যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলতে হবে: ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট
2021-06-22 14:42:26

 

জুন ২২:  স্থানীয় সময় গতকাল (সোমবার) ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রায়িসি রাজধানী তেহরানে প্রথম নির্বাচন-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন। এতে ইরানের পারমাণবিক ইস্যু, ইরান-মার্কিন সম্পর্ক, ইরান-চীন সম্পর্ক এবং অন্যান্য আঞ্চলিক উত্তপ্ত বিষয়ে মতামত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ইরানের সার্বিক পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে চলমান ভিয়েনা সম্মেলনকে সমর্থন জানান তিনি। তবে, যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের উপর থেকে সব অত্যাচারী নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। আজকের সংবাদ পর্যালোচনায় আমি এ বিষয়ে আলোচনা করবো।

 

এদিন সংবাদ সম্মেলনে নতুন প্রেসিডেন্ট প্রথমে নতুন সরকারের বিদেশনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে বুঝতে হবে যে, নতুন ইরান সরকারের বৈদেশিক নীতি ইরানের পারমাণবিক চুক্তি-সংক্রান্ত আলোচনা পুনরুদ্ধারের সময় শুরু হয়নি, অথবা তা এই আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আদান-প্রদানের নীতির ভিত্তিতে ইরান তার বিদেশ নীতির মাধ্যমে বিশ্বের সঙ্গে বিস্তৃত ও সুষম সম্পর্ক রক্ষা করে।

 

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ইরানি জনগণের ওপর, চরম মার্কিন চাপের নীতি ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। চাপের পরিপ্রেক্ষিতে ইরানি জনগণ প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের বিরুদ্ধে সব নিপীড়নমূলক নিষেধাজ্ঞা তুলতে হবে এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর উচিত আমেরিকান নীতি ও চাপে প্রভাবিত না হওয়া এবং তাদের প্রতিশ্রুতি মেনে চলা। ভিয়েনা বৈঠকের পক্ষে সমর্থন প্রকাশ করেন তিনি। তিনি মনে করেন, বৈঠকের ফলাফল অবশ্যই ইরানের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। এই সম্পর্কে তিনি বলেন,

 

‘দেশের স্বার্থ রক্ষায় যে কোনও আলোচনাকে সমর্থন করি, তবে আলোচনার সঙ্গে দেশের অর্থনীতি ও জনগণের জীবন সংযুক্ত করবে না ইরান, অথবা শুধু আলোচনার জন্য আলোচনা করবে না। পাশাপাশি, ভিয়েনা আলোচনাকে ব্যর্থতা থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করবে ইরান।’

 

তিনি বলেন, ইরানের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদল নতুন দফার ভিয়েনা আলোচনার ফলাফল নিয়ে মতবিনিময় করেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে; এটিই হবে ইরানি নতুন সরকারের পররাষ্ট্রনীতির মূল বিষয়। এমনকি ইরানের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলেও মার্কিন  প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করবেন না তিনি। ইরানের পারমাণবিক চুক্তির কাঠামোর বাইরে অন্যান্য ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করবেন না তেহরান। তিনি উল্লেখ করেন যে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এবং আঞ্চলিক নীতি আলোচনার বিষয় নয়। এই সম্পর্কে তিনি বলেন,

 

‘আমরা জোর দিয়ে বলেছিলাম যে, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইরানের পারমাণবিক চুক্তির অধীনে তার দায়িত্ব পালন করা এবং তা মেনে চলা। তবে, ইরানের আঞ্চলিক নীতি এবং ক্ষেপণাস্ত্র পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হবে না। আলোচনা, পরামর্শ, স্বাক্ষর ও প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে যে কাজটি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, তার কিছুই মেনে চলেনি ওয়াশিংটন। তাহলে নতুন আলোচনা কীভাবে হতে পারে?’

 

চীন-ইরান সম্পর্কের ভবিষ্যত উন্নয়ন সম্পর্কে চায়না মিডিয়া গ্রুপ সিএমজি’র সংবাদদাতার প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট রায়িসি বলেন, ইরানের অতীত ও বর্তমান সরকার সবসময় চীনের সঙ্গে সুষ্ঠু সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা করেছে। চীন ও ইরানের সম্পর্ক সবসময় সুষ্ঠু রয়েছে এবং এর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ইরান অব্যাহতভাবে দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চেষ্টা করবে। এই সম্পর্কে তিনি বলেন,

 

‘ইরানে ইসলামি বিপ্লব বিজয়ের পর থেকে, ইরানের অতীত ও বর্তমান সরকার সবসময় চীনের সঙ্গে সুষ্ঠু সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। বর্তমানে দু’দেশের সম্পর্ক সুষ্ঠু রয়েছে। ইরানের কূটনীতির দ্বিপক্ষীয় বিষয় হলো দু’দেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নও নতুন সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ’।

(ওয়াং হাইমান/তৌহিদ/ছাই)