চলচ্চিত্রে সিপিসি’র ইতিহাস
2021-07-01 15:32:24

আজ পহেলা জুলাই হচ্ছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিসি’র শততম জন্মবার্ষিকী। শত বছরে সিপিসি’র নেতৃত্বে চীনা জনগণ বিপ্লব, নির্মাণ এবং সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের মহান অনুশীলন চালিয়েছে। ফলে চীনা জনগণের মাথা তুলে দাঁড়ানো, ধনী হওয়া এবং শক্তিশালী হওয়ার ঐতিহাসিক উল্লম্ফন বাস্তবায়িত হয়েছে। এসব গৌরবময় সাফল্য চীনা চলচ্চিত্র জগতে অসীম অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

 

সিপিসি’র শত বছরের ইতিহাসে যে প্রাথমিক দায়িত্ব ছিল, তা হলো শুরুর উদ্দেশ্য ভুলে না গিয়ে চীনের বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া এবং চীনা জাতিকে মাথা তুলে দাঁড় করানো। চীনা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সিপিসি’র ইতিহাসের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। এর উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো বিপ্লবের ইতিহাস-সংক্রান্ত ব্যাপক মনোমুগ্ধকর গল্প। সিপিসি’র নেতৃত্বে কঠোর চীনা বিপ্লব যেন মহান কবিতার মতো। চীনা বিপ্লবের প্রক্রিয়ায় দেখা যায়, অসংখ্য বীর সিপিসি’র ইতিহাস আলোকিত করেছে, তাদের গল্প গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে চলচ্চিত্রের ধরণ তৈরি করেছে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলচ্চিত্র ব্যক্তিদের মানসিক অবস্থা সৃষ্টি করেছে।

 

সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর থেকে বিপ্লবের গল্প নিয়ে চীনা চলচ্চিত্র তৈরির নতুন রূপরেখা তৈরি হয়েছে। এসব চীনা চলচ্চিত্রে সাধারণ বিপ্লবীদের ওপর ফোকাস করা হয়। এক্ষেত্রে ‘চাং সি দে’ নামে চলচ্চিত্র একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। চলচ্চিত্রে চাং সি দেকে একজন বীর হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে তার আনন্দ, ক্রোধ, বেদনা ও দুঃখ বর্ণনা করা হয়।

 

দ্বিতীয়ত সে সময় সিপিসি’র নেতৃবৃন্দের ভাবমূর্তি বিপ্লবের ইতিহাস সংক্রান্ত চীনা চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র হয়ে ওঠে। ‘The Birth of New China’, ‘Chongqing Negotiations’, ‘ On the Mountain of Tai Hang’ এবং ‘The Hundred Regiments Offensive’সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র চীনা বিপ্লবের ইতিহাসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকসম্পন্ন ঘটনাকে প্রেক্ষাপট হিসেবে নির্মাণ করা হয়। এতে মা চে তোং, চৌ এন লাই, লিউ শাও চি, চু দে, তেং সিও পিং, পোং দে হুয়ে ও লিউ বো ছেংসহ সিপিসি’র নেতৃবৃন্দ ও সিনিয়র জেনারেলদের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, ফলে সিপিসি’র ইতিহাস তুলে ধরে চীনা চলচ্চিত্রের শূন্যতা পূরণ হয়েছে।

 

চীনের অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর ব্যয়বহুল দিক থেকে উচ্চ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি বিপ্লবের কাহিনী তুলে ধরার ক্ষেত্রে বিশাল অগ্রগতি অর্জন হয়েছে।

 

গত শতাব্দীর ৫০ বা ৬০ দশকে সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের পর এবং আঠারোতম জাতীয় কংগ্রেসের পর, এ তিনটি সময়ে তৈরি চীনা চলচ্চিত্রে যুগের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে।

 

সমাজতান্ত্রিক নির্মাণে নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলো সিপিসি’র একশ’ বছরের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং চীনা চলচ্চিত্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও বটে। ‘ Iron Men’ নামে চলচ্চিত্রে গত শতাব্দীর ৬০’র দশকে লৌহমানব বলে পরিচিত ওয়াং চিন সি ও চীনের তেল শ্রমিকদের ভাবমূর্তি এবং নতুন ঐতিহাসিক সময়ে নতুন প্রজন্মের তেল শ্রমিকদের মানসিক জগত্‌ও তুলে ধরা হয়। প্রতিরক্ষা ফ্রন্টে চীনের পারমাণবিক বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র ও উপগ্রহ শিল্প উন্নয়নের জন্য তেং চিয়া সিয়েনসহ চীনের একদল শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী সিপিসি’র আহ্বানে দীর্ঘসময় ধরে নাম লুকিয়ে মরুভূমিতে পরিশ্রম করেন এবং নিজেদের বাস্তব আচরণের মাধ্যমে ‘আকাশের চেয়ে সিপিসি’র খাত, জনগণের খাত ও মাতৃভূমির খাত আরো উঁচু’ এই চিন্তাধারা প্রকাশ করেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্মুখ সারিতে ইউয়েন লোং পিং এবং লি পাও কুওসহ বেশ কয়েকজন সারা জীবনে দেশের জন্য সেবা করার প্রচেষ্টা চালান। তাদের শরীরে চীনা বিজ্ঞানীদের মহৎ বৈজ্ঞানিক চরিত্র এবং মাতৃভূমির প্রতি তাদের সুগভীর ভালোবাসা ফুটিয়ে তোলা হয়। ‘চীনকে মুগ্ধ করার’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ইয়াং শান চৌ অবসরগ্রহণের পর শহরের আরামদায়ক জীবন ছেড়ে জন্মস্থানে ফিরে যান এবং তার নেতৃত্বে গ্রামবাসীরা বৃক্ষরোপণ করেন। সেই সময় এ বীরের নাম অনুযায়ী তৈরি চলচ্চিত্রে তাদের বাস্তব জীবনের গল্প তুলে ধরা হয়। গণতান্ত্রিক নির্মাণ প্রক্রিয়ায় সিপিসি’র একদল নেতার ভাবমূর্তি জনগণকে মুগ্ধ করে।

