আকাশ ছুঁতে চাই ২৮
2021-07-01 18:48:14

চীনে নারীর জীবনমান বদলে দিয়েছে কমিউনিস্ট বিপ্লব

আকাশ ছুঁতে চাই ২৮

যা থাকছে এবারের পর্বে

 

১.  তরুণ প্রজন্মের আদর্শ: চীনের উইমেন রেড আর্মি বিষয়ে প্রতিবেদন

২. নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা শামীম আখতারের সাক্ষাৎকার

৩. চীনের বিদেশী বন্ধু শতবর্ষী কমিউনিস্ট ইসাবেল ক্রুক

৪. দেশাত্মবোধক গান- জ্যাকি চ্যান ও লিউ ইউয়ান ইউয়ান

৫. মিয়াও নারীর জীবনের গল্প

৬. তিববতে কমিউনিজমের স্পর্শে বদলে গেল নারীর জীবন

চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ঢাকা স্টেশন থেকে প্রচারিত আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তামারিয়া।কেমন আছেন আপনারা? আশা করি সবাই সুস্থআছেন, ভালো আছেন।

চীনে নারীর জীবনমান বদলে দিয়েছে কমিউনিস্ট বিপ্লব

 

আজ একটি বিশেষ দিন। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শতবর্ষ পূর্ণ হচ্ছে আজ। ১৯২১ সালের পহেলা জুলাই অফিশিয়ালি যাত্রা শুরু হয় সিপিসির। ১৯৪৯ সালে মহান কমিউনিস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন বিশ্বের বুকে মেহনতী মানুষের সাফল্যের নিদর্শন হিসেবে জন্ম লাভ করে। সমাজতান্ত্রিক চীনে নারী-পুরুষের সকল প্রকার বৈষম্যের অবসান ঘটে এবং নারীরা পুরুষের সম দায়িত্ব ও অধিকার নিয়ে দেশ গঠনে এগিয়ে আসেন। চীনের মহান নেতা চেয়ারম্যান মাও জেতুং বলেন, চীনের অর্ধেক আকাশ ধরে রেখেছে নারীরা। এর মাধ্যমে দেশ গঠনে নারীর অবদানকে পূর্ণ মর্যাদা দেয়া হয়।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির একশ বছরে দেশ গঠনে এবং শান্তি অর্জনে বিশাল দায়িত্ব পালন করেছে চীনের উইমেন রেড আর্মি। তরুণ প্রজন্মের কাছে আদর্শের প্রতীক এই নারী বাহিনী নিয়ে শুনুন হাবিবুর রহমান অভির প্রতিবেদন। 

তরুণ প্রজন্মের কাছে আদর্শের প্রতীক চীনের উইমেন রেড আর্মি

আকাশ ছুঁতে চাই ২৮_fororder_a2.jpg

আকাশ ছুঁতে চাই ২৮_fororder_a3.jpg

আকাশ ছুঁতে চাই ২৮_fororder_a1.jpg

যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত সাংবাদিক এডগার স্নো। চীনের ইতিহাসের সঙ্গে তার পরিচয় হয় দীর্ঘ ৮০ বছর আগে। বিখ্যাত বই 'রেডস্টার ওভার চায়না'র লেখক তিনি। বইটি থেকে সমসাময়িক চীনের লংমার্চ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় । এজন্য চীনের ইতিহাসের একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হিসেবে বিবেচনা করা হয় এডগার স্নোকে। তার বই থেকে জানা যায়, চীনের উইমেন রেড আর্মি লংমার্চের সময় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিল। অংশ নিয়েছিল বন্দুক যুদ্ধেও। এসময় আহত ব্যক্তিদের সেবা দেয়ার পাশাপাশি সবার স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা দিতেও কাজ করেছিলেন চীনের এই মহীয়সী  নারীরা। বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের পাশাপাশি যুদ্ধরত সেনারা যখন বিরতিতে যেতেন, তাদের মনোবল ধরে রাখার জন্য বিপ্লবী  গান, বাদ্যযন্ত্র বাজানোসহ সাংস্কৃতিক আয়োজনের ব্যবস্থা করতেন উইমেন রেড আর্মির সদস্যরা। তৎকালীন প্রতিকূল পরিবেশের বিরুদ্ধে লড়াই করে চীনা বিপ্লবের সফল ইতিহাসে সম্মানের জায়গা করে নেয় চীনের উইমেন রেড আর্মি। তাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে আজও মহান আদর্শের প্রতীক। যা অনুপ্রাণিত করে যাচ্ছে সংগ্রামী মানুষদের।

 

সুপ্রিয় শ্রোতা,  আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি সেইসব নারীর সঙ্গে যারা সাফল্যের আকাশ স্পর্শ করেছেন অথবা করতে চান। অনুষ্ঠানে আমাদের আজকের অতিথি শামীম আখতার। তিনি বাংলাদেশের নারী চলচ্চিত্র রির্মাতাদের মধ্যে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। এখন পর্যন্ত  ৩১টি তথ্যচিত্র ও তিনটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তিনি। ভার্চুয়ালি আজ তিনি যুক্ত হয়েছেন আমাদের সঙ্গে।

