গত ১৬ জুন ‘ছিউ শি’ পত্রিকায় চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ ‘ইতিহাসের আয়নায় দেখলে নিজের চাওয়া স্পষ্ট হবে; ইতিহাস জানলে পার্টি ও দেশের প্রতি ভালোবাসা জাগবে’ প্রকাশিত হয়েছে।
প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ইতিহাস সবচেয়ে ভাল পুস্তক। আমাদের পার্টি ও দেশের ইতিহাস ভাল করে জানলে, দেশের বর্তমান অবস্থান কী ও উন্নয়নের গতিধারা ভবিষ্যতে কোন দিকে যাবে এবং কেন চীনা কমিউনিস্ট পার্টি দেশের উন্নয়নে এতো গুরুত্বপূর্ণ—তা জানা যাবে। এ ইতিহাস জানলে জনগণের মনে দেশ-প্রেম, পার্টি-প্রেম এবং সমাজতন্ত্র-প্রেম জেগে ওঠবে।
প্রবন্ধে আরও বলা হয়েছে, ইতিহাস জানলে বোঝা যাবে যে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব কেন দেশের জন্য সৌভাগ্যস্বরূপ। কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব ছাড়া চীন আজকের মতো অগ্রগতি অর্জন করতে পারত না এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আজকের স্থান পেতো না। ইতিহাস জানলে পার্টি সম্পর্কে জনগণের জানাশোনা, আস্থা ও বিশ্বাস আরও বেড়ে যাবে।
২. জি-সেভেনের ইশতাহারে সিনচিয়াং ও হংকং নিয়ে সমালোচনার তীব্র নিন্দা চীনের
জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলন ব্রিটেনের কর্নওয়ালে গত সপ্তাহে শেষ হয়েছে। সম্মেলন শেষে প্রকাশিত এক যৌথ ইশতাহারে, আগামি বছরের মধ্যে গোটা বিশ্বে ১০০ কোটি ডোজ কোভিড-১৯ টিকা সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
তবে, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরহিস ও ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউনসহ বিভিন্ন নেতা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, জি-সেভেন খুবই দেরিতে প্রতিশ্রুতি দিল এবং ১০০ কোটি ডোজ টিকা যথেষ্ট নয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আদ্হানম বলেন, বর্তমানে কোভিড-১৯ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার গতি বৈশ্বিক টিকা বিতরণের গতির চেয়ে দ্রুততর। বিশ্বে প্রতিদিন ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ এই মহামারীতে মারা যাচ্ছেন। এ জন্য টিকা এখনই দরকার, আগামি বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করা ঠিক হবে না।
এদিকে, সম্প্রতি জাতিসংঘের একজন সাবেক কর্মকর্তা ম্যাকলড কর্ক এক সাক্ষাত্কারে জি-সেভেনের প্রতিশ্রুতিকে ‘ছোট পদক্ষেপ’ বলে আখ্যায়িত করেন।
বিভিন্ন তথ্যমাধ্যম ও ব্যক্তিবর্গ মনে করছেন এবারের সম্মেলন একেবারে পর্বতের মূষিক প্রসব। তাঁরা মহামারি ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জি-৭ গোষ্ঠীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
ব্রিটেনের ছায়া মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিসা নন্দি বলেন, যে কোনো দিক থেকে বিবেচনা করলে এবারের সম্মেলনের মানদণ্ড ঠিক ছিল না। এতে ২০২২ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা দেওয়া হয় নি। জলবায়ু খাতে নিরাপত্তা অর্জনে কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় নি।
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন বলেন, এবারের শীর্ষ সম্মেলন নৈতিক ব্যর্থতার ইতিহাস তৈরি করবে। বিশ্বে ১১ বিলিয়ন ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা প্রয়োজন, তবে আমরা শুধু এক বিলিয়ন ডোজের পরিকল্পনা নিয়েছি।
জার্মানির ডিটিএ’র খবরে বলা হয়, শিশুদের দাতব্য সংস্থার ব্যক্তিরা বলছেন, জি-৭-এর টিকা সহায়তার প্রতিশ্রুতি ততটা ‘সুন্দর’ নয়। এর উদ্দেশ্য হল লোকজনের নজর অন্যদিকে সরানো; যাতে জি-৭ গোষ্ঠীর করোনাভাইরাসের টিকার পেটেন্ট উন্মুক্ত করার বিরোধিতা লুকানো যায়।
জি-সেভেনের শীর্ষ সম্মেলন শেষে প্রকাশিত ইশতাহারে সিনচিয়াং ও হংকং ইস্যুতে চীনের সমালোচনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে বেইজিং। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র চাও লি চিয়ান এ প্রসঙ্গে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ প্রতিবাদ জানান।
মুখপাত্র বলেন, জি-সেভেন চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছে। বেইজিং এর তীব্র বিরোধিতা করে। জি-সেভেনের তত্পরতা জাতিসংঘের সংবিধান এবং শান্তি, উন্নয়ন, সহযোগিতা ও অভিন্ন কল্যাণের যুগের বিদ্যমান প্রবণতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তবে, চীনের জাতীয় সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও স্বার্থ সুরক্ষার সংকল্প এতে পরিবর্তিত হবে না।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান জটিল অবস্থায় আন্তর্জাতিক সমাজের উচিত পারস্পরিক ঐক্য ও সহযোগিতা জোরদার করা এবং কার্যকরভাবে বহুপক্ষবাদ বাস্তবায়ন করা।