জুলাই ৮: ন্যাটোর শীর্ষসম্মেলন গত ১৪ জুন বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনশেষে ন্যাটোর প্রকাশিত এক ইস্তেহারে বলা হয়, চীন ‘ব্যবস্থাপনামূলক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে’। এর আগের দিন, ব্রিটেনের কর্নওয়াল-এ জি-৭ শীর্ষসম্মেলন থেকে প্রকাশিত চূড়ান্ত ঘোষণায় তথাকথিত মানবাধিকার, সিনচিয়াং , হংকং ও কোভিড-১৯ ভাইরাসের উত্স ইত্যাদি ইস্যুতে চীনের ওপর না-হক আক্রমণ করা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজে উক্ত দুটো সম্মেলনে অংশ নেন। এটি ছিল মিত্র দেশগুলোকে নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে ‘চীনবিরোধী মৈত্রী সংঘ’ গড়ে তোলার মার্কিন অপচেষ্টা। সিএনএন বলেছে, দুটো সম্মেলনে জো বাইডেন চীনের হুমকির কথা উল্লেখ করলেও, ইউরোপীয় শীর্ষনেতৃবৃন্দ এ ব্যাপারে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে বেশ সতর্ক ছিলেন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এটি ছিল জো বাইডেনের প্রথম ইউরোপ সফর। বাইডেন অনেকবার বলেছেন যে, তিনি ‘গণতান্ত্রিক বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত’ করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র কর্মকর্তারাও এই বৈঠকের আগে চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের ইঙ্গিত দেন। এএফপি জানিয়েছে যে, বাইডেন ট্রাম্পের পথেই হাঁটছেন, জি-৭ ও ন্যাটোকে ‘বেইজিংয়ের দিকে মনোনিবেশ করাতে শুরু করেছেন’, এবং চীনের প্রতি আরও কঠোর লাইন অবলম্বন করে চলেছেন।
আসলে উভয় শীর্ষ সম্মেলনে চীনের বিষয় উল্লেখ করা হলেও, এক্ষেত্রে ভাষার ব্যবহার যুক্তরাষ্ট্রের আশা পূরণে ব্যর্থ হয়; যুক্তরাষ্ট্র আরও কঠিন ভাষা আশা করেছিল। ব্রিটিশ ‘গার্ডিয়ান’ একজন মার্কিন কর্মকর্তঅর বরাত দিয়ে বলেছে, বাইডেন বিশেষভাবে আশা করেছিলেন জি-৭ যৌথ-বিবৃতিতে সিনচিয়াংয়ে তথাকথিত ‘জোরপূর্বক শ্রম’ আদায়ের ঘটনার নিন্দা জানানো হবে। কিন্তু এ ব্যাপারে সরাসরি চীনের নাম আনা হয়নি। ইইউ ডায়নামিক নেটওয়ার্ক বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র মূলত ন্যাটো শীর্ষসম্মেলনের ঘোষণায় চীনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ভাষা ব্যবহার করতে চেয়েছিল, কিন্তু ইইউ’র দেশগুলো চীনকে ‘হুমকি’ না-বলে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের পরে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়টি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন যে, জি-৭ চীন-বিরোধী কোনো জোট নয়। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও উন্নয়ন, ইত্যাদি ক্ষেত্রে চীনের সাথে সহযোগিতা করতে চায় জি-৭। জার্মান চ্যান্সেলর বলেছেন, ‘চীন অনেক ইস্যুতে আমাদের প্রতিপক্ষ, তবে দেশটি অনেক দিক থেকে আমাদের অংশীদারও বটে।’। ইতালির নেতা বলেছেন, পশ্চিমাদের অবশ্যই মূল ক্ষেত্রে, বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় চীনের সহযোগিতা নিতে হবে। জার্মান পত্রিকা বিল্ড জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও কানাডা চীনের বিরুদ্ধে কঠোর নীতিমালা গ্রহণের আহ্বান জানালেও, জার্মান ও ইতালি এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
উল্লেখ্য, জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের আগে তথাকথিত ‘বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এর লক্ষ্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবকাঠামো খাতে ৪০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের উন্নয়ন-সহায়তা দেওয়া। এটি স্পষ্টতই চীনের ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের সমান্তরাল একটি উদ্যোগ। তবে, ‘ফিনান্সিয়াল টাইমস’ উল্লেখ করেছে যে, শেষ দিন পর্যন্ত জি-৭ শীর্ষসম্মেলনে ওই উদ্যোগের তহবিল নিয়ে একমত হওয়া যায়নি।
ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে জো বাইডেনের বিভিন্ন পারফরম্যান্স দেখায় যে, যুক্তরাষ্ট্র চক্র গঠন এবং চীনের বিরুদ্ধে ‘জোট’ গঠনের সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে, ইউরোপীয় মিত্ররা তাতে রাজি নয়। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)