গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, করোনাভাইরাসের উৎস প্রকৃতি: বিজ্ঞানীদের অভিমত
2021-07-09 16:44:56

সম্প্রতি একদল আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী ‘দ্য ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে’ পাঠানো এক চিঠিতে লিখেছেন যে, কোভিড-১৯ রোগের জন্য দায়ী নভেল করোনাভাইরাস প্রকৃতিতে তৈরি ও বিবর্তিত হয়েছে। একটি পরীক্ষাগারে এ ভাইরাস তৈরি ও ফাঁস হওয়ার "বিজ্ঞানসম্মত ও উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়া যায় নি”। ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের চিঠির ওপর ভিত্তি করেই আজকের সংবাদ পর্যালোচনা।

 

গত সোমবার আন্তর্জাতিক ল্যানসেট জার্নালে একটি চিঠি প্রকাশিত হয়। এতে ২৪জন চিকিত্সক, পশুচিকিত্সক, মহামারীবিদ, ভাইরাসবিদ, জীববিজ্ঞানী, বাস্তুবিষেশজ্ঞ এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নভেল করোনাভাইরাসের ‘গবেষণাগার থেকে ফাঁস হওয়ার’ দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ, সম্প্রতি বিভিন্ন ধরনের নভেল করোনাভাইরাস বিশ্লেষণ করে সুস্পষ্ট ও দৃঢ়ভাবে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রকৃতিই হচ্ছে কোভিড-১৯ রোগের একমাত্র উত্স।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে, বিজ্ঞানীদের এই দলটি ল্যানসেট জার্নালে একটি চিঠি লিখেছিলেন। তাতে বলা হয়েছিল, " কোভিড-১৯ প্রকৃতিতে তৈরি হয়নি বলে যে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার হচ্ছে- আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই।"

"বিজ্ঞান, জল্পনা-কল্পনা নয়” শিরোনামে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এই চিঠিতে বিজ্ঞানীদলটি লিখেছে, এটা জানা জরুরি যে কীভাবে কোভিড-১৯ মানবদেহে এলো। “সম্প্রতি আমাদের অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে যে, ২০২০ এর প্রথম দিকে আমরা যা বলেছিলাম, তা আমরা এখনও সমর্থন করি কিনা।

বিজ্ঞানীরা জানান, তারা গবেষণা ও বিশ্লেষণের পর প্রাপ্ত তথ্য ও ফলাফলে অবিচল রয়েছেন। তবে, দিন দিন তাদের উদ্বেগ বেড়েই চলেছে।

বিজ্ঞানীরা বলেন যে, মূল চিঠিটি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে। SARS-CoV-2 "সম্ভবত" প্রকৃতিতেই উদ্ভব হয়েছিল, কোনও পরীক্ষাগারে নয়।

তারা বলেন, এই দৃষ্টিভঙ্গিটি নতুন ভাইরাসের প্রাথমিক জিনগত বিশ্লেষণ এবং পূর্ববর্তী উদীয়মান সংক্রামক রোগ থেকে শুরু করে "সুপ্রতিষ্ঠিত প্রমাণের" ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল। বিভিন্ন ধরনের করোনাভাইরাসের কারণে প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ সাধারণত সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে আসছে। এজন্য দায়ী SARS-CoV এবং MERS-CoV ভাইরাস।

SARS-CoV-2 অর্থ হলো severe acute respiratory syndrome coronavirus 2, যা কোভিড-১৯ রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস। অন্যদিকে ভাইরাসজনিত শ্বাসকষ্টের জন্য দায়ী  MERS; যার পূর্ণ নাম Middle East respiratory syndrome।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানায়, মঙ্গলবার পর্যন্ত বিশ্বে করোনাভাইরাসের ১৮৩.৯ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। পাশাপাশি, কোভিড-১৯ রোগে মারা গেছে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ।

 

বিজ্ঞানীদের নতুন চিঠিতে স্পষ্ট করে বলা হয়, "আমরা বিশ্বাস করি যে, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নতুন, বিশ্বাসযোগ্য ও জিনগত প্রমাণের সবচেয়ে শক্তিশালী সিদ্ধান্ত হলো- এ ভাইরাস প্রকৃতিতে বিকশিত হয়েছিল। পাশাপাশি একটি পরীক্ষাগার থেকে ভাইরাসের ফাঁস হওয়ার দাবির বৈজ্ঞানিক ও উপযুক্ত প্রমাণ নাই।”

এদিকে গত বুধবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েন পিন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, মার্চ মাসে প্রকাশিত চীন-ডব্লিউএইচওর যৌথ মিশনের প্রতিবেদন স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, এ ভাইরাসের ল্যাবরেটরি থেকে ফাঁসের আশঙ্কা নেই বললেই চলে।

ওয়াং বলেন, এটা দুঃখজনক যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে এবং তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য তাদের নিজেদের ব্যর্থতার জন্য চীনকে দায়ী করা।

তিনি আরও বলেন, এই ধরনের রাজনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা উপেক্ষা করেছে এবং মহামারী প্রতিরোধ না করে এটি নিয়ে রাজনীতি করার কারণে ছয় লাখ মার্কিনীর প্রাণহানির সত্য পরিবর্তন করতে পারবে না।

হু’র বিজ্ঞানীদের যৌথ নির্ভরযোগ্য ফলাফল পরিবর্তন হবে না। পাশাপাশি, কোনো একটি এলাকায় ভাইরাসের উত্স অনুসন্ধান সীমাবদ্ধ না রেখে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে অনুসন্ধান করা উচিত।

 

বেইজিং কোভিড-১৯ রোগের উত্স অনুসন্ধান নিয়ে রাজনৈতিককরণের তীব্র বিরোধিতা করে বলেছে, এটি একটি বৈজ্ঞানিক বিষয়, যে বিষয়ে চীন সবসময় উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ মনোভাব পোষণ করে।

ল্যানসেট চিঠির লেখকরা বলেছিলেন, অভিযোগ ও অনুমান কোনওভাবেই মহামারি প্রতিরোধে সহায়তা করে না। কোনও উদ্দেশ্যমূলক মূল্যায়ন ভবিষ্যতের মহামারী রোধ করতে পারে না।

“অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সহায়তায় পুনরূদ্ধার হবে না” বলে উল্লেখ করেছে বিজ্ঞানীমহল।

ল্যানসেট জার্নালে এই চিঠির লেখকরা হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, স্পেন, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া ও চীনের হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল-সহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী।