২০২১ সালের জি সেভেন শীর্ষসম্মেলন শেষ হয়েছে। এবারের জি সেভেন-এর প্রধান বিষয় ছিল তিনটি। জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড-১৯ টিকা এবং চীন। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং টিকা ক্ষেত্রে জি সেভেন-এর প্রতিশ্রুতি হতাশাজনক। তবে, তারা বেশ সচেতনভাবে চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছে।
কোভিড-১৯ মহামারী এখনো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। এ জরুরি মুহূর্তে মহামারী নিয়ন্ত্রণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
বড় দেশ হিসেবে অন্য দেশকে সহায়তা করাও একটি দায়িত্ব। এ কাজটিই করছে চীন। তবে শীর্ষসম্মেলনে জি সেভেন জানায় যে “ধনী গণতান্ত্রিক দেশগুলো বিশ্বে চীনের ক্রমবর্ধমান ভূমিকার ভালো বিকল্প উপহার হতে পারে।” সেই উপহারের অংশ হিসেবে জি-সেভেন নেতারা বৈঠকে করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ১০০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
চীন সবসময় মনে করে, টিকা মহামারি মোকাবিলার অস্ত্র, জীবন বাঁচানোর আশা, চীন সর্বদা টিকা নিয়ে কূটনৈতিক আচরণের বিরোধিতা করে। তবে জি-সেভেন গোষ্ঠীর টিকা দেওয়ার লক্ষ্য হলো অন্যান্য দেশকে চীনের টিকা সহায়তা গ্রহণ থেকে বিরত রাখা।
কোভিড-১৯এর টিকার কথাই ধরুন। আগামী বছরের শেষ দিকে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ টিকার এক বিলিয়ন ডোজ সরবরাহ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জি-সেভেন নেতারা। অনেক বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন যে, এ সংখ্যাটি বিশ্বের প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম। জাতিসংঘের উপ-মহাসচিব জি-সেভেন শীর্ষসম্মেলনে টিকা প্রতিশ্রুতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জি-সেভেন-এর বিবৃতিও সব পক্ষকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কারণ, উন্নত দেশগুলি ২০০৯ সালে প্রায় একই রকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু তা পূরণ করেনি।
অন্যদিকে দক্ষিণ চীন সাগর, সিনচিয়াং, তাইওয়ানসহ বিভিন্ন চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে জি-সেভেন হস্তক্ষেপ করার অনেক চেষ্টা করেছে।
এবার জি-সেভেন শীর্ষসম্মেলন নিয়ে বিশেষজ্ঞ, মিডিয়া ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মূল্যায়ন ভালো না। তারা বলছে, তাদের প্রতিশ্রুতি যথেষ্ট নয়, সম্মেলনটি সম্পদের অপচয় ছিল। মহামারীর মধ্যে অফলাইনে সম্মেলন আয়োজন করে তারা কোনো সঠিক কাজ করেনি। কোন মিডিয়া মন্তব্য করেছে যে জি-সেভেন এর সম্মেলন তার প্রয়োজনীয়তা হারিয়েছে।
বিশ্বের সমস্যাগুলি দ্রুত সমাধান করা খুব জরুরি। এতে জি-সেভেন ভূমিকা রাখতে পারবে। তবে, এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকাসহ পুরো বিশ্বকে একত্রিত করে একটি সঠিক সমাধানের পথ খুঁজে বের করা উচিত।
যখন জি-৭ দেশগুলো, মানে কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭০–এর দশকে তাদের বার্ষিক সম্মেলন শুরু করে, তখনো তারা বৈশ্বিক অর্থনীতির আধিপত্য করে। ১৯৮০ সালে বিশ্বের সর্বমোট জিডিপির ৫১ শতাংশই ছিল তাদের, সেখানে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর ছিল ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। আর ২০২১ সালে এসে জি-৭ দেশগুলোর সেই জিডিপি এখন ৩২ শতাংশ আর একই এশীয় দেশগুলোর হচ্ছে ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ।
চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও অন্যান্য বৃহৎ উন্নয়নশীল দেশকে অন্তর্ভুক্ত করে জি-২০ জোট এখন বৈশ্বিক অর্থনীতির মোট জিডিপির ৮১ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে। বেশি আয় করা দেশ ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতির স্বার্থের মধ্যে সামঞ্জস্য করে জোটটি। তবে এরপরও সেটি যথেষ্ট নয়। কারণ, এটি ছোট অর্থনীতির ও গরিব দেশগুলোকে বাইরে রেখেছে। তাদের উচিত আফ্রিকান ইউনিয়নকেও (এইউ) সদস্য বানিয়ে নেওয়া। তাহলে প্রায় গোটা বিশ্ব অর্থনীতিকে তাদের ফলপ্রসূ আলোচনার মধ্যে নিয়ে আসতে পারে। জি-৭ জোট যে লক্ষ্য অর্জন করতে চায়, সেটা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বার্ষিক আলোচনাতেই সম্ভব।
জিনিয়া/তৌহিদ/শুয়েই