সিপিসির ইতিহাস: বিপ্লবী লি তা চাওয়ের জাপানে অধ্যয়নকাল
2021-06-30 16:55:02

জুন ৩০: বিংশ শতকের শুরুতে লি তা চাওসহ চীনের অনেক বিপ্লবী জাপানে গিয়ে পড়া লেখা করেন। সেখানে তাঁরা মার্কসবাদের দীক্ষা গ্রহণ করে চীনে ফিরে এসে তা প্রচার করেন। 

যারা দেশ ও জনগণকে বাঁচানোর পথ খুঁজে পেতে জাপানে গিয়ে পড়াশুনা করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সিপিসি প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণকারী ছেন তু সিউ, লি তা চাও, লি তা, লি হান চুন, তং পি উ, চৌ এন লাই, এবং ছেন তাও ওয়াং। তাঁরা সিপিসি গঠনে ও বিপ্লবের প্রাথমিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছেন। সিপিসির ইতিহাস ও দলিল গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষক উ ওয়েই ফেং বলেন, “মার্কসবাদের বই অনুবাদ করা, মার্কসবাদের প্রচারণা চীনে এগিয়ে নেওয়া, জনগণের সংগ্রামে অংশগ্রহণ,সিপিসি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় মার্কসবাদ একাডেমিক গবেষণা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা , সিপিসির প্রথম পর্যায়ের সংস্থা প্রতিষ্ঠা, এবং সিপিসির প্রথম জতীয় কংগ্রেসের আয়োজনে জাপান-শিক্ষিত ছাত্র-ছাত্রীরা মৌলিক ভূমিকা পালন করেছেন এবং দারুন অবদান রেখেছেন।”

লি তা চাও হলেন চীনের সবচেয়ে প্রথম মার্কসবাদী। তিনি হলেন সিপিসির অন্যতম মৌলিক প্রতিষ্ঠাতা । তিনিও সিপিসির প্রথম পর্যায়ের জাপানে শিক্ষা নেওয়া গ্রুপের মধ্যে একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তিনি ১৯১৪ সালের জানুয়ারিতে বৃত্তি নিয়ে জাপানে পড়ালেখা করতে যান। সে বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি টোকিও ওয়াজেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিভাগে ভর্তি হন। 

লেখাপড়ার সময় তিনি সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারাকে সমর্থনকারী অধ্যাপক আবে ইসোর সাথে পরিচিত হন। ওই অধ্যাপক লি তা চাওয়ের দেশ রক্ষার ধারণাকে অনেক প্রভাবিত করেন। 

লি তা চাও সম্পর্কে গবেষণা করেন, জাপানের এমন একজন বিখ্যাত বিশেষজ্ঞ হলেন অধ্যাপক কাওয়ারিজি ফুমিহিকো। তিনি বলেন, “লি তা চাওয়ের স্কুল রিপোর্টে আবে ইসোর কাছে পড়া কোন কোর্সের রেকর্ড নেই। কিন্তু তিনি হয়তো তখন আবে ইসোর ঐচ্ছিক কোর্স তথা ‘শহুরে সমস্যাসমূহ’ ও “সামাজিক নীতি’ অধ্যয়ন করেছেন। এছাড়া, ইয়াং ম্যান’স খৃষ্টান সমিতির কর্মকাণ্ডে দুজন ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। আবে ইসোর সমাজ উন্নয়ন-বিষয়ক চিন্তাধারা লি তা চাওকে অনেক প্রভাবিত করেছে।”

কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইশিকাওয়া ইয়োশিহিরো বলেন, জাপানে অধ্যয়নকালে পাঠ্যক্রমের বাইরেও লি তা চাও ব্যাপক জ্ঞান অর্জন করেছেন। 

তিনি বলেন,“জাপানে লেখাপড়াকালে লি তা চাও তথ্যমাধ্যমে প্রকাশিত সব ধরনের প্রবন্ধ পড়েছেন।  তিনি তাঁর বইসমূহ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারকে দান করেছেন।এসব বই জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখার ওপর লিখিত। তাতেও প্রমাণিত হয় যে, লি তা চাও জাপানে লেখাপড়াকালে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স নিয়ে অধ্যয়ন করতেন তা নয়, বরং জাপানের সব ধরনের জ্ঞান ও চিন্তাধারা রপ্ত করেছেন।”

