মে মাসে চীনের অর্থনীতির ভাল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে
2021-06-21 13:25:18

জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মে মাসে চীনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থিতিশীলভাবে পুনরুদ্ধার হয়েছিল, উত্পাদনের চাহিদা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে, নতুন গতিশীল শক্তি বিস্তৃত হয়েছে, কর্মসংস্থান খাত স্থিতিশীল ছিল, প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা অব্যাহতভাবে উন্নত হয়েছে। পাশাপাশি, উন্নয়নের স্থিতিস্থাপকতা দেখা গেছে, জাতীয় অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে পুনরুদ্ধার হয়েছে এবং স্থিতিশীলতার সঙ্গে সঙ্গে আরো দৃঢ় ও ভাল প্রবণতা তৈরি হয়েছে।

 

জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর মুখপাত্র ফু লিং হুই বলেন, বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও মহামারী প্রতিরোধে অনিশ্চিত উপাদান রয়েছে। অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি অব্যাহতভাবে পুনরুদ্ধারের ভিত্তি সুসংহত করতে হবে। আগামীতে সামষ্টিক নীতির ধারাবাহিকতা, স্থিতিশীলতা ও স্থায়িত্ব বজায় রেখে প্রতিষ্ঠানগুলোর সমস্যা সমাধান করা, সংস্কার ও সৃজনশীলতা জোরদার করা, দ্রুত অভ্যন্তরীণ সুপ্তশক্তির বিকাশ, অর্থনৈতিক আবর্তন বাড়ানো, অর্থনৈতিক কার্যক্রম যৌক্তিক পর্যায়ে এগিয়ে নেওয়া এবং অর্থনীতির উচ্চমানের উন্নয়ন জোরদার করতে হবে।

 

ফু লিঙ হুই বলেন, গত বছর একই সময়ে প্রধান উত্পাদন চাহিদা সূচক বৃদ্ধির গতি কিছুটা কমেছে। কিন্তু আগের মাসে আর্থিক বৃদ্ধির মৌলিক স্থিতিশীলতা বজায় ছিল। দু’বছরে গড় বৃদ্ধির গতির কারণে অধিকাংশ উত্পাদনের চাহিদা সূচক কিছুটা দ্রুত হয়। একই সময় কর্মসংস্থান খাত সাধারণত স্থিতিশীল ছিল, বাজারের প্রাণশক্তি উন্নত হয়েছে, উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্য ভাল ছিল এবং অভ্যন্তরীণ চালিকাশক্তি জোরদার হয়েছে।

 

ফু লিং হুই বলেন, বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ভোগ্যপণ্য পুনরুদ্ধারের ভিত্তি ভাল। দেশে কর্মসংস্থান বাড়ছে এবং অধিবাসীদের আয় বাড়ছে। এটা নাগরিকদের ভোগ বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত। অর্থনীতির সামষ্টিক উন্নয়ন পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ টিকাদানের পরিমাণও বাড়ছে। বেশ কিছু ভোগ্যপণ্য নীতি কার্যকর করা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ মহামারী প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী হয়েছে, দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি স্বাভাবিক রয়েছে। এসব বিষয় দেশে ভোগ বৃদ্ধিতে দারুণ সহায়ক।

 

পূঁজি বিনিয়োগ সম্পর্কে ফু লিং হুই বলেন, চলতি বছর নির্মাণ খাতের বিনিয়োগ স্থিতিশীলভাবে পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে। জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত এই খাতে দু’বছরের গড় বৃদ্ধির গতি নেতিবাচক থেকে ইতিবাচক দিকে প্রবাহিত হয়েছে। নির্মাণকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা দ্রুত বেড়েছে। মে মাসে নির্মাণ শিল্পের পিএমআই ছিল ৫১ শতাংশ। যা নির্মাণ শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। পাশাপাশি, এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানের সৃজনশীল বরাদ্দ বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে উন্নত প্রযুক্তির শিল্প খাতে বিনিয়োগ দু’বছরের গড় বৃদ্ধির ১৩.২ শতাংশ। এটা সামষ্টিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির চেয়ে বেশ দ্রুত হয়েছে এবং বিনিয়োগের ভালো ভিত্তি তৈরি করেছে।

 

যদিও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার স্থিতিশীল ছিল, তবুও অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে পুনরুদ্ধারের ভিত্তি সুসংহত করতে হবে।

ফু লিং হুই বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক মহামারী পরিস্থিতি এখনও বেশ জটিল। বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের গতি বাড়ছে। আংশিক উন্নত অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর ব্যাপক উদ্দীপনা নীতির বাড়তি প্রভাব সুস্পষ্ট হয়েছে, আন্তর্জাতিক দ্রব্যমূল্য দ্রুত বাড়ছে, অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হচ্ছে, পুনরুদ্ধারের ভারসাম্যহীনতা এখনও দেখা যায়, মহামারী প্রতিরোধের চাপ উপেক্ষা করা যায় না।

 

