চীনের মহান নেতা, চেয়ারম্যান মাও জেতুংয়ের নেতৃত্বে ১৯২১ সালের ১ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চীনের কমিউনিস্ট পার্টি। ১৯৪৯ সালে মাওয়ের নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের মাধ্যমে চীনে ক্ষমতায় আসে সিপিসি। প্রতিষ্ঠার পর সংগ্রামে-বিপ্লবে এবং ক্ষমতায় আসার পর চীনা জাতির পুনরুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া মিলিয়ে শতবর্ষ পার করেছে সিপিসি।
জাঁকজমকের সঙ্গে চীনের মানুষ ১ জুলাই উদযাপন করেছে সিপিসির শতবর্ষ। এ উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানমালার মধ্যে অন্যতম ছিল রাজধানী বেইজিংয়ের ঐতিহাসিক তিয়েন আনমেন স্কয়ারে বর্ণাঢ্য উদযাপনী অনুষ্ঠান। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন চীনের প্রেসিডেন্ট ও সিপিসির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সিপিসির শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠান বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ভাষণকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার ও প্রকাশ করেছে। দেশের সব বেতার-টিভি ও সংবাদপত্রে ফলাও প্রচার পেয়েছে সিপিসির গৌরবময় শতবর্ষ উদযাপনের খবর।
আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমরা নজর দেব বাংলাদেশের গণমাধ্যম বিশেষ করে জাতীয় সংবাদপত্রের খবরে ঠিক কতটা প্রতিফলিত হয়েছে সিপিসির শতবর্ষ উদযাপন ও প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ভাষণ-তার দিকে।
দেশের প্রাচীনতম সংবাদপত্র দৈনিক ইত্তেফাক ২ জুলাই তাদের প্রথম পাতায় প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ছবিসহ খবরটি ছেপেছে। খবরটি শিরোনাম ছিল: ‘চীনের বিরুদ্ধে লাগলে মাথা ভেঙে দেওয়া হবে’। খবরটি ১৫তম পৃষ্ঠায় উদযাপনে বেশ কিছু ছবিসহ বিস্তারিত আকারে শেষ হয়।
সংবাদপত্রটি প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ভাষণ উদ্ধৃত করে লিখেছে:
‘বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়ে উঠেছে চীন।…কেউ আর আমাদের ভয়ভীতি দেখাতে পারবে না,নিপীড়ন করতে পারবে না এবং চীনকে পরাভূত করতে পারবে না।… যারা চীনের সঙ্গে লাগার চেষ্টা করবে তাদের মাথা ভেঙে দেওয়া হবে’।
জাতীয় দৈনিক যুগান্তর ও জনকণ্ঠও তাদের আন্তর্জাতিক পাতায় প্রায় ইত্তেফাকের কাছাকাছি শিরোনাম করেছে।
দৈনিক যুগান্তের শিরোনাম: ‘পিছে লাগলে মাথা ভেঙে দেবে চীন। পত্রিকাটি প্রেসিডেন্ট সির ভাষণ উদ্ধৃত করে লিখেছে, ‘একটি পরিমিত সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তোলার মাধ্যমে চীন তার শতবর্ষী লক্ষ্য অর্জন করেছে।… আমরা কাউকে দমন করার চেষ্টা করি না। সুতরাং কেউ আমাদের নির্যাতন এবং পরাধীন করতে পারবে না’।
চীনকে করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে দ্রুত বের করে আনা এবং বিশ্বমঞ্চে দৃঢ় অবস্থানের জন্য প্রেসিডেন্ট সি ও কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা আরও উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন- বলেও পত্রিকাটির প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়।
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো ও সমকাল প্রায় একই রকম শিরোনাম করেছে। প্রথম আলোর আন্তর্জাতিক পাতায় শিরোনাম ছিল:
‘চীনকে দমাতে চাইলে নিদারুণ পরিণতি: সি’। বিদেশি শক্তির প্রতি প্রেসিডেন্ট সি’র হুঁশিয়ারি দিয়ে শুরু করা হয় প্রতিবেদনটি। প্রেসিডেন্ট সিকে উদ্ধৃত করে পত্রিকাটি লিখেছে, ‘চীনা জনগণ কেবল পুরনো বিশ্ব ভাঙেনি, তারা নতুন বিশ্বও গড়েছে’।
দেশের অন্যতম ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার তাদের আন্তর্জাতিক পাতায় শিরোনাম করেছে: ‘চায়না’স রাইস ইরিভার্সিবল’। প্রত্রিকাটি প্রেসিডেন্ট সির ভাষণের কয়েকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সামনে এনেছে। তা হলো: সিপিসি চীনের লাখ লাখ মানুষকে দরিদ্রদশা থেকে মুক্ত করেছে, চীনা জাতির পুনরুত্থান ঘটিয়েছে এবং বিশ্বের উন্নয়নে মানচিত্র বদলে দিয়েছে। এ বিষয়গুলো বেশির ভাগ প্রত্রিকার প্রতিবেদন ততটা প্রতিফলিত হয়নি।
দেশের অন্যতম দুটি ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ পোস্ট ও ডেইলি সান সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় এবং বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ পোস্ট তাদের সম্পাদকীয় ভাষ্যে বলেছে, গত ১০০ বছরে সিপিসি চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও মানবিক অগ্রগতির এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রচনা করেছে। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের প্রশংসা করে সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ২০১২ সালে সিপিসির সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট হবার পর সি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। তার রাজনীতি চীনকে অধিকতর স্বনির্ভর ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম করেছে।
এছাড়া পত্রিকাটি ‘ইনডমিটেবল মার্চ অব সিপিসি’ ও ‘লং মার্চ ফ্রম রেডবোট’ শিরোনামে উপসম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে।
সার্বিক বিচারে বলা যায়, বাংলাদেশের সংবাদপত্রে সিপিসির শতবর্ষ উদযাপনের খবর মোটামুটিভাবে ভালো ছিল।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।