গত মাসে আমি তৃতীয় বারের মতো সিনচিয়াং সফর করেছি। এটি খুব বড় একটি প্রদেশ। চীনের মোট আয়তনের ছয় ভাগের এক ভাগ এবং বৃটেনের আয়তনের চেয়ে ১৮ গুণ বড় এটি। যদিও আমি তিন বার সফর করেছি, আমি বলতে পারি না, সিনচিয়াংয়ের সবকিছু আমি জানতে পেরেছি। অথচ বিদেশি কোন কোন বিশেষজ্ঞ একবারও সিনচিয়াংয়ে না গিয়ে, কেবল ম্যাপ ও ইন্টারনেটের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সিনচিয়াংয়ের তথাকথিত মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। আসলে অনেক হাস্যকর ব্যাপার, তাই না? তাই দুনিয়ার কেউ তাদের এহেন প্রতিবেদন বিশ্বাস করে না।
অনেকে সিনচিয়াং সম্পর্কে আগ্রহী। বিশেষ করে, আমাদের বিদেশী বন্ধুরা। পশ্চিমা তথ্যমাধ্যমে তাঁরা সিনচিয়াং নিয়ে অনেক খবর পড়েন। জোরপূর্বক শ্রম, গণ্যহত্যা, মুসলিমদের নির্যাতনের মিথ্যা বর্ণনায় এসব খবর থাকে ভরপুর। মাঝে মাঝে ফেসবুকে অনেক বাংলাদেশী বন্ধু সিনচিয়াংয়ের মুসলমানদের খোঁজ খবর জানতে চান। আমি তাঁদেরকে বার বার প্রকৃত সত্য জানানোর চেষ্টা করি। সিনচিয়াংয়ে যে সবাই ধর্মীয় স্বাধানীতা ও অধিকার ভোগ করছেন, তা আমি সবাইকে জানাই। আরেকটি কথা আমি সবসময়ই বলি, আপনারা সিনচিয়াংয়ে এসে স্বচোখে সেখানকার অবস্থা দেখে যান।
আপনাদের উদ্বেগ সম্পর্কে আমিও অবগত আছি। তাই যখনই আমি সিনচিয়াংয়ে যাই, তখনই আমি স্থানীয় মুসলমানদের অবস্থার ওপর বিশেষ দৃষ্টি রাখি। তাঁদের সঙ্গে কথা বলি। সিনচিয়াংয়ে সাড়ে ২৫ হাজারের বেশি মসজিদ আছে। সেখানে ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব রয়েছেন প্রায় ২৯ হাজার জন।
আমি উরুমুছি, ইলি, কাশগারসহ নানা শহরের স্থানীয় মসজিদে গিয়েছি। সেখানে বিদ্যুত্, পাঠাগার, সুপেয় পানি, অজুখানা, টয়লেট, ইন্টারনেট, এসি, হিটার, এবং টিভিসহ আধুনিক সব সুবিধাই রয়েছে। যে কোন সময়ে মুসলিমরা সেখানে নামাজ পড়তে পারেন।
সাম্প্রতিক সফরে আমি একজন ইমামের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি স্থানীয় মুসলমানদের অবস্থা আমাকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, খাবার, উত্সব, বিয়ে ও শেষকৃত্যানুষ্ঠানসহ মুসলিম ঐতিহ্যের সবকিছু মসজিদে হয়ে থাকে।
আমি দুবার সিনচিয়াং ইসলামিক স্কুল সফর করেছি। সেখানে ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। সরকার তার নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণে ১০ কোটি ইউয়ানের বেশি বিনিয়োগ করেছে। পাঠদান ভবন, ছাত্রাবাস, ক্যান্টিন, জিমনেসিয়াম সবই আছে সেখানে। চীনের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় সেখানকার অবকাঠামো অনেক উন্নত ও আধুনিক।
সেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য বড় একটি মসজিদ নির্মিত হয়। দারিদ্র্য পরিবারের শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে লেখাপড়া করতে পারে। মেধাবীরা বৃত্তি পেয়ে থাকে। এসব প্রমাণ করে, চীন সরকার কখনও কারও ধর্মীয় আচারে বাধা দেয় না, বরং ইসলাম ধর্মের উন্নয়ন ও উত্তরাধিকারের জন্য ভাল পরিবেশ সৃষ্টি করছে।
আমি ছবি, ভিডিও ও লাইভের মাধ্যমে আপনাদের সামনে সেখানকার প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরেছি। তা আপনাদের মনের সন্দেহ দূর করার প্রচেষ্টা মাত্র। পশ্চিমা তথ্যমাধ্যের বাইরে প্রকৃত সত্য তুলে ধরার প্রয়াস। তার বাইরে আপনারা নিজেরা সিনচিয়াং ভ্রমণ করতে পারেন। আমি বিশ্বাস করি, যদি আপনারা একবার সিনচিয়াংয়ে আসেন, তাহলে বারবার আসবেন। কারণ, এটি আকর্ষণীয় ও বৈশিষ্ট্যময় একটি জায়গা। তা একবার সফর করে মন ভরে না।
সিনচিয়াংয়ে বাস করে নানা জাতির মানুষ। তারা বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী। তবে, জীবনের প্রতি স্থানীয়দের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও আন্তরিক আতিথেয়তার মধ্যে বড় কোন পার্থক্য নেই। তাদের মুখের হাসি বলে দেয় সিনচিয়াংয়ের ভবিষ্যত্ আরও উজ্জ্বল।
শিশির/এনাম