চীনের কমিউনিস্ট বিপ্লবের মহান নেতা এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম চেয়ারম্যান মাও জেতুং শুধু রাজনৈতিক ও আদর্শগতভাবে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নেতাদের অন্যতমই ছিলেন না, তাঁর সাহিত্যকর্মও সমালোচকদের আন্তরিক প্রশংসা পেয়েছে।
ছবি: মাও জেতুং
মাও জেতুং জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৩ সালে। ১৯২০ এর দশকে তাঁর কবিতা জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। চীনের জাতীয় জীবনের বিভিন্ন বিষয় তাঁর কবিতায় ফুটে ওঠে। ঐতিহাসিক লং মার্চ, ১৯৪৯ সালের মহান কমিউনিস্ট বিপ্লব এবং দেশপ্রেম বিষয়ক তাঁর কবিতাগুলো সাহিত্যপ্রেমী পাঠকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।
মাও জেতুংয়ের কয়েকটি বিখ্যাত কবিতা হলো, ছাংশা, হলুদ ক্রেন টাওয়ার, চিংকাং পাহাড়, তুষার, লাওশান পাস, লিউপান পাহাড়ে, শাওশানে ফেরা, পরীর গুহা, নারী বাহিনী ইত্যাদি।
কবিতা লেখার ক্ষেত্রে তিনি চিরায়ত চীনা কবিতার রীতি অবলম্বন করেছেন। থাং রাজবংশের বিখ্যাত কবি লি পাই, লি শাংইন এবং লি হ এর কবিতায় প্রভাবিত ছিলেন মাও জেতুং। তিনি রোমান্টিক ধারার কবিতা লিখেছিলেন। জন্মভূমি ছাংশা বিষয়ে তার ‘ছাংশা’ শিরোনামের কবিতার কয়েকটি পংক্তি হলো,
‘একা আমি দাঁড়িয়ে আছি শরতের শীতল বাতাসে
অরেঞ্জ দ্বীপের চূড়ায়
উত্তরে বয়ে চলেছে সিয়াং
চোখে পড়ছে হাজারো লাল পাহাড়
রঙিন হয়েছে অরণ্য
স্ফটিক স্বচ্ছ নীলজলে ছায়া ফেলেছে উড়ন্ত ঈগল’
চেয়ারম্যান মাও জেতুংয়ের কবিতা বাংলায় অনেক বছর ধরেই অনুবাদ হয়েছে। কবি শামসুর রাহমানসহ অনেক বিখ্যাত কবি তাঁর কবিতা অনুবাদ করেছেন। বিশ্বের অনেকগুলো ভাষায় তাঁর কবিতা অনুদিত হয়ে সাহিত্যপ্রেমীদের অকুণ্ঠ ভালোবাসা পেয়েছে। কবি শামসুর রহমান মাও জেতুংয়ের পরীর গুহা কবিতার অনুবাদ করেছেন-
‘গোধূলির গাঢ় দীর্ঘ ছায়ায়
দাঁড়ানো কী দৃঢ় পাইনের শ্রেণি।
বর্ণিল মেঘ উড়ে যায় দূরে, প্রশান্ত, দ্রুত।
অপরূপ রূপে প্রকৃতি নিজেকে
ছাড়িয়ে গিয়েছে পরীর গুহায়।
বিপজ্জনক পাহাড় চূড়ায় সুন্দরীতমা
অনন্ত তার বৈচিত্র্যে করে বসবাস।’
চেয়ারম্যান মাও জেতুং তাঁর বিপ্লবী আদর্শের ও আত্মত্যাগের কারণে যেমন বিশ্বে একজন মহান মানব হিসেবে স্বীকৃত তেমনি তাঁর কবিতাও পাঠক মহলে সমাদৃত।
-শান্তা মারিয়া