‘চীন-রাশিয়া বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চুক্তি’ স্বাক্ষরের ২০ বছর প্রসঙ্গে
2021-07-12 14:36:40

‘চীন-রাশিয়া বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চুক্তি’ স্বাক্ষরের ২০ বছর প্রসঙ্গে_fororder_372

জুলাই ১২: চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গতকাল (রোববার) বেইজিংয়ে আয়োজিত ‘চীন-রাশিয়া বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চুক্তি’ স্বাক্ষরের ২০তম বার্ষিকীর উদ্‌যাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং ভাষণ দেন।

ওয়াং ই তাঁর ভাষণে বলেন, চীন সরকার, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে যারা অবদান রেখেছেন, তাদের  আন্তরিক ধন্যবাদ জানায়। তিনি বলেন, ২০ বছর আগে দু’দেশ সার্বিকভাবে ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা ও বিশ্বের সাধারণ প্রবণতা উপলব্ধি করার ভিত্তিতে, ‘চীন-রাশিয়া বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চুক্তি’ স্বাক্ষর করেছিল। এটি দু’দেশের স্থায়ী মৈত্রী ও পারস্পরিক সহযোগিতার মূল ভিত্তি। এর ভিত্তিতেই দু’দেশ আন্তর্জাতিক শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও সহযোগিতা ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। এর আগে দু’দেশের প্রেসিডেন্ট যৌথভাবে চুক্তিটির মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণাও দিয়েছেন।

‘চীন-রাশিয়া বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চুক্তি’ স্বাক্ষরের ২০ বছর প্রসঙ্গে_fororder_373

ওয়াং ই জোর দিয়ে বলেন, গত ২০ বছরে চুক্তিটির আওতায় দু’দেশের সম্পর্ক জটিল আন্তর্জাতিক পরিবেশেও উন্নত হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারীতে আক্রান্ত, বিশ্ব এক অশান্ত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, মানবজাতি বিভিন্ন যুদ্ধ-সংঘর্ষে জর্জরিত। বর্তমানে শীতলযুদ্ধের মানসিকতা, আধিপত্যবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতি মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। তবে, আন্তর্জাতিক অবস্থার যত পরিবর্তনই ঘটুক না কেন, চীন ও রাশিয়ার মৈত্রীর সম্পর্কের তার কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। দু’দেশ বরাবরই পরস্পরকে সমর্থন করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও করতে থাকবে। দু’দেশ একসাথে শান্তি ও সুবিচার সুরক্ষায় কাজ করে যাবে।

ওয়াং ই বলেন, দু’দেশের উচিত পারস্পরিক রাজনৈতিক আস্থা জোরদারে সচেষ্ট হওয়া এবং পারস্পরিক সমর্থন বজায় রাখা। দু’দেশের নেতাদের নেতৃত্বে অব্যাহতভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের যোগাযোগ বাড়াতে হবে, দু’দেশের কেন্দ্রীয় স্বার্থ সুরক্ষা করতে হবে; যৌথভাবে দু’দেশের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে।

‘চীন-রাশিয়া বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চুক্তি’ স্বাক্ষরের ২০ বছর প্রসঙ্গে_fororder_374

তিনি বলেন, দু’দেশকে আরেক ধাপে বাস্তব সহযোগিতা জোরদার করতে হবে; দু’দেশের উন্নয়নকৌশলের সংযুক্তি ত্বরান্বিত করতে হবে; ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগ ও ইউরেশিয়া অর্থনৈতিক জোটের সংযুক্তি ত্বরান্বিত করতে হবে; নিম্ন কার্বন জ্বালানিসম্পদ, ডিজিটাল অর্থনীতি, কৃষি ও টিকা খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করতে হবে; দু’দেশের অর্থনীতি উন্নয়নের সুপ্তশক্তি ও কার্যকারিতা বাড়াতে হবে।

এ ছাড়াও দু’দেশের সাংস্কৃতিক সহযোগিতা জোরদার করতে হবে; দু’দেশের জনগণের মৈত্রী জোরদার করতে হবে; বেসরকারি যোগাযোগ এবং শিক্ষা ও ক্রীড়া ক্ষেত্রের সহযোগিতার মান উন্নত করতে হবে।  

‘চীন-রাশিয়া বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চুক্তি’ স্বাক্ষরের ২০ বছর প্রসঙ্গে_fororder_375

ওয়াং ই আরও বলেন, দু’দেশের কৌশলগত সহযোগিতা জোরদার করতে হবে এবং বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা সুরক্ষা করতে হবে। বহুপক্ষবাদ সমর্থন এবং আধিপত্যবাদ ও ক্ষমতার রাজনীতির বিরোধিতা করতে হবে। দু’দেশের একসাথে জাতিসংঘকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক আইনভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা সুরক্ষা করে বিশ্বের বহু-মেরুকরণ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতন্ত্রায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে। দু’দেশের আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং সন্ত্রাসদমন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সহযোগিতা ও সমঝোতা জোরদার করতে হবে।

‘চীন-রাশিয়া বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চুক্তি’ স্বাক্ষরের ২০ বছর প্রসঙ্গে_fororder_376

চীনে রুশ রাষ্ট্রদূত মিস্টার ডেনিসভ অনুষ্ঠানে পুনরায় চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) প্রতিষ্ঠার শততম বার্ষিকীর অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, সিপিসি না-হলে নয়াচীন প্রতিষ্ঠিত হতো না। চীনে সার্বিকভাবে স্বচ্ছল সমাজ গড়ে তোলা এবং সম্পূর্ণরূপে হতদারিদ্র্য নির্মূল করা হলো মানবজাতির ঐতিহাসিক সাফল্য। ‘রাশিয়া-চীন বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চুক্তি’ দু’দেশের সম্পর্কের স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য দৃঢ় ভিত্তি দিয়েছে। রাশিয়া চীনের সঙ্গে নতুন নতুন লক্ষ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করতে ইচ্ছুক। (ছাই/আলিম/ওয়াং হাইমান)