জুন ২৪: গত ৮ জুন, দ্বিতীয় চীন-মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর মেলা চীনের চে চিয়াং প্রদেশের নিংপো শহরে উদ্বোধন হয়। চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের উপ-প্রধানমন্ত্রী হু ছুনহুয়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তিনি প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের অভিনন্দনবাণী পড়ে শোনান এবং একটি বক্তব্য দেন।
অভিনন্দনবাণীতে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, আগামী পাঁচ বছরে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে ১৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি পণ্য আমদানির পরিকল্পনা করছে চীন। পাশাপাশি, এই দেশগুলো থেকে কৃষিপণ্যের আমদানির পরিমাণ দ্বিগুণ করার চেষ্টাও করবে বেইজিং। এ ছাড়া, চীন-মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোতে নিংপোসহ অনেক জায়গায় আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতামূলক দৃষ্টান্ত এলাকা নির্মাণ করতে আরও অব্যাহতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাবে চীন।
চীন-ইইউ সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে, চীন এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ব্যবস্থাগত সহযোগিতা শুরু হয় বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পরে, ২০১২ সালে । সেই থেকে চীন এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ, যা চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধির হারের তিনগুণ। এমনকি, ২০২০ সালে মহামারীসহ অনিশ্চিত ফ্যাক্টরের প্রভাবের মধ্যেও চীনের সঙ্গে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর বাণিজ্য বেড়ে ১০০ বিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে।
ইউরোপীয় ‘আধুনিক কূটনীতি’ ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে যে, কোভিড-১৯ মহামারী ইউরোপীয় অঞ্চলের অর্থনীতিতে চীনের সক্রিয় অংশগ্রহণের যুগের অবসান ঘটায়নি। এটি আন্তর্জাতিক পরিবেশের সাথে বেইজিংয়ের বাণিজ্যিক সম্পর্কের নমনীয়তা এবং দেশটির অভিযোজন-ক্ষমতা প্রদর্শন, করে যা মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের বিকাশে অবদান রাখবে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ২০১২ সাল থেকে, মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে চীনের আমদানি বছরে বছরে বেড়েছে; এক্ষেত্রে গড়ে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৯.১ শতাংশ, আর রফতানিতে প্রবৃদ্ধির হার ৭.৬ শতাংশ।
চীনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সম্প্রতি বলেছেন, পশ্চিম ইউরোপীয় উন্নত দেশগুলোর তুলনায় মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো নবোদিত অর্থনৈতিক গোষ্ঠী। তাই চীনের সাথে এসব দেশের সহযোগিতার গুরুত্ব অনেক বেশি। অবকাঠামো নির্মাণকে ত্বরান্বিত করতে, বৈদেশিক অর্থ সংগ্রহ করতে এবং চীনে রফতানি বাড়াতে এসব দেশ আগ্রহী। ২০২০ সালে চীনা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে ৫.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রকল্প-চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৩৪.৬ শতাংশ বেশী।
জার্মান ‘ইয়ুথ ওয়ার্ল্ড’ একটি নিবন্ধে বলেছে, প্রকল্পচুক্তিগুলোর সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হচ্ছে পেলজেসাক সেতু। চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ কেবল সবচেয়ে ভালো অফারই দেয়নি, বরং নির্দিষ্ট সময়ের আগে সেতুটি তৈরির কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।
হাঙ্গেরি-সার্বিয়া রেলপথ চীন-মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় সহযোগিতা ব্যবস্থাপনার কাঠামোর অধীনে আরেকটি অর্জন। সার্বিয়ার আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গবেষণালয়ের ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ শীর্ষক গবেষণা বিভাগের মহাপরিচালক বলেছেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালে, হাঙ্গেরি-সার্বিয়া রেলপথ প্রকল্পের অবিচ্ছিন্ন অগ্রগতি আকর্ষণীয়। এটি সার্বিয়া ও চীনের বাস্তব সহযোগিতা স্থিতিশীলভাবে সামনে এগিয়ে নেওয়ার প্রতীক।’ আর ‘ইউরোপের আধুনিক কূটনীতি’ ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ইউরোপের সাথে আন্তঃযোগাযোগ ও আন্তঃসংযোগকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় চীন। পাশাপাশি, রেলপথ, বন্দর এবং বিনিয়োগকে ইউরোপের সুষম উন্নয়ন ও সামাজিক সংহতি অর্জনের ভিত্তি হিসাবে বিবেচনাও করে চীন। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)