অ্যা পোস্টম্যান ইন সাংগ্রি-লা
2021-06-25 19:03:51

সময়কাল ১৯৮৫। সিছুয়ান প্রদেশের মুলি জেলার পোস্টম্যান ওয়াং শুন ইয়াও। সকলের অপেক্ষা অবসানের মানুষ তিনি। সবাই অপেক্ষায় থাকে তাঁর- কখন আসবেন তিনি?

সুবিশাল সবুজ পাহাড়ে ঘেরা এই জেলায় মানুষের আবাস খুব কম। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা নরম মাটির কন্টকাকীর্ণ পথ যেন শুন ইয়াওর নিয়মিত সঙ্গী। ছিল না কোনো টেলিফোন । তাই সবার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যমই ছিলেন শুন ইয়াও।

অ্যা পোস্টম্যান ইন সাংগ্রি-লা_fororder_wenhua5

ঘোড়ার পিঠে চড়ে টগবগিয়ে চিঠি  নিয়ে শুন ইয়াও ছুটে বেড়াতেন এ গ্রাম থেকে ও গ্রাম। ১৯ বছর বয়স থেকে শুরু তাঁর এই পথ চলা। বরফে-ঢাকা পাহাড়ি উপত্যকা, খরস্রোতা নদী, তাপমাত্রা মাইনাস ১০ ডিগ্রি থেকে ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত। যাত্রাপথে  অনেক মোড়,সরু রাস্তা আবার রাস্তার পাশে গভীর খাদ। একটু  অসচেতন হলেই হারাতে হবে প্রাণ। এভাবেই নিয়মিত নানান প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হতো শুন ইয়াওকে।

এই দুর্গম পথে যেতে যেতে তিনি স্বপ্ন  দেখতেন মুলি জেলায় একদিন নির্মিত হবে সড়ক। পোস্টমাষ্টাররা চিঠি বিতরণ করবে গাড়ি চালিয়ে। এভাবে কাজ করতে করতে এবং স্বপ্ন দেখতে দেখতে তিনি কাটিয়ে দিলেন টানা ৩২ বছর ।

পাহাড়ের বিভিন্ন গ্রামে চিঠি বিতরণের পাশাপাশি তিনি গ্রামবাসীদের জন্য  নিয়ে আসতেন বাইরের অবস্থার খবরাখবর। সব সময় তিনি অন্যান্য জেলা থেকে কিছু শস্যবীজ নিয়ে আসতেন। আস্তে আস্তে পরিবর্তন হতে থাকলো গ্রামবাসীদের জীবনমান। বেড়ে গেলো তাদের  আয়-রোজগার।

কেন তিনি টানা বহু বছর ধরে পোস্টম্যান হিসেবে দুর্গম পাহাড়ে কাজ করেন- এমন প্রশ্নের জবাবে শুন ইয়াও বলতেন- চিঠিটা পাওয়ার পর গ্রামবাসীদের মুখে আমি যে তৃপ্তির হাসিমুখ দেখতে পাই, সেটি আমি আর অন্য কোথাও পাইনি। অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর এই আনন্দই আমাকে অবিচল রাখে এই কাজে।

শুন ইয়াওয়ের কাছে সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে গিয়ে নিজের পরিবারকে  সময় দিতে না পারা । এ জন্য অবশ্য তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন পরিবারের সদস্যদের কাছে।

২০০৫ সালে ‘চীনকে মুগ্ধ করা’ দশজন মানুষের মধ্যে অন্যতম একজন হিসেবে নির্বাচন করা হয় ওয়াং শুন ইয়াওকে। যাকে বিশ্বের ডাক ইতিহাসের কিংবদন্তী ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নেয়ার কয়েক বছর পরে চলতি বছরের ৩০ মে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন পরপারে। মুলি জেলায় আজ  নির্মাণ হয়েছে তাঁর স্বপ্নের সড়ক। এখন আর কাউকে ঘোড়া ছুটিয়ে চিঠি বিতরণ করতে হয় না।

শুন ইয়াওকে সম্মান জানিয়ে নির্মিত হয়েছে বায়োপিক সিনেমা ‘A Postman in Shangri-la’

চীনের বিখ্যাত অভিনেতা  ছিউ লিনের অভিনয় করেছে  ওয়াং শুন ইয়াওয়ের চরিত্রে। পাশাপাশি  এই সিনেমায় অভিনয় করেছে  শুন ইয়াওয়ের সহকর্মী ও তাঁর  আত্মীয়স্বজন ।

চোঙ্গ ইউ পরিচালিত এই সিনেমা আপনাকে মনে করিয়ে দিবে চিঠিপত্রের সেই সময়ের কথা। সিপিসি'র  শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ এই কর্মবীরের জন্য রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।

-হোসনে মোবারক সৌরভ