নারীর চোখে নারীর জীবন পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গীর চেয়ে অন্যরকম: শামীম আখতার

সাক্ষাৎকার

আকাশ ছুঁতে চাই ২৮_fororder_a4

আকাশ ছুঁতে চাই ২৮_fororder_a5

শামীম আখতার যখন চলচ্চিত্র নির্মাণে এগিয়ে এসেছিলেন তখন বাংলাদেশে  চলচ্চিত্র পরিচালনায় কোন নারী ছিলেন না।  তিনি সাংবাদিকতা করতেন। তারপর চলচ্চিত্র পরিচালনায় আসেন শিল্পসার্থক ছবি তৈরির প্রয়াস থেকে। শামীম আখতার মনে করেন চলচ্চিত্রে প্রত্যেক নির্মাতারই নিজস্ব ভাষা রয়েছে। একজন পরিচালক যদি নারী হন তাহলে তিনি  নারীকে ‘অবজেক্ট’ না করে, সাধারণত ‘সাবজেক্ট’ করে তোলেন। নারীর শরীরি উপস্থাপন বা বাণিজ্যিকীকরণ না করে তিনি নারীর জীবন সংগ্রামকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন।  ‘নারীর চোখে  নারীর জীবন পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গীর চেয়ে অন্যরকম’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। তার পরিচালিত সিনেমাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় হলো ‘শিলালিপি’। শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের জীবনভিত্তিক এ ছবিতে তিনি এই মহিয়সী নারীর জীবন সংগ্রাম ও স্বাধীনতার চেতনাকে তুলে ধরেছেন। শামীম আখতারের তথ্যচিত্রগুলোতেও মুক্তিযুদ্ধ প্রাধান্য পেয়েছে। ‘নারীর অবদানকে অনেক সময় পুরুষশাসিত সমাজে অদৃশ্য করে ফেলা হয় ‘ বলে মনে করেন তিনি।  চলচ্চিত্র নির্মাণে নতুন যে নারীরা আসছেন তাদের তিনি বিদেশী ভাবধারা গ্রহণ না করে দেশীয় বিষয়বস্তুর দিকে মনোযোগী হতে পরামর্শ দেন।

 

চীনের বিদেশী বন্ধু শতবর্ষী কমিউনিস্ট ইসাবেল ক্রুক

আকাশ ছুঁতে চাই ২৮_fororder_a6

কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার শতবর্ষ পালিত হচ্ছে এ বছর। এই শতবর্ষে চীনের অগ্রযাত্রায় অবদান রেখেছেন অনেক নিবেদিতপ্রাণ কমিউনিস্ট কর্মী। আছেন কয়েকজন বিদেশি কমিউনিস্টও। এমন একজন বিদেশি হলেন ইসাবেল ক্রুক।

একশ’ পাঁচ বছর বয়সী প্রবীণ ইসাবেল ক্রুক তার জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করেছেন চীনে। তিনি বর্তমানে কমিউনিস্ট পার্টি অব ব্রিটেনের অনারারি চেয়ার ওম্যান।  তিনি দেখেছেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীদের আত্মত্যাগ, কমিউনিস্ট পার্টির সংগ্রাম ও ক্রমবিকাশ। ১৯৪৯ সালের মহান কমিউনিস্ট বিপ্লবের প্রত্যক্ষদর্শীও তিনি। চীনের শিক্ষা ব্যবস্থায়ও তার অনেক অবদান রয়েছে। দেশটিতে ইংরেজি শিক্ষায় অন্যতম অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন ইসাবেল ক্রুক। ইসাবেল ক্রুক চল্লিশের দশকে চীনের ভূমিসংস্কার কাজ প্রত্যক্ষ করেছেন। সেসময় কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীরা কিভাবে গ্রামের সাধারণ কৃষকদের অনুপ্রাণিত করেছেন তা দেখেছেন তিনি। তিনি মনে করেন এইভাবেই কমিউনিস্ট পার্টির কাজগুলো সফল হয়েছে ।বেইজিং ফরেন স্টাডিজ ইউনিভারসিটির প্রফেসর ইসাবেল দেখেছন সিপিসির নারী কর্মীদের কাজ। তারা শিশু সন্তান ও সেলাইয়ের সামগ্রীসহ ঘুরে ঘুরে গ্রামের জনগণকে বুঝিয়েছেন। জনগণের অংশগ্রহণেই মার্কসীয় তত্ব সফলভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন এই প্রবীণ কমিউনিস্ট। ২০১৯ সালে ইসাবেল ক্রুক প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের কাছ থেকে রাষ্ট্রীয় ‘ফ্রেন্ডশিপ মেডেল’ গ্রহণ করেন। এই মেডেল হলো বিদেশিদের জন্য চীনের সর্বোচ্চ সম্মাননা।

সুপ্রিয় শ্রোতা এখন শুনবেন দেশাত্মবোধক গান- জ্যাকি চ্যান ও লিউ ইউয়ান ইউয়ানের কণ্ঠে। গানটির শিরোনাম হলো ‘দেশ’।

