আন্টি ওয়াং লান হুয়া’র বয়স ৭১ বছর; তাঁর মুখে অনেক ভাঁজ পড়েছে।
লাল রং-এর পোশাক পরলে তাঁকে যেন শক্তিশালী মনে হয়। লোকজন তাঁকে আত্মীয় হিসেবে দেখে, ছোট-বড় সব কাজে তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করতে চায়। দরিদ্র মানুষ তাঁকে উষ্ণহৃদয়ের নারী হিসেবে দেখে, স্বেচ্ছাসেবকরা তাঁকে নেতা হিসেবে দেখে। অনেক মানুষ বছরের পর বছর ধরে তাঁর নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করে আসছে।
যখন ওয়াং লান হুয়া নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইয়ু সি কমিউনিটির পরিচালক ছিলেন, তখন তিনি স্থানীয় মানুষের সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিলেন। তিনি প্রত্যেক পরিবারের ছোট বড় সব কাজের কথা মনে রাখেন। ২০০৪ সালে তিনি অবসর নেন, তখন তিনি ভালোভাবে পরিবারের সঙ্গে থাকার কথা ভেবেছিলেন। তবে, সময় পেলেই তিনি মানুষের সেবায় ছুটে যেতেন। জনসেবা না-করলে তিনি যেন শূন্যতা অনুভব করেন।
স্থানীয়রাও তাঁকে খুব বিশ্বাস করে। তিনি অবসর নিলেও কেউ তাঁকে ভোলে নি। যে কোনো সমস্যা হলে তারা নির্দ্বিধায় আন্টি ওয়াংকে তা জানায়। ওয়াং বলেন, তিনি সবসময় চিন্তা করেন, অবসর হলেও চেতনা অবসর নিতে পারে না। অবসর নিলেও মানুষের সেবা করতে হয়।
২০০৫ সালে আন্টি ওয়াং অন্য ছয়জন অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নিয়ে শহরের প্রথম কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবক সেবা গ্রুপ গঠন করেন। এর নাম- ওয়াং লান হুয়া স্বেচ্ছাসেবক গ্রুপ। অফিস নেই, তাই তিনি নিজের বাসার একটি ঘরকে অফিস হিসেবে ব্যবহার করেন, নিজের মোবাইল নম্বরকে হটলাইন হিসেবে ব্যবহার করেন তিনি। এভাবে তাঁরা প্রতিদিন কমিউনিটির প্রত্যেক কোণায় বয়স্ক ও ছোট শিশুদের সাহায্য করেন, প্রতিবেশীদের মধ্যে ঝামেলা দূর করার চেষ্টা করেন ইত্যাদি।
একটি উদাহরণ, ইয়ু সি কমিউনিটিতে ৭৪ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা আছেন। তাঁর নাম কুও সু চেন। তাঁর পরিবারে কেউ নেই, তিনি একা। কোমরে গুরুতর ব্যথার কারণে তিনি নিজের যত্ন নিতে পারেন না। এই অবস্থা জানার পর ওয়াং লান হুয়া নিয়মিতভাবে তাঁর পরিবারে গিয়ে তাঁর যত্ন নেন ও তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। বৃদ্ধা কুও সু চেন বলেন, তাঁরা কয়েক দিন পর পর আমাকে দেখতে আসেন। এটি আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগার মুহূর্ত।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে একজন তরুণ বাবা ওয়াং লান হুয়াকে চিঠি লিখে সাহায্য চান। তাঁর ৫ বছর বয়সী ছোট ছেলে হঠাত্ লিউকেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ছেলের চিকিত্সায় ইতোমধ্যে ৭০ হাজার ইউয়ান খরচ হয়ে যায়। পরিবারে আর কোনো আর্থিক সামর্থ্য নেই।
এই তরুণ বাবা বলেন, তাঁর স্ত্রী মাত্র দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিয়েছে, তিনি বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারেন না, পরিবারে আয়ের কোনো উত্স নেই। এই অবস্থা জানার পর ওয়াং লান হুয়া দ্রুত তাঁকে পাঁচ হাজার ইউয়ান পাঠিয়ে দেন।
আসলে এই পাঁচ হাজার ইউয়ানও অনেক কষ্ট করে সংগ্রহ করেছেন ওয়াং লান হুয়া।
দীর্ঘসময় ধরে ওয়াং লান হুয়ার স্বেচ্ছাসেবক গ্রুপের কোনো নির্দিষ্ট আর্থিক উত্স ছিল না। লোকজনের কোনো চাহিদা থাকলে তিনি চারদিক থেকে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করতেন। ২০১৬ সালে তিনি উইচ্যাটে একটি গ্রুপ গঠন করেন। এভাবে নিয়মিত তাঁর গ্রুপ বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা লাভ করতে থাকেন। তবে অর্থের সীমাবদ্ধতা থাকায় সাধারণত তাঁরা প্রতিবার একজনকে এক হাজার ইউয়ান করে সহযোগিতা করেন। এবার ওই ছোট ছেলের অবস্থা গুরুতর হয়ে পড়ে এবং পরিবারের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তাই তাঁরা সবাই ছোট ছেলেটির জন্য অনেক অর্থ প্রদান করেছেন।
ওয়াং লান হুয়া এভাবে অনেককেই সাহায্য করেছেন। তিনি বলেন, এই জীবনে তাঁর বৃহত্তম সৌভাগ্য ও অর্জন দুটি। একটি হল- নামের শুরুতে দেওয়া গৌরব, যা সমাজের দেওয়া। আরেকটি হল- নামের পিছনে থাকা সত্গুণ ও ভালো কাজের কথা; যা দরিদ্র মানুষের জন্য কল্যাণকর।
কেউ কেউ বলে, ওয়াং বোকা। কিন্তু ওয়াং-এর মতে, অন্যকে সাহায্য করার মাধ্যমে নিজের জীবন আরো তাত্পর্যপূর্ণ ও আনন্দময় হয়।
‘অন্যকে সাহায্য করার মাধ্যমে নিজেকে খুশি করা’ এই কথা ওয়াং লান হুয়ার’ গ্রুপের সবার অভিন্ন চেতনা।
(শুয়েই/তৌহিদ/সুবর্ণা)