মার্কিন শাস্তি হংকংকে ভয় দেখাতে পারবে না
2021-07-09 11:34:47

জুলাই ৯: মার্কিন হোয়াইট হাউস বুধবার ‘হংকংয়ের পরিস্থিতি নিয়ে ঘোষিত জরুরি অবস্থার’ মেয়াদ বাড়ানো এবং হংকং-সংশ্লিষ্ট নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখার কথা ঘোষণা করেছে। এতে আবার প্রমাণিত হয় যে, এই মেয়াদের মার্কিন সরকার গত মেয়াদের সরকারের ভুল নীতির পথেই চলছে। মার্কিন সরকার চীনের হংকংয়ে ও চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের এই আচরণ আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নীতির গুরুতর লঙ্ঘন। এটি আধিপত্যবাদী আচরণ; চীন এর তীব্র নিন্দা জানায়।

 

যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রধান কারণ হল- তাদের মতে, চীনের হংকং-সম্পর্কিত ব্যবস্থা মার্কিন নিরাপত্তা, কূটনীতি ও অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে। যা একদম ভুল ধারণা। হংকং চীনের একটি প্রশাসনিক এলাকা, কেন্দ্রীয় সরকার হংকংয়ে সার্বিক পরিচালনার অধিকার রাখে। এটি চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তাহলে কীভাবে তা মার্কিন নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে? সম্প্রতি অ্যামচ্যাম চায়না’র প্রকাশিত ‘চীনে মার্কিন প্রতিষ্ঠানের শ্বেতপত্রে’ বলা হয়, দুই-তৃতীয়াংশ মার্কিন প্রতিষ্ঠান চীনে পুঁজি বিনিয়োগ আরো বাড়বে। মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো কি নিজ দেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করা কোনো দেশে পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারে?

 

আসলে, মানুষ দেখেছে যে, দীর্ঘসময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র চীন-বিরোধী এবং হংকংয়ের হাঙ্গামাকারীদের সমর্থন দিয়ে আসছে, চীনকে বিপর্যস্ত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। এটাই হল- চীনের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থের জন্য গুরুতর হুমকি। হংকং সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখাও কিছু মার্কিন রাজনীতিকের হংকংকে বিশৃঙ্খল করে চীনকে প্রতিরোধ করার অপচেষ্টার প্রতিফলন।

 

গত এক বছরে চীন সরকার হংকংয়ে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা আইন কার্যকর করেছে, হংকংয়ের নির্বাচনব্যবস্থা সুসংহত করেছে, কার্যকরভাবে দেশের নিরাপত্তা রক্ষা করেছে, হংকংয়ের সামাজিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করেছে, হংকংবাসীদের বিভিন্ন অধিকার নিশ্চিত করেছে। বর্তমানে হংকংয়ে একেবারে নতুন অবস্থা দেখা যাচ্ছে।

 

সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার নির্বাহী পরিষদের ৪৭তম সম্মেলনে হংকংয়ের যুবক ছেন ইয়েং সিন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, হংকংবাসীরা হংকংয়ে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা আইন প্রয়োগকে স্বাগত জানায়। কারণ এই আইন তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকার নিশ্চিত করেছে। তিনি আশা করেন, পশ্চিমা দেশগুলো উপলব্ধি করতে পারে যে, হংকংয়ের তরুণ-তরুণীরা হংকংকে এবং দেশকে ভালোবাসে। তারা বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ পছন্দ করে না।

 

সম্প্রতি চীনের বেশ কয়েকজন মহাকাশ বিশেষজ্ঞ হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল পরিদর্শন করেন। তাঁরা যেখানে গিয়েছেন, সেখানে হংকংবাসীরা তাদের স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলেন, এসব বিজ্ঞানীরাই জনগণের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা। চীনের সমৃদ্ধ উন্নয়নের জন্য হংকংবাসীরা চীনা নাগরিক হিসেবেও গর্ব বোধ করেন। যা বিদেশি শক্তির অপচেষ্টা প্রতিরোধ করার শক্তিশালী ভিত্তি।

 

এক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র হংকংয়ের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সময় বলেছিল যে, বৈদেশিক পুঁজি ব্যাপকভাবে হংকং থেকে সরে যাবে। তবে বাস্তবতা হল, এক বছরে হংকংয়ে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা আইন চালুর পর সেখানে আরো বেশি বৈদেশিক পুঁজি আসছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর হংকংয়ে বিদেশি পুঁজির পরিমাণ ছিল ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে হংকংয়ের জিডিপি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭.৯ শতাংশ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের রিপোর্ট আবারও হংকংয়ের আন্তর্জাতিক আর্থিক কেন্দ্রের অবস্থানের স্বীকৃতি দিয়েছে।

 

হংকংয়ের উন্নয়ন হংকংবাসীদের পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের শক্তিশালী সমর্থনের মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হয়েছে, বিদেশের দয়াদাক্ষিণ্যে নয়। যুক্তরাষ্ট্র শাস্তি আরোপের মাধ্যমে হংকংকে ভয় দেখাতে চায়। চাপ দিয়ে কোনো কাজ হয় নি, বর্তমানেও হচ্ছে না, ভবিষ্যতেও হবে না।

(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)