হুথং ও চক মেলানো বাড়ি (সিহ্যেইউয়ান) হলো বেইজিংয়ের ঐতিহ্যগত স্থাপত্যের প্রতীক। শহর উন্নয়নের পাশাপাশি ঐতিহ্যগত স্থাপত্যও ভালভাবে সুরক্ষিত করা হয়েছে এখানে। আজকের আসরে আমি বেইজিংয়ের ঐতিহ্যগত স্থাপত্যের রূপান্তরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন তরুণ স্থপতির গল্প শোনাবো।
২৮ বছর বয়সী ওয়াং লি হুয়া হলেন নতুন প্রজন্মের স্থাপত্য নকশাকার। বেইজিংয়ের ঐতিহ্যগত স্থাপত্য সিহ্যেইউয়ান ও হুথংয়ের রূপান্তরের ক্ষেত্রে তাঁর আগ্রহ বেশি। হুথং মানে বেইজিংয়ের পুরানো নগরের গলি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর একজন পেশাদার নকশাকারে পরিণত হন।
ওয়াংয়ের প্রতিদিনের কাজ হলো বেইজিংয়ের বিভিন্ন হুথংয়ে নির্মাণস্থল পর্যবেক্ষণ, নির্মাণের পরিকল্পনা সংশোধন, প্রাচীন স্থাপত্য সুরক্ষা, স্থাপত্যের রূপান্তর।
ওয়াং লি হুয়া বলেন, তিনি পুরানো বেইজিংয়ের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যময় হুথং পরিবেশ গড়ে তোলা এবং হুথংয়ে থাকা বাসিন্দাদেরকে আধুনিক জীবন উপভোগ করার সুযোগ দেওয়ার কাজ করেন। তিনি বলেন,
‘হুথং ও পুরানো স্থাপত্যের রূপান্তরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সংরক্ষণ ও প্রচার। ধূসর টাইলস, ইটের খোঁদাই ও দরজা হলো আমাদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতি। বর্তমান সমাজ অব্যাহতভাবে উন্নত হচ্ছে। আমরা পুরানো ঐতিহ্য রক্ষার ভিত্তিতে নকশার রূপান্ত ঘটিয়ে থাকি। আমরা পূর্বপুরুষের স্মৃতি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি।’
ওয়াং লি হুয়ার দৃষ্টিতে ঐতিহ্য সুরক্ষার পাশাপাশি যতটা সম্ভব স্থানীয় বাসিন্দাদের বসবাসের ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে। বেইজিংয়ের ইয়াএর হুথং ৫৩ নম্বর সিহ্যইউয়ানের রূপান্তরের পরিকল্পনায় ওয়াং উঠোনে ও সোপান সংযোগকারী সিঁড়ির নকশা করেছেন। তিনি নিজে শ্রমিকদের সঙ্গে সিঁড়ি নির্মাণ করেছেন। তিনি বলেন,
‘মূল্যবান পুরানো উপকরণ এবং পুরানো উপাদানগুলো সুরক্ষা করতে হবে। সেজন্য যুক্তিযুক্ত পুরানো উপাদানগুলো ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া, কার্যকর রূপান্তর ও আপগ্রেডেশান করতে হবে। পুরানো স্থাপত্যের কাঠামো ও স্থানীয় বাসিন্দাদের চাহিদা অনুযায়ী রূপান্তর করতে হবে। আরও যুক্তিসঙ্গত ও আরামদায়ক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।’
হুথংয়ে প্রতিটি উঠোনকে কেন্দ্র করে কয়েকটি পরিবার থাকে। যখন একটি পরিবারের অবস্থানের রূপান্তর ঘটে, তখন অন্য পরিবারের ওপর তার প্রভাব পড়ে। তাই প্রতিবেশীদের মধ্যে মতভেদ দূর করা হলো ওয়াং লি হুয়ার অন্য একটি সমস্যা। সেজন্য তাঁর একই উঠোনের বিভিন্ন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। ওয়াং বলেন,
‘ভাল নকশা কার্যকরভাবে পরিবারগুলোর মধ্যে মতভেদ দূর করতে পারে। প্রতিবেদশীদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করা জরুরি। আমরা তাঁদের জন্য সুন্দর নকশা ও বসবাসের সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করি।’
ওয়াং আরও বলেন, প্রতিটি পুরানো স্থাপত্য হলো শহরের সাংস্কৃতিক ধন। এতে স্থানীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মানবিক অনুভূতির চিহ্ন দেখা যায়। পুরানো স্থাপত্য সুরক্ষা হলো প্রত্যেকের দায়িত্ব। (ছাই/আলিম/রুবী)