চীনের আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য খুচরা-বিক্রয়ে আমদানির পরিমাণ একশ’ বিলিয়ন ছাড়াল, আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য শক্তিশালী হচ্ছে
2021-06-28 12:53:53

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যের আমদানি-রপ্তানির মাত্রা ধারাবাহিকভাবে এবং দ্রুততার সাথে বাড়ছে। সেসঙ্গে দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্যের উন্নয়ন নতুন মাত্রা লাভ করেছে। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ চীন সরকারের ছয়টি বিভাগ যৌথভাবে ‘আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য খুচরা-বিক্রয় আমদানির পাইলট প্রকল্প সম্প্রসারণ, ও কঠোরভাবে চাহিদার তত্ত্বাবধান কার্যকর সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য খুচরা-বিক্রয় আমদানির পাইলট প্রকল্পকে বর্তমানে সারা দেশে চালু সকল অবাধ বাণিজ্যিক পরীক্ষামূলক অঞ্চল, আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য সামষ্টিক পরীক্ষামূলক অঞ্চল, বহুমুখী কর-সুরক্ষিত অঞ্চল, আমদানি বাণিজ্য ত্বরান্বিতকরণ সৃজনশীল দৃষ্টান্তমূলক অঞ্চল, কর-সুরক্ষিত পণ্য স্থানান্তর কেন্দ্র থেকে বের করে শহর এলাকায় সম্প্রসারিত করা হবে। এর ফলে এ খ্যাতে কী ধরণের প্রভাব পড়বে এবং বর্তমানে আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য উন্নয়নের প্রবণতা কেমন? এসবের জবাব খুঁজে পেতে চেষ্টা করব আমরা আজকের অনুষ্ঠানে।

 

আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য খুচরা-বিক্রয়ের আমদানি আমাদের হাতের নাগালে। চীনের ভোক্তারা আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিদেশি পণ্য কেনাকাটা করে আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য খুচরা-বিক্রয়কে প্রভাবিত করে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালে চীনের আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য আমদানির খুচরা-বিক্রয় পরিমাণ ১শ’ বিলিয়ন ইউয়ান অতিক্রম করে।

 

নতুন বাণিজ্যিক কার্যক্রমের উন্নয়ন নীতির সমর্থন এ উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বেইজিংসহ ৩৭টি শহরে আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য আমদানি খুচরা-বিক্রয়ের ব্যক্তিগত ব্যবহার পণ্যকে আমদানি পণ্য হিসেবে গণ্য করে তার জন্য নতুন এক তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। ২০২০ সাল থেকে এ ব্যবস্থা ৮৬টি শহরে এবং পুরো হাইনান দ্বীপে সম্প্রসারিত হয়।

 

‘ব্যক্তিগত ব্যবহারের পণ্যকে আমদানি পণ্য হিসেবে তত্ত্বাবধান করা’ মানে পুরো প্রক্রিয়াকে আরো সহজ, ও তার সরবরাহ আরো দ্রুত করা। এর ফলে পরীক্ষামূলকভাবে চালু চীনের আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য আমদানি খুচরা-বিক্রয় দ্রুত বাড়ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কাও ফেং বলেন, ২০১৮ সালের নভেম্বরে পরীক্ষামূলকভাবে আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য আমদানি খুচরা-বিক্রয় চালু করণে দেশটির বিভিন্ন বিভাগ ও স্থানীয় সরকার অব্যাহতভাবে যথাযথ নীতিগত ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছে। পাশাপাশি, সংকট প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ এবং তত্ত্বাবধান ব্যবস্থাও ধাপে ধাপে সুসংহত করা হয়। তত্ত্বাবধান ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী, কার্যকর, ও বড় মাত্রায় বাস্তবায়ন করা হবে।

 

পণ্যভোগ উন্নতির পদক্ষেপ অব্যাহতভাবে দ্রুত হবার সঙ্গে সঙ্গে চীনা ভোক্তাদের উন্নতমানের আমদানি পণ্যের প্রতি চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আরো বেশি ভোক্তা বাসায় বসে সারা পৃথিবীর পণ্য কিনতে চান। ফলে আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য আমদানি খুচরা-বিক্রয় উন্নয়ন আরো বিশাল হয়েছে। পরবর্তীতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন তত্ত্বাবধান করবে, যাতে আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যের খুচরা-বিক্রয় আমদানি মানসম্পন্ন, সুষ্ঠু ও নিরন্তর উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা যায়।

 