জাপানে লেখাপড়ার সময়ে লি তা চাও ইতিবাচকভাবে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯১৫ সালে ইউয়ান শি খাইকে চীনে আবারও রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সহায়তার বিনিময়ে ২১-দফা দাবি জানায় জাপান। তার সবগুলো দফাই চীনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ছিল। ফলে জাপানে অধ্যয়নরত চীনা শিক্ষার্থীরা সে বছরের জানুয়ারি মাসের ১৮ তারিখে জাপানি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। তিন হাজারেরও বেশি জাপানে অধ্যয়নরত চীনা শিক্ষার্থী মিলে ‘জাপানে অধ্যয়নরত চীনা শিক্ষার্থী সমিতি’ প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের সমর্থনে লি তা চাও সারা দেশের স্বদেশীদের প্রতি সতর্ক চিঠি লিখেন। এতে ইউয়ান শি খাইয়ের সমালোচনা এবং জাপানি সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করা হয়। 

জাপানের আইচি প্রিফেকচারাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপক কাওয়ারিজি ফুমিহিকো মনে করেন, জাপানে অধ্যয়ন লি তা চাওকে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে চালিকাশক্তি সরবরাহ করেছে। 

তিনি বলেন, “জাপানে লেখাপড়াকালে তিনি অনেক ধরনের তত্ত্ব ও চিন্তাধারার সংস্পর্শে এসেছেন। সেসব দেশে ফেরার পর তাঁকে মার্কসবাদ প্রচারে অনেক সহায়তা করেছে। জাপানে তিনি চাং সি চাও এবং ছেন তু সিউসহ অনেক সমমনা বন্ধুদের সাথে মিশেছেন। জাপানে লেখাপড়া ও বিপ্লব আন্দোলনে অংশ নেওয়ার প্রক্রিয়ায়, লি তা চাওয়ের দেশপ্রেমের আগ্রহ আরো শক্তিশালি হয়। আমি মনে করি, এর সবই ছিল তাঁর বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার চালিকাশক্তি।”

সিপিসির ইতিহাস ও দলিল গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষক উ ওয়েই ফেং বলেন, লি তা চাও এবং ছেন তু ছিউ দেশপ্রেম বিষয়ে অনেক মতৈক্যে পৌঁছান। পাশাপাশি, তাঁরা দেশপ্রেম বিষয় নিয়ে অনেক মত বিনিময় করেন। এসব ছিল পরবর্তীতে তাঁদের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে একে অপরকে সহায়তা ও নতুন সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলার মূল-ভিত্তি। 

তিনি বলেন, “তাঁদের এসব বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ নতুন সাময়িকী “নতুন তরুণ-তরুণী” প্রকাশের আগে সংঘটিত হয়। এটিও নতুন সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়েছে। ছেন তু সিউ এবং লি তা চাওয়ের সাক্ষাত সিপিসি প্রতিষ্ঠার জন্য ঐতিহাসিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।”

দেশে ফিরে আসার পর, লি তা চাও ইতিবাচকভাবে নতুন সাংস্কৃতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। রাশিয়ার ‘দ্যি অক্টোবর বিপ্লবের’ পর, তিনি দেখতে পান রাশিয়ার শ্রমিক ও কৃষকরা সমাজের হর্তাকর্তায় পরিণত হন। তা থেকেও লি তা চাও আশার আলো দেখেন।

উ ওয়েই ফেং বলেন, “লি তা চাও হলেন চীনে ‘দ্যি অক্টোবর বিপ্লবের’পতাকা তুলে ধরা প্রথম ব্যক্তি। তিনি হলেন চীনে সর্বপ্রথম মার্কসবাদ প্রচারকারী। তিনি পৃথকভাবে ‘দ্য ভিক্টোরি অব বলশেভিজম’ ও ‘দ্য ভিক্টোরি অব কমন পিপল’সহ নানা প্রবন্ধ লিখেন। লি তা চাও তাঁর জীবনকে চীন বিষয়ে গবেষণা ও মার্কসবাদ প্রচার ও বাস্তবায়নে উতসর্গ করেন। তিনি শুধু চীনের বিপ্লবের প্রথম কমিউনিস্ট বিপ্লবী নয়, বরং সিপিসির প্রতিষ্ঠাতাও।” 

জুন ৩০ , ২০২১
চায়না মিডিয়া গ্রুপ(সিএমজি) থেকে আকাশ