প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ও চীনের খাদ্য নিরাপত্তা
2021-07-14 15:40:22

মানুষ একটি দেশের ভিত্তি, আর খাদ্যশস্য মানুষের প্রাণের সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং খাদ্য নিরাপত্তার ওপর সবসময় বেশ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন সময় নানা জায়গা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি দরিদ্র পরিবারগুলোকে তাঁদের রান্না দেখতে চান। এর মাধ্যমে তিনি দেখতে চান যে তারা আসলে কী কী খায়। তিনি চাষের জমিতেও বার বার চলে যান। ফসল কেমন হল? কৃষকের চিন্তা কী? এসব বিষয় তিনি সবসময় জানতে চান।

পঞ্চাশ বছর আগে যুবক সি চিন পিং শ্যানসি প্রদেশে লিয়াং চিয়া হ্য নামে একটি গ্রামে কাজ করেছিলন। স্থানীয় লোকজন তখন পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে পেতো না। বসন্তকালে যখন চাষের সময় শুরু হতো, তখন কেবল পরিবারের তরুণ পুরুষরা খেতে পারতো। কারণ তাদেরকে কাজ করতে হতো। বাকি নারী, শিশু ও প্রবীণরা তখন খাবার ভিক্ষা করতেন।

গত বছর দুই অধিবেশন চলাকালে সি চিন পিং সিপিপিসিসি প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলার সময় বলেন, “আমিও ছয়-সাত বছরের মতো কৃষক ছিলাম। আর তখন যথেষ্ট পরিমাণে খেতে পারতাম না। আমি স্থানীয়দেরকে জিজ্ঞেস করেছি, আপনারা কেমন জীবন চান? আপনাদের লক্ষ্য কী? তখন তাঁরা আমাকে তিনটি উত্তর দেন। প্রথমত, আর ভিক্ষা করতে চান না, এবং পেট ভরে খেতে চান। দ্বিতীয়ত, চীনা ভুট্টা ও শস্য ইচ্ছা মত খেতে চান। তৃতীয়ত, মাংস, ময়দা এবং ভাত খেতে চান। আসলে মাংস ও ভাত খাওয়া  আজকাল খুব সহজ হলেও তখন তা সবাই খেতে পারতো না। তাই এসব অনেকের স্বপ্ন ছিল।”

সি চিন পিং যখন লিয়াং চিয়া হ্য গ্রামে ছিলেন, তখন তিনি চাষের জমি বাড়াতে স্থানীয়দের সাথে পলি বাঁধ নির্মাণ করেছিলেন। শীত্কালে বরফ জলে খালি পায়ে দাঁড়িয়ে কাজ করেছিলেন তিনি। ওই সময় তিনি স্থানীয়দের সাথে ভুট্টার খাবার বিনিময় করেছিলেন। পরে তিনি আবিষ্কার করেছন, ওরা তাঁর ভুট্টা খায়নি, বরং পরিবারের যুবক ও শিশুদেরকে খায়িয়েছেন। এ ব্যাপারটি তাঁর হৃদয় স্পর্শ করেছিল।

গত বছর ২৩ জুলাই, তিনি চি লিন প্রদেশের সিপিং শহরে জাতীয় সবুজ কাঁচামাল (ভুট্রা) স্ট্যান্ডার্ডাইজড উত্পাদন কেন্দ্র পরিদশন করেন। সফরের প্রথম কাজ হিসেবে তিনি খাদ্য উত্পাদনের খোঁজ খবর নেন।

সি চিন পিং বলেন, “দুই বছর আগে আমি হ্য লং চিয়াং প্রদেশে ধান চাষের খোঁজ খবর নিয়েছি এবং এবার আমি ভুট্রা দেখতে এসেছি। চলতি বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেক বেশি। আমি খাদ্য চাষের অবস্থার ওপর গুরুত্ব দেই। কারণ খাদ্য সবকিছুর ভিত্তি।”

২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারিতে বিশ্ব খাদ্য বাজার বেশ আঘাত পায় এবং এমন প্রেক্ষাপটে খাদ্য উত্পাদনে কড়া নজর রাখেন প্রেসিডেন্ট সি। চীনে টানা ১৭ বছরের মতো ফসলের বাম্পার ফলন হয়। তবে, চীন চিন্তা মুক্ত নয়।

সি চিন পিং বলেন, সার্বিক দিক থেকে দেখলে চীনের খাদ্য নিরাপত্তা অস্থিতিশীল এবং পরিস্থিতি কঠোর। চীনে যে কোন সময় সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি মাথায় রেখেই সবাইকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

২০১৪ সালের মে মাসে, তিনি হ্য নান প্রদেশের একটি গম ক্ষেত পরিদর্শন করেন। তখন তিনি  গমের অবস্থা দেখে খুব খুশি হন।

প্রেসিডেন্ট সি বলেন, “আমিও একজন কৃষক ছিলাম, গমের এত ভাল ফলন দেখে আমি আপনাদের মতোই খুশি হলাম। চলতি বছরে সবাই রুটি খেতে পারবে।”

২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে আন হুই প্রদেশ পরিদর্শনকালে তিনি স্থানীয় চাষী ও কৃষি প্রযুক্তিকর্মীদের কাছে ক্ষেত ব্যবস্থাপনার বিষয়ে খোঁজখবর নেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি হাতে চাল রেখে বলেন, চীনের খাদ্য, চীনের নিশ্চয়তা। কয়েক দশক ধরে সি চিন পিং খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করে আসছেন। তিনি বলেন, “খাবার সমস্যা সমাধান হলেও আমরা আগের কঠিন সময় ভুলে যেতে পারব না।”

‘খাবার সাশ্রয়’ প্রেসিডেন্ট সির একটি ধারণা। তিনি আসলে যা বলেন, তা বাস্তেব করে দেখান। হ্য পেই প্রদেশে যখন তিনি কাজ করতেন, তখন প্রতিদিন ক্যান্টিনে সবার সাথে খাবার খেতেন। মাঝেমাঝে কাজের কারণে দেরি করে ক্যান্টিনে আসতেন, তখন সব খাবার বিক্রি হয়ে যেত। তখন তিনি কিছু ভাজা রুটি ও টুফু খেতেন। গ্রাম পরিদর্শন করার সময় তিনি স্থানীয় সরকারের ক্যান্টিনে খেতে যান এবং নিজের পয়সা খরচ করেন।

তিনি সবসময় বলেন, চীনের সংস্কৃতিতে খাদ্য সাশ্রয়ের নানান কাহিনী রয়েছে। এসব শিশুদের শেখানো উচিত।  এক ফোঁটা জল যেমন সূর্যের রশ্মিকে প্রতিবিম্বিত করতে পারে, তেমনি  একটি ভাত অনেক সত্যকে প্রতিফলিত করতে পারে। চীনের খাদ্য, ও চীনা মানুষের খাবার প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের মনে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তিনি নিজে ক্ষুধার্ত থেকেছেন, ক্ষেতের কাজ করেছেন।  তাই তিনি বোঝেন প্রতিটি খাদ্য কত মূল্যবান। তাঁর এসব মূল্যবান কষ্টার্জিত সময় তাঁকে চীনাদের সুখী জীবন নিশ্চিতকরণে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেছে। (শিশির/এনাম/রুবি)