সিপিসি’র জন্মশতবার্ষিকী ও মানবাধিকার রক্ষায় চীনের অর্জন
2021-06-26 17:14:28

চলতি বছর চীনের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিসি’র জন্মশতবার্ষিকী। মহামারি পরবর্তী বিশ্বে সিপিসি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এগিয়ে নেওয়া এবং শান্তি, উন্নয়ন, সাম্যতা, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষায় চীনা জনগণকে নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করছে। দীর্ঘ এ সময়ে দেশের মানবাধিকার খাতেও উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জিত হয়েছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

 

অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত একসূত্রে গাঁথা। বর্তমানের সমস্যাগুলো যথাযথভাবে মোকাবিলার মাধ্যমেই ভবিষ্যতের জন্য ভালো প্রস্তুতি নেওয়া যায়। ঠিক এভাবেই বর্তমান পরিস্থিতির অনেক কিছুই নির্ভর করছে অতীত কর্মের ওপর। এজন্যই ইতিহাসের গভীর অধ্যয়ন খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের বৃহত্তম মার্কসবাদী শাসকদল চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিসি ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। চীনা জনগণের জন্য সুখ এবং চীনা জাতির মহান পুনরুত্থানের স্বপ্ন বাস্তবায়নে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে সিপিসি। তারই সফলতার এক অনন্য নিদর্শন প্রাণঘাতি মহামারি প্রতিরোধে চীনের সফলতা। ঠিক একইভাবে দেশের মানবাধিকার খাতেও চীন সরকার উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে।

গত বৃহস্পতিবার চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য-কার্যালয় ‘মানবাধিকার রক্ষায় সিপিসি’র প্রচেষ্টা’ শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। এতে হালনাগাদ নানা পরিসংখ্যান উঠে এসেছে। চীন-বিরোধী নানা প্রচারণার মধ্যে এ পরিসংখ্যান যেন বাস্তব চীনকে তুলে ধরেছে। এবার আমরা শ্বেতপত্রের উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয়ে নজর দেবো।

শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, গত ১০০ বছরে সিপিসি মানবাধিকার রক্ষার কাজে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করেছে।

শ্বেতপত্র বলছে,  গত ১০০ বছর ধরে সিপিসি ‘সবকিছুর ওপর মানুষ সত্য’—এ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে, চীনের বাস্তবতার সঙ্গে মানবাধিকারের সাধারণ নীতিকে সংযুক্ত করে লালন করে এসেছে। সিপিসি ব্যক্তির অস্তিত্ব রক্ষা ও উন্নয়নকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে গণ্য করে থাকে। মানুষের সুখী ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করাই সিপিসি’র কাছে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার।

শ্বেতপত্রে বলা হয়, ১৯৪৯ সালে নয়াচীন প্রতিষ্ঠার সময়, দেশে নিরক্ষর লোকের সংখ্যা ছিল ৮০ শতাংশ। আর ২০২০ সালে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ২.৬৭ শতাংশে। তা ছাড়া, চীনে এখন ৯ বছরে ফ্রি বাধ্যতামূলক শিক্ষা গ্রহণকারীর সংখ্যা  ৯৫.২ শতাংশ। এসময় চীনাদের গড় আয়ু ১৯৪৯ সালের ৩৫ বছর থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে ৭৭.৩ বছরে উন্নীত হয়। আর চীনের বাসিন্দারদের মৌলিক সাস্থ্যসূচক উচ্চ ও মধ্যম আয়ের দেশের গড় মানের চেয়ে উচ্চ।

শ্বেতপত্রে আরও বলা হয়, বিগত ১০০ বছর ধরে সিপিসি শান্তিপূর্ণ ও অভিন্ন উন্নয়নের পথে অবিচল থেকেছে। বৈশ্বিক মানবাধিকার উন্নয়নে সিপিসি চীনা মডেল উপস্থাপন করেছে। বিশ্বে শান্তি ও অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য, ১৯৯০ সাল থেকে চীন আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেওয়া শুরু করে। এ পর্যন্ত, চীন সুদান, লেবানন, কম্বোডিয়া, লিবিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে মোট ৪০ হাজারেরও বেশি শান্তিরক্ষী পাঠিয়েছে এবং প্রায় ৩০টি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করেছে। বতর্মানে চীন হচ্ছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের  মধ্যে শান্তিরক্ষী পাঠানো বৃহত্তম দেশ।

পাশাপাশি, চীন অন্য দেশসমূহকে সহায়তা দেওয়া শুরুর পর বিগত ৭০ বছরে, মোট ১৬৬টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে সহায়তা প্রদান করেছে। এ সময় মোট ৬ লাখেরও বেশি চিকিৎসক এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, ক্যারিবীয় অঞ্চল ও ওসেনিয়ার ৬৯টি দেশে পাঠিয়েছে চীন এবং চিকিৎসা-সহায়তা দিয়েছে।

 

বর্তমানে চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং বিশ্বের বৃহত্তম মধ্যম আয়ের জনসংখ্যার সমন্বিত একটি সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলেছে। এক সময়ের দরিদ্র দেশ চীনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলি সিপিসি’র নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছে। সিপিসি’র নেতৃত্বে চীনকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলেছে। দেখাচ্ছে। চিনের প্রেসিডেন্ট ও সিপিসি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বহুবার পার্টির সংগ্রামের ইতিহাস মনে রেখে ঐতিহাসিক মিশনকে এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে জোর গুরুত্ব দিয়েছেন।

 

মোহাম্মদ তৌহিদ; চায়না মিডিয়া গ্রুপ, বেইজিং।