
এসময় প্রেসিডেন্ট সি বলেন, বার্বাডোস পূর্ব ক্যারিবীয় অঞ্চলে চীনের ভাল বন্ধু ও সহযোগী। কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর বিগত ৪৪ বছর ধরে দু’দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের আদান-প্রদান অব্যাহত রয়েছে এবং দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাও ফলপ্রসূ হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারী আঘাত হানার পরও দু’দেশ একসঙ্গে কাজ করেছে। বর্তমানে মহামারী বিশ্বব্যাপী নতুন করে ছড়াচ্ছে। বার্বাডোসকে এই মহামারী মোকাবিলায় সাহায্য করতে চীন টিকা ও চিকিত্সা-সরঞ্জাম দিয়ে যাবে।
প্রেসিডেন্ট সি জোর দিয়ে বলেন, চীন ও বার্বাডোসের সরকার জনগণকে কেন্দ্র করে কাজ করে থাকে। চীন বার্বাডোসের সাথে রাষ্ট্র-পরিচালনা ও প্রশাসনের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে, অবকাঠামো ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহারিক সহযোগিতা প্রসারিত করতে, এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন পর্যায়ে উন্নীত করতে আগ্রহী।
এ দিন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সন্ধ্যায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেন।
এসময় প্রেসিডেন্ট সি বলেন, চীন ও ইউক্রেনের কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর বিগত ১০ বছরে দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল উন্নয়নের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। দু’দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতায় ইতিবাচক ফলাফলও অর্জিত হয়েছে। গত বছর থেকে, কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় দু’পক্ষ হাতে হাত রেখে কাজ করে আসছে এবং টিকাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা চালিয়েছে। এতে দু’দেশের জনগণের মৈত্রীর সম্পর্ক গভীরতর হয়েছে। ইউক্রেনের সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী মৈত্রী লালন করতে, পারস্পরিক সমঝোতা গভীরতর করতে, এবং বাস্তব সহযোগিতা জোরদার করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক চীন।
প্রেসিডেন্ট সি আরও বলেন, বর্তমানে কোভিড-১৯ মহামারী নতুন করে ছড়িয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ইউক্রেনের সঙ্গে টিকা ও চীনা ওষুধসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের সহযোগিতা অব্যাহতভাবে জোরদার করতে চীন ইচ্ছুক।
ওই দিন চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) প্রতিষ্ঠার শতবর্ষের উদযাপনী অনুষ্ঠানের এক পর্যালোচনা সভা বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং মহাগণভবনে সেই উদযাপনী অনুষ্ঠানে জড়িত প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন। তখন তিনি তাদের কাজের জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এ সময় সি চিন পিং বলেন, জাকঁজমকপূর্ণভাবে সিপিসি প্রতিষ্ঠার ১০০তম বার্ষিকী উদযাপন করা হচ্ছে পার্টি ও দেশের রাজনৈতিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।
তিনি বলেন, সিপিসি’র দৃঢ় নেতৃত্ব ও বিভিন্ন মহলের যৌথ চেষ্টায় উদযাপনী অনুষ্ঠান সফল হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা কার্যকর কার্যক্রম গ্রহণ করে উদযাপনী অনুষ্ঠানকে পার্টির সম্মীলনী এবং জনগণের দিবসে পরিণত করেছে।
সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, উদযাপনী অনুষ্ঠানের মূল কাজ শেষ হয়েছে। তবে, এর সাফল্যকে কাজে লাগাতে আরও অনেক কিছু করার রয়েছে।
তিনি বলেন, এ অনুষ্ঠানের উদ্যমী শক্তিকে সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ নির্মাণে কাজে লাগাতে হবে। একে চীনা জাতির পুনরুত্থানের মহাশক্তিতে পরিণত করতে হবে।
তিনি সিপিসি প্রতিষ্ঠার শত বছরের ইতিহাস থেকে অভিজ্ঞতা অর্জনেরও পরামর্শ দেন।
২. সিনচিয়াংয়ের মানবাধিকার...
চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদ সম্প্রতি সিনচিয়াংয়ে সবার সমান অধিকারের নিশ্চয়তা-বিষয়ক এক শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে।
তাতে বলা হয়, সিনচিয়াংয়ের সবজনগণের জন্য সার্বিকভাবে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত ও জোরদার হয়েছে। সবার সুস্থতা নিশ্চিতের মান অনেক উন্নত হয়েছে। সংখ্যালঘু জাতির জন্মদানের অধিকার কার্যকরভাবে রক্ষিত হচ্ছে। সিনচিয়াংয়ে অব্যাহতভাবে সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। সম্পত্তি বীমা, স্বাস্থ্য বীমা, শিল্প বীমা, বেকার বীমা, ও জীবনের নিরাপত্তা বীমাসহ অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা ও ত্রাণ ব্যবস্থার ক্রমাগত উন্নয়ন হচ্ছে।
তাতে আরো বলা হয়, সিনচিয়াংয়ে সব সময় বিভিন্ন জাতির জনগণের জীবনের নিরাপত্তা ও শরীরের সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কার্যকরভাবে মহামারী প্রতিরোধ করে আসছে সেখানকার প্রশাসন। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে আক্রান্তদের চিকিতসা দেওয়া হয়। বিনামূল্যে সবার করোনা টেস্ট ও সবাইকে টিকা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি, বিভিন্ন জাতির স্বল্প আয়ের মানুষদের নগদ অর্থ সহায়তা ব্যবস্থাও রয়েছে সেখানে।
শ্বেতপত্রে বলা হয়, সিনচিয়াংয়ে নাগরিকদের রাজনৈতিক অধিকার সুরক্ষিত রয়েছে। একটি জাতির লোকসংখ্যা কম-বেশি, যাই হোক না কেন, সবার মর্যাদা সমান। অধিকারের বেলায় কাউকে তার জাতিগত ইতাহাস, আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় কোনো অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়না। জাতি ও ধর্ম নির্বিশেষে সবাই দেশ ও আঞ্চলিক বিষয়ে অংশগ্রহণ করতে পারে। তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত সেখানে গণতান্ত্রিক অধিকারের নিশ্চয়তা রয়েছে।
সিনচিয়াংয়ে চালু রয়েছে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন। সবাই নির্বাচন ও নির্বাচিত হবার অধিকার ভোগ করেন। রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের মাধ্যমে নানা জাতি ও মহলের ব্যক্তিরা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। নানা জাতির মানুষের যৌথ আলোচনা ও গণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধান ও অংশগ্রহণের অধিকার সুরক্ষিত।
শ্বেতপত্রে বলা হয়, সিনচিয়াংয়ে আইন অনুযায়ী তৃণমূল স্বায়ত্তশাসন কার্যকর রয়েছে। সেখানকার নানা শহরে ও জেলায় প্রতিষ্ঠিত হয় নাগরিক ও গ্রামীণ বাসিন্দার সম্মেলন। তৃণমূল স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার স্ব-ব্যবস্থাপনা, স্ব-শিক্ষা, স্ব-পরিষেবা, ও স্ব- তত্ত্বাবধানের মান দিন দিন উন্নত হচ্ছে।