ফু লিং হুই মনে করেন, আগামীতে স্থিতিশীলতা রক্ষা ও অগ্রগতি অবিচল রাখার পাশাপাশি মহামারী প্রতিরোধ করা, বৈজ্ঞানিক ও সামষ্টিক অর্থনীতি কার্যকর করা, সংস্কার ও সৃজনশীলতা জোরদার করা, ধারাবাহিক উন্মুক্তকরণ বাড়ানো, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ভিত্তি সুসংহত করা, অর্থনীতি যৌক্তিক মাত্রায় পরিচালনা করা এবং অর্থনীতির উচ্চমানের উন্নয়ন জোরদার করা হবে।

মিন শেং ব্যাংকের প্রধান গবেষক ওয়েন বিন বলেন, চীনের অর্থনীতি পুরোপুরি পুনরুদ্ধার না হওয়ার কারণে কিছু ক্ষেত্রের পুনরুদ্ধারের ভিত্তি দৃঢ় হবে না। সামষ্টিক অর্থনীতি অব্যাহতভাবে স্থিতিশীল বজায় রেখেছে। এখন অভ্যন্তরীণ চাহিদা জোরদার করা এবং গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র ও দুর্বল খাতগুলোতে সমর্থন বাড়াতে হবে।

 

টিকাগ্রহণের চীনা গতি

 

চীনের কোভিড-১৯ টিকাদান গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১শ’ মিলিয়ন ডোজ থেকে ২শ’ মিলিয়ন ডোজে উন্নীত হতে চীনের মাত্র ২৫ দিন সময় লেগেছে। ২শ’ মিলিয়ন ডোজ থেকে ৩শ’ মিলিয়ন ডোজ দিতে মাত্র ১৬ দিন লেগেছে। ৩শ’ মিলিয়ন ডোজ থেকে ৪শ’ মিলিয়ন ডোজ পর্যন্ত ৯ দিন লাগে এবং ৬শ’ মিলিয়ন ডোজ থেকে ৭শ’ মিলিয়ন ডোজের ক্ষেত্রে মাত্র ৫ দিন লেগেছে। ৯ জুন পর্যন্ত চীনে মোট ৮২ মিলিয়ন ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।

 

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ পর্যন্ত গোটা বিশ্বে মোট ১.৯ বিলিয়ন ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ চীনে দেওয়া হয়। বর্তমানে চীনে প্রতিদিন গড় ১.৯ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়। টিকা গ্রহণের ‘চীনা গতি’ বিস্ময়কর। চীন কীভাবে তা বাস্তবায়ন করলো?

 

টিকা গবেষণা ও উন্নয়নের প্রথম সারিতে কাজ করা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা কর্মীদের কারণে চীনা মানুষ অনেক আগে থেকেই টিকা গ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন। মহামারীর শুরুতে সর্বোচ্চ মাত্রায় টিকা গবেষণা ও উন্নয়নের সাফল্য উন্নত করার জন্য চীন ৫টি প্রযুক্তিগত লাইন তৈরি করে। বর্তমানে মোট ৪টি কোভিড-১৯ টিকা দেশের শর্তাধীন বাজারে প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়। ৩টি টিকা চীনে জরুরিভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ৮টি টিকা বিদেশে তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের অনুমোদন পায়। ৭ মে এবং ১ জুন চীনের সাইনোফার্ম ও সাইনোভ্যাকের দুটো টিকা পর পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু’র জরুরি ব্যবহারের টিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। এ ছাড়া বর্তমানে চীন অটোমাইজেশন ইনহেলেশন টাইপ কোভিড-১৯ টিকার জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন চেয়েছে।

 

টিকার পাশাপাশি শক্তিশালী উত্পাদন দক্ষতাও গুরুত্বপূর্ণ। টিকা উত্পাদনের প্রক্রিয়া জটিল, উত্পাদন দীর্ঘমেয়াদি, অনেক বিষয়ের সঙ্গে জড়িত এবং প্রযুক্তির বিষয়বস্তু উঁচু। চাহিদা পূরণ করার জন্য শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের উতপাদন ও ক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে গবেষণা করেছে। একই সময় বেশ কিছু কোভিড-১৯ টিকা উত্পাদন লাইন ২৪ ঘণ্টা কাজ করেছে। উত্পাদনের ক্ষমতা ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং দৈনিক ২ কোটি ডোজ টিকা গ্রহণের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়েছে।

 

ফোকাস গ্রুপ থেকে উচ্চ ঝুঁকি গ্রুপ পর্যন্ত আবার সাধারণ গ্রুপ পর্যন্ত, টিকা উত্পাদন পরিমাণ ও সংকট ও ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে চীন ধাপে ধাপে বিভিন্ন ধরনের মানুষকে টিকা দিয়েছে।

 

কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণের গতি বাড়ার পেছনে অনেক কঠিন পদক্ষেপ রয়েছে। অর্থাত্, কয়েক দশকে চীনের উচ্চ গতির উন্নয়নের দৃঢ় ভিত্তি তৈরি হয়েছে, শক্তিশালী নেতৃত্ব, বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা, সব পর্যায়ে মহামারী প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত এবং দায়িত্বশীল চিকিত্সক ও কর্মী গড়ে উঠেছে। এটাই হয়তো চীনা গতির গোপন রহস্য।