'যেভাবে সিপিসি'র সদস্য হলেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং'
2021-07-09 19:02:11

সাজিদ রাজু, সিএমজি বাংলা, ঢাকা: সিপিসি’র সদস্য হতে এক দুই বার নয়, টানা ১০ বার আবেদন করতে হয় বর্তমান প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংকে। দলের সদস্য হওয়ার সব যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও প্রথম ৯ বারই প্রত্যাখ্যান করা হয় আবেদন। কিন্তু কেন?

মাত্র ৫০ জন সদস্য নিয়ে ১৯২১ সালে গঠিত হয় কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না বা সিপিসি। ২০২১ সাল পর্যন্ত এই একশ’ বছরের পথচলায় বর্তমানে সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৫০ লাখ।

'যেভাবে সিপিসি'র সদস্য হলেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং'_fororder_xi

৪৭ বছর আগে লিয়াংচিয়াহে নামের ছোট্ট গ্রাম কমিটিতে যোগ দেন ২০ বছর বয়সী তরুণ সি চিন পিং। সেই থেকে শুরু তার রাজনৈতিক জীবনের পথচলা। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা তিনি। কিন্তু সিপিসি’র সদস্য হওয়া কতোটা সহজ ছিলো সি চিনপিংএর জন্য?

১৯৬৯ সালে একটি ক্যাম্পেইনে অংশ নিতে লিয়াংচিয়াহে গ্রামে আসেন ১৫ বছরের কিশোর সি চিন পিং। শহুরে শিক্ষার্থীদের গ্রামের জীবন ও কাজের অভিজ্ঞতা দেয়াই ছিলো এ ক্যাম্পেইনের লক্ষ্য।

'যেভাবে সিপিসি'র সদস্য হলেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং'_fororder_xi1

লিয়াংচিয়াহে গ্রামের বাসিন্দা শি চুংয়াং বলছিলেন, বইপাগল এ শহুরে কিশোর খুব দ্রুতই মানিয়ে নেন গ্রামীন জীবনের সঙ্গে।

সি চিনপিং খুব উদ্যমী ছিলেন বই পড়তে ভালোবাসতেন বিশেষ করে রাজনীতি, সংস্কৃতি অর্থনীতির বই পড়তেন মধ্যরাত পর্যন্ত একটি কেরোসিনের কুপি জ্বালিয়ে পড়তেন আমাদের গ্রামের মানুষজন তাকে পছন্দ করতো তারা তার সঙ্গে নানা বিষয়ে আলাপ আলোচনা করতো, তাকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করতো

তবে বক্তার চেয়েও বেশি কিছু ছিলেন সি চিনপিং। বলার চেয়ে শুনতেন বেশি, আরো বেশি করতেন কাজ।

'যেভাবে সিপিসি'র সদস্য হলেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং'_fororder_xi2

শি চুংইয়াং জানান, সাধারণত শহুরে ছেলেরা গ্রাম এসে কৃষিখামারের কাজ বুঝতো না। তারা খামারের বয়স্কদের কাছ থেকে জেনে নিতো। সি সিনপিংও নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতেন কিভাবে মাটি নরম করতে হয়, জমি চাষ করতে কিংবা পশু চরাতে হয়। সি চিনপিংসহ এসব শিক্ষিত ছেলেরা অনেক উদ্যোমী ও পরিশ্রমী ছিলেন।

গ্রামে যাওয়ার মাত্র ২ বছরের মধ্যেই সি চিনপিং মাটি খনন, পশু পালনের কাজ শিখে ফেলেন। পুরোদমে কাজ করতে থাকেন কৃষকদের সঙ্গে। মানুষের নানা সমস্যা সমাধানে আগ্রহী সি চিনপিং এর জীবন দর্শনই হয়ে দাঁড়ায় মানব সেবা।

দলের প্রতি পুরো মাত্রায় আস্থা ও বিশ্বাস ছিলো বিপ্লবী পরিবার থেকে আসা সি চিনপিং এর। সে সময় গ্রামের দলীয় প্রধান ছিলেন লিয়াং ইউমিং। তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন সি চিনপিংকে।

'যেভাবে সিপিসি'র সদস্য হলেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং'_fororder_xi3

লিয়াং ইউমিং

 

১৯৭২ সাল থেকে সি চিনপিং কমিউনিস্ট পার্টির ইয়ুথ লিগে যোগ দেয়ার আবেদন শুরু করেন চূড়ান্তভাবে সদস্য হওয়ার আগে তাকে মোট ১০ বার আবেদন করতে হয়

দলের সদস্য পদের জন্য প্রথম আবেদন করলে দলের গ্রাম সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন লিয়াং। প্রত্যেকেই সি চিনপিংকে সদস্য পদ দিতে সম্মত হন। এরপর তার আবেদন পাঠানো হয় ‘কমিউন পার্টি কমিটিতে’। এ কমিটির একজন সদস্য ছিলেন ইয়াং শিছোং। তিনি জানান, সিপিসিতে যোগ দেয়ার সব যোগ্যতাই ছিলো সি চিনপিং এর।

'যেভাবে সিপিসি'র সদস্য হলেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং'_fororder_xi4

ইয়াং শিছোং

সে সময় কমরেড সি চিনপিং দলে এগিয়ে আসতে আগ্রহী ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী, দায়িত্বশীল নিরপেক্ষ ছিলেন

কিন্তু এরপরও তার সদস্য পদের আবেদন গ্রহণ করা হয়নি। কারণ রাজনীতিতে তার বাবার প্রভাবশালী অবস্থান। তবে দমে যাননি সি। পর্যায় ক্রমে আরো ৯ বার আবেদন করেন তিনি।

দীর্ঘ সাধনার পর ১৯৭৪ সালে তিনি চূড়ান্তভাবে সিপিসি’র সদস্য মনোনিত হন সি চিনপিং। এ সময় যাচাই করা হয় দলের প্রতি তার বিশ্বাস, মানুষের প্রতি যত্নশীল আচরণ।

'যেভাবে সিপিসি'র সদস্য হলেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং'_fororder_xi5

এরপর স্থানীয় বাসিন্দারাই চেয়েছে তাকে গ্রামের দলীয় প্রধান করতে। গ্রামের নাগরিকদের সুপারিশে লিয়াংচিয়াহে গ্রামের সেক্রেটারি নিযুক্ত হন সি চিনপিং।

এরপর শুরু হয় রাজনীতিতে তার নতুন পথযাত্রা। সামাজিক নানা উদ্যোগ নেন তিনি। বিশেষ করে বন্যার হাত থেকে গ্রামের ফসল বাঁচাতে বাধ নির্মাণ, রান্না সহজ করতে মিথেন ট্যাংক তৈরি, এবং গম থেকে আটা বানানোর মেশিন চালু করেন গ্রামে। এসব কর্মসূচি তাকে বসায় নেতৃত্বের আসনে।