রোববারের আলাপন-চীনের প্রথম প্রতিবন্ধীর এভারেস্ট জয়ের দুঃসাহসী গল্প
2021-06-25 22:53:28

আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রোববারের আলাপন’। আপনাদের সঙ্গে আছি এনাম এবং আকাশ।

বন্ধুরা, সম্প্রতি আমরা একজন চীনা দৃষ্টিহীন পর্বতারোহীর এভারেস্ট জয়ের গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। তিনি ছিলেন চীনের প্রথম দৃষ্টিহীন এভারেস্ট জয়ী। তবে, তিনিই চীনের একমাত্র এবং প্রথম এভারেস্ট জয়ী প্রতিবন্ধী নয়। তবে এখানে বলে রাখতে চাই যে, এভারেস্টকে চীনারা চুমুলংমা বলে ডেকে থাকেন। 

এনাম: তাহলে কোন চীনা প্রতিবন্ধী প্রথমে চুমুলংমা জয় করেন? 

আকাশ: আমরা আজকে এ বীরের গল্প আমাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করব, কেমন?

এনাম: বন্ধুরা, ২০১৮ সালের ১৪ মে, ঊনসত্তর বছর বয়সী সিয়া পো ইউ নকল দুই পায়ে ভর করে এভারেস্টের দক্ষিণ ঢাল ধরে তার সর্বোচ্চ শৃঙ্গে উঠেন। তিনি হলেন চীনের প্রথম প্রতিবন্ধী এভারেস্ট জয়ী। 

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমার গোটা জীবন হচ্ছে চ্যালেঞ্জে ভরপুর।” তিনি সবাইকে অধ্যবসায়ের শক্তিতে বিশ্বাস করতে বলেন।

এভারেস্ট জয়ের লক্ষ্যে তিনি ৪৩ বছর প্রস্তুতি নিয়েছেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ছিং হাই প্রদেশের একজন তরুণ ফুটবল দলের সদস্য ছিলেন। তারপর তিনি চীনের জাতীয় পর্বতারোহী দলে প্রবেশের যোগ্যতা অর্জন করেন। এক বছর পর তিনি দলটির অন্য সদস্যদের সাথে চুমুলংমা অভিযান শুরু করেন। সে বার তিনি এভারেস্ট পাহাড়ে উঠেন। চুড়ায় উঠার পর নিচে নামার পথে দলটির অন্য একজন সদস্যকে তিনি তাঁর নিজের স্লিপিং ব্যাগ দিয়ে দেন। প্রচণ্ড ঠান্ডার কারনে তাঁর দুটি পা আঘাতপ্রাপ্ত হয়। পরে দুটো পাই কেটে ফেলতে হয়। 

তিনি বলেন, “তখন আমার বয়স মাত্র বিশ বছরের একটু বেশি, দুটি পা হারিয়ে আমি খুব মর্মাহত হয়। তারপর একজন জার্মান চিকিত্সকের সাথে আমার দেখা হয়। তিনি বলেন, আমি আবার হাটতে পারব, পাহাড়ে উঠতেও পারব। তখন আমি আমার জীবনে আবার আশার আলো দেখতে পাই।” 

দুটি পা হারানোর পর, তিনি আবার ক্যান্সারের সাথেও লড়াই করেন। অনেক বড় দুর্যোগের সামনেও তিনি কখনো মাথা নতো করেন নি। 

অনেক বছর ধরে তিনি তাঁর প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখেন। তিনি মোট চার বার এভারেস্টে উঠার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হন। সর্বশেষ বার তিনি এভারেস্টের চূড়ার চেয়ে মাত্র এক শো মিটার দূরে ছিলেন। কিন্তু প্রবল বাতাস ও তুষাপাতের কারণে তিনি আর সামনে এগুতে পারেন নি। তবে, তিনি থেমে যান নি। সর্বমোট ৫ত বার চেষ্টা করে তিনি সফল হন। তিনি জানান, তিনি জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য দেখেছেন। মেঘ তাঁর পায়ের নিচে খেলা করছিল। সূর্যের সোনালী  আলো যেন তখন সারা পৃথীবিতে খেলা করছিল।
অনেক বছর নিয়মিত শরীর চর্চার মাধ্যমে ৭০ বছর বয়সী সিয়া তাঁর শরীরের সুস্থতা ধরে রেখেছেন। তিনি বলেন, “প্রত্যেকে তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে বয়স্ককাল কাটান। যদি মনটা ভাল, ও আরামদায়ক থাকে, তাহলে তা খুবই ভাল, তাইনা? আমার বয়স্ককাল কাটানোর পদ্ধতি হচ্ছে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা। আমি হয়তো এমন বৈশিষ্ট নিয়েই জন্মেছি।” 
তাঁর ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে তিনি জানান, “আমার সারা জীবন  চ্যালেঞ্জে ভরপুর ছিল। এজন্য আমি নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চাই। আমি একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছি। এর লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিবন্ধী শিশুদের সাহায্য করা। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং তাদের পরিবারের ওপর চাপ কমানো।”