চীনে রয়েছে ৫৬টি জাতি। বিপ্লবের আগে অনেক এথনিক গ্রুপের মানুষের জীবন ছিল পশ্চাৎপদ। কমিউনিস্ট পার্টির সাম্প্রতিক একটি বড় সাফল্য হলো চীনকে সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্যমুক্ত করা। মিয়াও জাতির এক নারীর জীবনে কিভাবে বদলে গেছে দারিদ্র্য দূরীকরণের ফলে সেকথা শোনাচ্ছেন রওজায়ে জাবিদা ঐশী।

কুইচৌর একটি মিয়াও পরিবারের সুখী জীবনযাপন

আকাশ ছুঁতে চাই ২৮_fororder_a7

কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে চীন। আয়তনে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশটি দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সুপরিকল্পিত কর্মপরিকল্পনায় সমৃদ্ধির চূড়ান্ত শিখরে আরোহণ করেছে দেশটি। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে সবখানে। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সিপিসি সরকারের গৃহিত নানা পদক্ষেপের কারণে সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।  দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের কুইচৌ প্রদেশের ৩৫ বছর বয়সী এক নারী হে ল্যান। মিয়াও অ্যাথনিক গ্রুপের ল্যান জীবন সংগ্রামে চরম দারিদ্রের কষাঘাত থেকে বের হয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন। তার স্বামীকে নিয়ে হুয়াউ গ্রামে একটি ফার্ম হাউস পরিচালনা করছেন সফলতার সাথে। ২০০৭ সালে যখন তাদের বিয়ে হয় তখন তাদের মাসিক আয় ছিল ১০০ মার্কিন ডলারেরও কম। দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী এ পরিবারটির সরকার গৃহিত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পরিশ্রমের মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তিত হয়েছে।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব কিভাবে মানুষের জীবনে উন্নয়ন নিয়ে এসেছে চলুন শোনা যাক সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন

 

 

তিববতে কমিউনিজমের স্পর্শে বদলে গেল নারীর জীবন

আকাশ ছুঁতে চাই ২৮_fororder_a8

গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বদলে দেয় অসংখ্য মানুষের জীবন। ১৯৫৯ সালে তিব্বতের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের পর উন্নত জীবনে প্রবেশের অধিকার পান সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। এমনি একজন নারী সিতেন লামো। ৮৪ বছর বয়সী এই প্রবীণ নারী চীনের স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল তিব্বতের ইয়ারদোই টাউনশিপের কুইদেওগ গ্রামের বাসিন্দা। তিনি স্মৃতিচারণ করেন বিপ্লবের আগের সময়ের। তিনি ছিলেন দরিদ্র সার্ফ বা ভূমিদাস। সারা বছর তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হতো। এমনকি ছুটির দিনগুলোতেও বিশ্রাম নেয়ার মতো অবকাশ মিলতো না।  সবচেয়ে কষ্টকর দিক হলো তাকে জমির মালিককে খাজনা দিতে হতো উচ্চ হারে। ফসল ভালো হোক বা না হোক যে কোন প্রকারে মালিককে  মোটা অংকের খাজনা দেয়ার সেই কষ্টের কথা ভাবলে এখনও বেদনা বোধ হয় তার। সিতেন লামোকে এত কঠোর পরিশ্রম ও দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করতে হতো যে দুবেলা পেট ভরে খাওয়া অথবা নতুন কাপড় জোগাড় করাও ছিল অসম্ভব। ১৯৫৯ সালের পর সমাজতান্ত্রিক সরকার তাকে নিজস্ব বাসগৃহ, খামার এবং অন্যান্য সুবিধা দেয়। এইভাবে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পরিচালনায় বদলে গেছে সাধারণ মানুষের ভাগ্য, হাসি ফুটেছে তাদের মুখে।

প্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা। অনুষ্ঠানটি কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।আমাদের অনুষ্ঠান আপনারা সবসময় শুনতে পাবেন, ঢাকায় এফএম১০২ এবংচট্টগ্রামে এফএম৯০মেগাহার্টজে এবং অবশ্যই আমাদের ফেসবুক পেজে। জেনে নিন আমাদের ইমেইল অ্যাডরেস, cmg.bangla@gmail.com আমাদের ফেসবুক পেজfacebook.com/CRIbangla এবং facebook.com/CMGbangla এবং আমাদের সাক্ষাৎকারগুলো ইউটিউবে দেখতে পাবেন। youtube.com/CMGbangla.

আজএ পর্যন্তই।সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন।সিপিসির শতবর্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি। আবার কথা হবে।চাই চিয়েন।

 

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ুকুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া

চীনের উইমেন রেড আর্মি  বিষয়ে লেখা: হাবিবুর রহমান অভি

মিয়াও এথনিক গ্রুপ বিষয়ক লেখা :রওজায়ে জাবিদা ঐশী

অডিও সম্পাদনা:  রওজায়ে জাবিদা ঐশী এবং সহযোগিতায় হোসনে মোবারক সৌরভ।