চলতি বছরের মার্চ মাসে চীনের প্রথম আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য মেলা ফু চিয়ান শহরে অনুষ্ঠিত হয়। দুই হাজার ৩৬৩টি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিয়েছে। এছাড়া বিশ্বের ৩৩টি আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য প্ল্যাটফর্মকে তাতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অসমাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবারের মেলায় উদ্দিষ্ট লেনদেনের পরিমাণ সাড়ে ৩ বিলিয়ন ইউয়ান ছিল। শুল্ক বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২০ সালে চীনের আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যে আমদানি-রপ্তানি ছিল ১.৬৯ ট্রিলিয়ন ইউয়ান, যা ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় ৩১.১ শতাংশ বেশি। আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য ক্রমেই বৈদেশিক বাণিজ্য উচ্চমানের উন্নয়নের নতুন ইঞ্জিনে পরিণত হয়েছে।

 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গবেষণালয়ের আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক জাং চিয়ান পিং বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি বজায় রেখে ছিল এবং চীনের বৈদেশিক বাণিজিক উন্নয়নে স্পষ্ট অবদান রাখে। বিশেষ করে, ২০২০ সালের কঠিন চ্যালেঞ্জের সময় চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যে এর ইতিবাচক প্রভাব চোখে পড়ার মতে। এটি আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যের উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত। আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যের নিম্ন মূল্য ও উচ্চ কার্যকারিতার প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পছন্দ। বৈদেশিক বাণিজ্যের সৃজনশীল উন্নয়নের পথিকৃৎ। বৈদেশিক প্রতিষ্ঠান মহামারী মোকাবিলায় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে।

 

২০২০ সালে চীনে নতুন করে ৪৬টি আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য সামষ্টিক পাইলট প্রকল্প চালু হলে এর মোট সংখ্যা ১০৫টিতে পৌঁছায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য পাইলট প্রকল্পে পরিষেবা, বাণিজ্যিক কার্যক্রম, ও সৃজনশীলতাকে উত্সাহিত করে ডিজাইন, উত্পাদন, বিপণন, বিনিময় ও বিক্রয়োত্তরসহ নানা আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যের পূর্ণাঙ্গ চেইন উন্নয়ন পুনর্বিন্যাস সমর্থন করার মাধ্যমে বৈদেশিক উন্মুক্তকরণের নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। বিভিন্ন জায়গায় অফলাইন শিল্প পার্ক নির্মাণ করে ভালো প্রতিষ্ঠানকে বাজারে আকৃষ্ট করছে। পাশাপাশি, নিকটবর্তী নির্মাতা ও বিপণন প্রতিষ্ঠানকে প্রেরণা দিয়ে চলছে। বর্তমানে বিভিন্ন আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য সামষ্টিক পাইলট অঞ্চলে ৩৩০টিরও বেশি শিল্প পার্ক নির্মিত হয়েছে। তাতে তিন মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।

 

শুল্ক-ক্লিয়ারেন্সের দিক থেকে রাষ্ট্রীয় শুল্ক প্রশাসন সৃজনশীলতার সাথে আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য বি-টু-বি রপ্তানি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছে। পাশাপাশি, নতুন করে আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য বি-টু-বি সরাসরি রপ্তানি, এবং আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য রপ্তানির বৈদেশিক গুদাম বাণিজ্য পদ্ধতি স্থাপন করে। বর্তমানে বেইজিংসহ ২২টি স্থানে সরাসরি শুল্ক পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে। সেসব স্থানে শুল্ক ক্লিয়ারেন্স আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা সহজ করা হয়েছে। এসব স্থানে প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ‘একবার নিবন্ধন, এক পয়েন্ট সংযুক্তি, অগ্রাধিকার চেক, শুল্ক ট্রানজিট অনুমোদন ও রিটার্ন সুবিন্যস্ত’সহ বিভিন্ন শুল্ক সুবিধা প্রদান করা হয়।

 

এছাড়া ক্লাউড হিসাব, বিগ ডাটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এবং ব্লকচেইনসহ বিভিন্ন ডিজিটাল প্রযুক্তি আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যের ব্যবহারিক উন্নতি ত্বরান্বিত করেছে।

 

বাজারের চাহিদা এবং সময়োপযোগী নীতিমালা আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্য শক্তিশালী করছে। বর্তমানে চীনের আন্তঃসীমান্ত ই-বাণিজ্যের বৈদেশিক গুদামের সংখ্যা এক হাজার ৮ শ’র বেশি। ২০২০ সালে এর বৃদ্ধির হার ছিল ৮০ শতাংশ এবং আয়তন এক কোটি ২০ লাখ বর্গমিটার ছাড়িয়ে যায়।

 

প্রেমা/এনাম