আজহার লিমন, ঢাকা: ৯ বন্ধু মিলে ২০১৯ সালের অক্টোবরে অল ট্রিপস ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি ট্যুর অপারেটিং কোম্পানি শুরু করেন তরুণ উদ্যোক্তা হাদীউজ্জামান। করোনায় টানা দুই বছরের অভিঘাতে ৯ জনের জায়গায় ঝড়ে পড়েছেন ৩ জন, বন্ধ আছে কার্যালয়। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি হাদী। কিন্তু কঠিন সময়টা কবে শেষ হবে সে ব্যাপারেও বেশ শঙ্কা আছে তার।
ছবি: জেড এম হাদীউজ্জামান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অল ট্রিপস ইন্টারন্যাশনাল
জনাব হাদী বলেন, “কোন অভিজ্ঞতা ছাড়াই ব্যবসা শুরু করে বেশ ভালো করছিলাম। কিন্তু মার্চের দিকে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই আমাদের দুরাবস্থা শুরু হয়ে গেল। আমরা তো চাচ্ছি হাল না ছাড়তে। কিন্তু কতটা পারবো জানি না।”
করোনাকালের এই সংকটপূর্ণ সময়ে শুধু নবীন ব্যবসায়ীরা নয় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে গোটা পর্যটন খাত। পর্যটনখাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েন অব বাংলাদেশ-টোয়াব এর প্রেসিডেন্ট মো. রাফিউজ্জামান বলছেন, গেল অর্থবছরেই অভ্যন্তরীণ ট্যুর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতির পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বিশেষ করে পর্যটনখাতের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার হোটেল মোটেলে নিয়োজিত কয়েক লাখ কর্মী এখন কর্মহীন। এদের ভবিষত কী? টোয়াব বলছে, সম্ভাবনা স্বীকার করলেও এখাত বাঁচাতে কার্যত কোন পদক্ষেপ নেই সরকারের পক্ষ থেকে।
ছবি: মো. রাজিউজ্জামান, প্রেসিডেন্ট, টোয়াব
জনাব রাফিউজ্জামান বলেন, “একটা ট্যুর অপারেটর একটা ট্যুর গাইড রাতারাতি সৃষ্টি হয় না। সময়, কাল, পাত্র, অর্থ বিসর্জন দিয়ে তার একটা ট্যুর অপারেটর তৈরি হয়। একটা ট্যুর অপারেটরকে বলা হয় অ্যাম্বাসেডর অব দি কান্ট্রি। তারা একজন বিদেশি পর্যটককে যেভাবে দেখায় রাষ্ট্রটা সম্পর্কে সেরকমই ধারণা পায় বিদেশিরা। এই পেশাদার লোকদের বাঁচারে অভিভাবক হিসেবে সরকার এগিয়ে আসতে আমরা বরাবরই এই আবদনই করছিলাম।”
সরকার কি এগিয়ে আসছে?
উত্তরে পর্যটন ব্যবসায়ীদের এ নেতা বলেন, সরকার এগিয়ে আসছে না।
সরকারের বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলছেন, অন্যান্য খাতের মতো করোনার অভিঘাতে পর্যটনখাতের বিপর্যয়ের বিষয়টি তাদেরও নজরে আছে। কিন্তু মাঝারি মানের এই পর্যটন প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে কী ভাবছে সরকার? প্রতিমন্ত্রী বলছেন, তারা উদ্যোক্তাদের মনোবল চাঙা রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
ছবি: মো. মাহবুব আলী, প্রতিমন্ত্রী, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বলেন, “উধ্র্বগামী যখন করোনার সংক্রমণ মানুষের স্বাস্থ্যে দিকে চিন্তা করে এগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। যার ফলে অনেকেই কষ্ট করেছেন। এবং আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা ফাইনেন্সিয়াল হেল্পটা কোভিডের দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের কষ্টা লাঘব করার জন্য নেয়া হচ্ছে।”
কিন্তু হোটেল মোটেল মালিকরা বললেন তারা এ সুবিধা পাচ্ছেন না?
“প্রণোদনাটা অনেকে অনেকভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে। অনেকে হয়তো ভেবেছে প্রণোদনাটা হয়তো একটা ফ্রি কোন কিছু। এটাও একটা ব্যাংক লোন, সহজ শর্তে ঋণ। এটা নিতে হলে তো ব্যাংকে যেতে হবে, ব্যাংক দেবে। এবং নিয়েছেও অনেকে। পাচ্ছে না, একথাগুলো ঠিক না”
প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন -পাটার বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান শহীদ হামিদ মনে করেন, ভৌগলিক নানা বৈচিত্র থাকার কারণে ইকো ট্যুরিজমসহ নানা দিক দিয়ে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ। এই সম্ভাবনা ও উদ্যোক্তাদের উৎসাহ ধরে রাখতে পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকেই। তবে এ ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো প্রয়োজন বলেও মনে করেন পাটার চেয়ারম্যান।
ছবি: শহীদ হামিদ, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ চ্যাপ্টার, পাটা
জনাব হামিদ বলেন, “এত বড় ডিজাস্টার থেকে কাম আউট করতে গেলে সরকারের একটা অ্যাকটিভ রোল প্লে করা ছাড়া কোন গতি নেই। যেমন যেমস্ত স্টাফদের চাকেরি চলে গেছে ওদের জন্য কিছু ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্ট এছাড়া ভ্যাট, ট্যাক্স, বিদ্যুৎ পানি সার্ভিস রিডুস করে দিয়েছে বা সময় বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক দেশ। কিন্তু আমাদের দেশে সেটা দেখা যাচ্ছে না। সেটা না হলো ইট উইল বি ভেরি ডিফিকাল্ট।”
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাডের এক হিসেব বলছে, চলতি বছর পর্যটনখাতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার। টিকা বিতরণে অসমতাসহ নানা কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হবে উন্নয়নশীল দেশগুলো। এমন অবস্থায় নানা মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশের পর্যটনখাতের পুনরুদ্ধারও যে ব্যাপক চ্যালেঞ্জমুখে পড়বে তা বলাই যায়।
আজহার লিমন। চীন আন্তর্জাতিক বেতার। ঢাকা।