 

‘চিও ইউ লু’ নামে মুভিতে প্রধান চরিত্র চিও ইউ লু লান খাও জেলার চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিসি’র সম্পাদক ছিলেন। তিনি পরিশ্রম ও উষ্ণতা নিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে যান। ‘নিউ ইউ রু’ নামে মুভিতে প্রধান চরিত্র নিউ ইউ রু ছিলেন ইনারমঙ্গোলিয়ায় চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিসি’র সম্পাদক। তিনি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ইনারমঙ্গোলিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে পরিশ্রম করেছেন। ‘রেন ছাং সিয়া’ নামে মুভিতে প্রধান চরিত্র রেন ছাং সিয়া ছিলেন তোংফোং শহরের গণনিরাপত্তা ব্যুরোর প্রধান। অপরাধ প্রতিরোধের লড়াইয়ে তিনি প্রাণ হারান।

 

তারা হচ্ছেন লাখ লাখ সমাজতান্ত্রিক নির্মাতাদের প্রতিনিধিত্বকারী মানুষ। তারা নিজ নিজ বাস্তব আচরণের মাধ্যমে সিপিসি’র ইতিহাসে উজ্জ্বল অধ্যায় সৃষ্টি করেছেন। সিপিসি’র এসব শ্রেষ্ঠ সদস্যদের নেতৃত্বে চীনা জনগণের উঠে দাঁড়ানো থেকে ধনী হওয়ার ঐতিহাসিক উল্লম্ফন বাস্তবায়িত হয়েছে।

সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতি জারি করা এবং চীনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতান্ত্রিক আধুনিক দেশ গঠন করা হলো সিপিসি’র শত বছরের ইতিহাসের তৃতীয় অংশ।

সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ না থাকলে শক্তিশালী আধুনিক চীন থাকতো না। সংস্কারের মহান শিল্প আবার তুলে ধরা এবং সংস্কারের অগ্রগামীদের প্রশংসা করা হলো এই সময় চীনা চলচ্চিত্রের আরেকটি প্রধান সুর।

 

চীনের সংস্কার চীনের গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু হয়, তাই গ্রামাঞ্চলে সংস্কারের গল্প চলচ্চিত্রের অপরিহার্য বিষয়। ১৯৮৩ সালে ‘Our niubaisui’ নামে মুভিতে গ্রামাঞ্চলে লিউ বাইসুই নামে সিপিসি’র এক সদস্যের নেতৃত্বে গ্রামবাসীরা পরিশ্রমের মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্ত হওয়া এবং ধনী হওয়ার গল্প বলা হয়। ‘Our Veterans’ নামে চলচ্চিত্রে ফাং আ হু নামে জনৈক অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকের জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার পর নানা প্রতিবন্ধকতা দূর করে নানা চাপ অতিক্রম করে গ্রামীণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করার মধ্যমে গ্রামবাসীদের নিয়ে ধনী হওয়ার পথচলার কাহিনী তুলে ধরা হয়। এ দু’টি চলচ্চিত্রে সাফল্যের সঙ্গে নিউ বাই সুই এবং ফাং আর হু গ্রামাঞ্চলে সংস্কারের নেতৃস্থায়ী বা অগ্রগামী ব্যক্তির ভাবমূর্তি তুলে ধরে।

 

শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংস্কারের ক্ষেত্রে ‘Blood Is Always Hot’ নামে মুভিতে একটি প্রিন্টিং এবং ডাইং কারখানার প্রধানের নেতৃত্বে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সংস্কার এগিয়ে নেওয়ার কাহিনী প্রকাশিত হয়। এতে একদিক থেকে সিপিসি’র নেতৃত্বে নতুন সময় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রক্রিয়া তুলে ধরা হয়।

‘ঘণ্টার শব্দ’ নামে আরেকটি মুভিতে মোটর কারখানার সিপিসি’র কমিটির সম্পাদক চিও কুয়াং পু হচ্ছেন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সংস্কারকারীর আরেকটি ক্ল্যাসিকাল ভাবমূর্তি।

 

সিপিসি’র অষ্টাদশ জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে চীনের নতুন যুগ শুরু হয়। নতুন যুগের চিন্তাধারা তুলে ধরা অনেক গল্প বড় পর্দায় প্রদর্শিত হয়। দারিদ্র্যবিমোচন ও দারিদ্র্যমুক্ত হলো এসব চলচ্চিত্রের প্রধান বিষয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাহিনী শক্তিশালী করে তোলা, সংস্কার এবং দুর্নীতিদমনসহ বিভিন্ন বিষয়ের চলচ্চিত্র দর্শকদের চোখের সামনে এসেছে। এসব চলচ্চিত্রে আমরা নতুন যুগে সিপিসি’র সদস্যদের স্বপ্ন, বিশ্বাস, ইচ্ছাশক্তি ও চরিত্র দেখেছি, আমরা দেখেছি অপরাজেয় চীনা শক্তি এবং চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের উজ্জ্বল ভবিষ্যত। লিলি/তৌহিদ/শুয়ে