জুলাই ৭: চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গতকাল (মঙ্গলবার) বেইজিংয়ে ভিডিও-এর মাধ্যমে ‘সিপিসি এবং বিশ্বের রাজনৈতিক দলের নেতাদের শীর্ষসম্মেলনে’ অংশ নিয়েছেন এবং ‘রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা জোরদার করে জনগণের সুখের জন্য চেষ্টা করা’ শীর্ষক বক্তৃতা দিয়েছেন।
এবার শীর্ষসম্মেলনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘জনগণের সুখের জন্য চেষ্টা করা: রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব’। ভাষণে সি চিন পিং বলেন, সিপিসি প্রতিষ্ঠার একশ’ বছরে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চীনা জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে চীনকে শক্তিশালী করেছে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, আজ মানবজাতি আবারও ঐতিহাসিক সময়পর্বে দাঁড়িয়ে আছে। বাছাই করার দায়িত্ব আমাদের, দায়িত্বও আমাদের কাঁধে। তিনি বলেন,
অভিন্ন চ্যালেঞ্জের সামনে কোনো দেশ তা একা সমাধান করতে পারে না। মানবজাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়াই একমাত্র সমাধান। মানবজাতির উন্নয়ন জোরদার করার গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে, রাজনৈতিক দলের উচিত সঠিক দিক নির্ধারণ করা, জনগণের সুখী জীবন এবং মানবজাতির উন্নয়ন বাস্তবায়নের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করা।
সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, প্রথমত আমাদের উচিত, দিক নির্দেশনা মেনে চলা, মানবজাতির অভিন্ন ভবিষ্যত্ গঠন করা। আমাদের উচিত জনগণের কথা শোনা, বিভিন্ন দেশের সমন্বয় ও সহযোগিতা জোরদার করা, নিজ দেশের জনগণের স্বার্থ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনস্বার্থ সংযুক্ত করে মানবজাতির অভিন্ন ভাগ্যের কমিউনিটি গড়ে তোলা।
দ্বিতীয়ত আমাদের উচিত, সমঝোতার পথ তৈরি করা। শান্তি, উন্নয়ন, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার অভিন্ন মূল্যবোধে অবিচল থাকা। আমাদের উচিত মানবজাতির ভবিষ্যত নিয়ে দায়িত্বশীল মনোভাব পোষণ করে ভিন্ন দেশের জনগণের মূল্যবোধ বাস্তবায়নের চেষ্টাকে সম্মান করা।
তৃতীয়ত, আমাদের উচিত উন্নয়ন জোরদার করা, যাতে উন্নয়নের সুফল আরো ন্যায়সঙ্গতভাবে বিভিন্ন দেশের জনগণের কাছে পৌঁছে যায়।
তিনি বলেন, মানবজাতিকে সুখের পথে এগিয়ে নেওয়ার পথে, কোনো দেশ ও জাতিকে বাদ দেওয়া যায় না। বিশ্বের সব দেশ ও জাতির সমান উন্নয়নের সুযোগ ও অধিকার আছে।
সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন, অন্য দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করা, অন্য দেশের জনগণের জীবন ক্ষতিগ্রস্ত করার রাজনৈতিক অপচেষ্টাকে কেউ সমর্থন করে না এবং তা অবশেষে ব্যর্থ হবে।
সি চিন পিং বলেন, চতুর্থত, আমাদের উচিত সহযোগিতা জোরদার করা, হাতে হাত রেখে বিশ্বব্যাপী ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা। পঞ্চমত, আমাদের উচিত বৈশ্বিক পরিচালনা ব্যবস্থা সুসংহত করা এবং জনকল্যাণ সৃষ্টি করা।
তিনি বলেন, সুখের পথ ভিন্ন হতে পারে। বিভিন্ন দেশের জনগণের নিজস্ব উন্নয়নের পথ ও ব্যবস্থা বাছাই করার অধিকার আছে। গণতন্ত্রও বিভিন্ন দেশের জনগণের অধিকার; বরং অল্প কিছু দেশের বিশেষ অধিকার নয়। একটি দেশ গণতান্ত্রিক কি না, তা সে দেশটির জনগণ যাচাই করবে; অল্প কিছু মানুষ নয়।
সি চিন পিং বলেন, সিপিসি চীনা জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে চীনের বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়ন জোরদার করবে এবং আধুনিকায়নের পথে নতুন অবদান রাখবে। সিপিসি বাস্তবতা থেকে জনগণকে নিয়ে চীনের বৈশিষ্ট্যময় সমাজতন্ত্রের পথ খুঁজে বের করেছে। চীন সার্বিক সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ বাড়াবে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যৌথ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য নতুন অবদান রাখবে।
তিনি বলেন, সিপিসি বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক পার্টির সঙ্গে বিনিময় জোরদার করবে; অর্থনীতির বিশ্বায়ন আরো উন্মুক্ত, সহনশীল, ভারসাম্য ও যৌথ কল্যাণকর উন্নতি করবে। চীন আন্তর্জাতিক সমাজের সঙ্গে ‘এক অঞ্চল, এক পথের’ আরো উচ্চ মানের সহযোগিতা জোরদার করবে, যাতে আরো বেশি দেশ ও মানুষ উন্নয়নের সুফল লাভ করে।
সি চিন পিং বলেন, সিপিসি বড় দেশের বড় রাজনৈতিক পার্টির দায়িত্ব পালন করে মানবকল্যাণে নতুন অবদান রাখতে চায়। দারিদ্র্যবিমোচন হল বিভিন্ন দেশের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষা এবং বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। চীন মানবজাতির দারিদ্র্যবিমোচনে আরো বেশি চীনা বুদ্ধি ও শক্তি যোগাতে চায়। চীন আন্তর্জাতিক মহামারি প্রতিরোধ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে, বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি রোধে আরো বেশি অবদান রাখবে। সবার উচিত বহুপক্ষবাদের নামে একতরফাবাদের আচরণ রোধ করা।
তিনি বলেন, চীন সবসময় উন্নয়নশীল দেশের পরিবারের সদস্য। চীন দৃঢ়ভাবে আন্তর্জাতিক পরিচালনা ব্যবস্থায় উন্নয়নশীল দেশের প্রতিনিধিত্ব ও কথা বলার অধিকার বাড়ানোর চেষ্টা করবে।
(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)