দেশের সমুদ্ররক্ষী সেনা ও সাধারণ মানুষ ওয়াং সু মাও
2021-07-09 16:28:18

দেশের সমুদ্ররক্ষী সেনা ও সাধারণ মানুষ ওয়াং সু মাও_fororder_hai

 

তিনি একজন সাধারণ জেলে। বংশ পরম্পরায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। পাশাপাশি তিনি দক্ষিণ চীন সাগরের একজন নৌ সেনা। ১৯৮৫ সালে স্বেচ্ছায় মিলিশিয়া দলে যোগদান করেন এবং তিনি দক্ষিণ চীন সাগরের নিরাপত্তা রক্ষা করার কাজকে নিজের সারা জীবনের দায়িত্ব হিসেবে মনে করেন।

তিনি হলেন চীনের হাইনান প্রদেশের ছুংহাই শহরের থান মেন সামুদ্রিক মিলিশিয়া দলের উপপ্রধান ওয়াং সু মাও। ৩৬ বছর ধরে তিনি দেশের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক কাজে অংশ নিয়েছেন, দেশের সামুদ্রিক সার্বভৌমত্ব এবং সামুদ্রিক স্বার্থ রক্ষায় নিজের অবদান রেখেছেন।

 

থান মেন থানা, হাইনান প্রদেশের ছুংহই শহরের পূর্বাঞ্চলের সমুদ্রতীরে অবস্থিত। প্রাচীনকাল থেকে থান মেনের জেলেরা দক্ষিণ চীন সাগরে মাছ ধরে জীবনযাপন করছেন। ‘পূর্বপুরুষদের সাগর’ হল দক্ষিণ চীন সাগরকে থান মেন জেলেদের দেওয়া নাম।

ওয়াং সু মাও ১৯৫৬ সালে থান মেন থানার থান মেন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি বাবার সঙ্গে সমুদ্রনির্ভর জীবনযাপন শুরু করে দেন। তিনি ভালোভাবে জাহাজ চালানো, ডুব দেওয়া ও মাছ ধরার সামর্থ্য অর্জন করেন। তিনি স্থানীয় সমুদ্রের অবস্থা সম্পর্কে খুব ভালো জানেন। এ কারণে তিনি স্থানীয় জেলেদের উন্নয়নে অবদান রাখতে পেরেছেন।

 

গত শতাব্দীর আশির দশকে, ওয়াং সু মাও নিজের ৩০ টনেরও বেশি ওজনের একটি কাঠের জাহাজের মালিক হন। তিনি থান মেন গ্রামে জাহাজের মালিকানা লাভ করা প্রথম দফার ব্যক্তি। ধীরে ধীরে তাঁর জাহাজের আয়তন বাড়তে থাকে। ৬০ টন, ৮০টন ও ১০০ টনের জাহাজ লাভ করেন তিনি।

১৯৮৫ সালে চীনের নান শা দ্বীপপুঞ্জে ফের মাছ ধরার কাজ শুরু হয়। ওয়াং সু মাও সবার আগে সেখানে যাওয়া জেলেদের অন্যতম।

 

২০১৩ সালে ওয়াং সু মাও সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সবার আগে একটি ৮৫০ টনের লোহার জাহাজ ঠিকা নেন। তখন গ্রামের অনেকেই চিন্তা করছিল যে, এতে বেশি অর্থ বরাদ্দ দিলে ঝুঁকি বেশি হবে। তাই অনেকেই বড় জাহাজ ঠিকা নিতে দ্বিধা করে। ওয়াং সু মাও সবার সঙ্গে জাহাজের ঠিকা নেওয়ার অনুভূতি শেয়ার করেন, গ্রামবাসীদের উদ্বেগ দূর করেন। এখন সেই থানায় শতাধিক বড় আকারের জাহাজ আছে।

 

মিলিশিয়া দলের সবাই ওয়াং সু মাও সম্পর্কে বলেন, ওয়াং ভাই খুব ভালো, নির্ভরযোগ্য একজন মানুষ। ওয়াং ভাই যে কাজ করেন, অনেকেই তা করতে পারে না।

মিলিশিয়া দলের সদস্য ওয়াং চেন ফু বলেন, ওয়াং ভাই সবসময় আমাদের নেতৃত্ব দেন। সবাই তাঁকে বিশ্বাস করে, তাঁর পেছনে কাজ করতে আগ্রহী। তাঁর নেতৃত্বে, থান মেনের জেলেদের জাহাজ ছোট থেকে বড় হয়েছে, কম থেকে বেশি হয়েছে, সবাই দিন দিন ধনী হয়ে উঠছে।

 

ওয়াং সু মাও-এর মতে, তিনি থান মেনের সব জেলেদের মতোই। তিনি মন দিয়ে দেশ ও সমুদ্রকে ভালোবাসেন।

গত শতাব্দীর ৯০ দশক থেকে, থান মেনের জেলেদের স্বাভাবিক কাজকে প্রতিবেশী দেশ ভিত্তিহীনভাবে নষ্ট করে দেয় এবং তাদেরকে আটকে রাখে।

বার বার অযৌক্তিকভাবে তাদের গ্রেফতার ও আটকে রাখার কারণে থান মেনের জেলেরা মিলিশিয়া দল গঠন করেছেন। তাঁরা সক্রিয়ভাবে দক্ষিণ চীন সাগরের অধিকার রক্ষার কাজে অংশ নিয়েছেন।

 

১৯৯৬ সালের একদিন, ওয়াং সু মাও মাছ ধরছিলেন, তখন তিনি দেখেন যে, ভিন্ন এক দেশের মানুষ চীনের একটি দ্বীপে ওঠার চেষ্টা করছিল। তিনি দ্রুত মিলিশিয়া দলের সদস্যদের নিয়ে সেই দ্বীপে সাত দিন পাহারা দেন। এই সাত দিন তাঁরা মাছ ধরতে পারেন নি, এ কারণে তাদের প্রায় ৯০ হাজার ইউয়ান ক্ষতি হয়। তিনি বলেন, ভালোভাবে আমাদের ‘পূর্বপুরুষদের সাগর’ রক্ষা করা হলো আমাদের দায়িত্ব।

দেশের সমুদ্ররক্ষী সেনা ও সাধারণ মানুষ ওয়াং সু মাও_fororder_hai2

২০১৪ সালের মে মাসে ওয়াং সু মাও মিলিশিয়া দলের ১০টি জেলে জাহাজ এবং দুই শতাধিক সদস্য নিয়ে চীনের সামুদ্রিক কূপখননের উপযোগী খনন-মঞ্চ রক্ষা করেন। তিনি দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছেন।

 

চীনে একটি কথা প্রচলিত আছে- ‘জাহাজ চালানো অর্ধেক জীবনের ঝুঁকি।’ প্রতিবার সমুদ্রে কোনো জেলে বিপদে পড়লে ওয়াং সু মাও সবার আগে উদ্ধারকাজ শুরু করেন।

১৯৯৬ সালের এক শীতকালে সমুদ্রে ৭, ৮ মাত্রার প্রচণ্ড বাতাস ওঠে। থান মেন বন্দরের ২০ নটিক্যাল মাইল দূরের সমুদ্রে, একটি কাঠের নৌকার ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়। নৌকায় ২০জনেরও বেশি জেলের প্রাণ বিপদে পড়ে। তিনি এই খবর জানতে পারেন এবং দ্রুত লোকজনকে নিয়ে তাদের সমুদ্রে খুঁজে বেড়ান এবং অবশেষে তাঁরা জেলেদের উদ্ধার করতে সক্ষম হন।

 

বিদেশি জেলেরা বিপদে পড়লেও ওয়াং সু মাও সাহায্য করেন। মিলিশিয়া দলের সদস্য ওয়াং চেন ফু স্মরণ করে বলেন, ২০০১ সালের একদিন, সমুদ্রে প্রচুর বাতাস ও বৃষ্টি দেখা দেয়। সব নৌকা ও জাহাজ বন্দরে ফিরে যায়। তবে সমুদ্রে কয়েকটি বিদেশি নৌকা ডুবে যাচ্ছিল, অনেক জেলে সমুদ্রে পড়ে যায়। ওয়াং সু মাও-এর নেতৃত্বে চীনা জেলেরা উদ্ধারকাজ করে সফলভাবে বিদেশি জেলেদের রক্ষা করেন।

 

দক্ষিণ চীন সাগরে বেশি বাতাস ও ঢেউ হয়। বহু বছর জাহাজ চালানোর অভিজ্ঞতা থেকে ওয়াং সু মাও জেলেদের নিয়ে টাইফুন মোকাবিলা করেছেন ১২০ বারেরও বেশি। ছয় শতাধিক জেলেকে উদ্ধার করেছেন। জেলেদের প্রাণের নিরাপত্তা দেওয়ায় সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন।

 

সামুদ্রিক পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য থান মেন থানার শতাধিক কাঠের নৌকার ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। ২০১৮ সাল থেকে ওয়াং সু মাও সক্রিয়ভাবে বিনোদনমূলক মত্স শিল্পের নীতি প্রণয়ন করেন এবং তা জনপ্রিয় করার চেষ্টা করেন।

এখন পর্যন্ত গোটা থানায় চার শতাধিক জেলে ৫টি বিনোদনমূলক মত্স কমিউনিটি গঠন করেছেন। লোকজন থানায় এসে সমুদ্রে মাছ ধরার আনন্দ উপভোগ করতে পারে এবং স্থানীয় জেলেদের বাসায় থাকতে পারে।

 

বর্তমানে থান মেন বন্দরে ও জেলেদের বাসায় হোটেল, সমুদ্রে মাছ ধরা ও ডাইভিংয়ের ব্যবস্থা আছে। থান মেন থানা ইতোমধ্যে দক্ষিণ চীন সাগরের বিখ্যাত ‘মত্স সংস্কৃতির পর্যটন থানায়’ পরিণত হয়েছে।

ওয়াং সু মাও বলেন, দক্ষিণ চীন সাগরকে আরো সুন্দর করলেই কেবল স্থানীয় লোকজনের জীবন আরো সুন্দর হতে পারে।