আশ্রয়ণ প্রকল্পের রঙিন ঘর: বাংলাদেশে গৃহহীন মানুষের স্বপ্নের বসতি
2021-06-20 20:02:53

মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেলো আরও ৫৩ হাজার ৩৪০টি দরিদ্র পরিবার। রোববার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর দ্বিতীয় ধাপে উপকারভোগীদের কাছে ঘর হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে গৃহ ও ভূমিহীন কোনো মানুষ থাকবে না; সবাই ঘর ও জমি পাবেন। নিম্নবর্গের মানুষকে সমাজের মূলস্রোতে অন্তর্ভুক্ত করারই তার সরকারের লক্ষ্য বলে জানান শেখ হাসিনা। 
এর আগে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি একই প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে প্রধানমন্ত্রীর ঘর উপহার পায় প্রায় ৭০ হাজার পরিবার। দুই দফায় ঘর পেল এক লাখ ২৩ হাজার গৃহহীন মানুষ। সরকারের চলমান এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রায় ৯ লাখ গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে ঘর ও জমি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন প্রথম দফায় ঘর হস্তান্তরের পর জানিয়েছিলেন, সারা দুনিয়াতে বিনে পয়সায় এত ঘর করে দেওয়ার নজির নেই। 
আশ্রয়ণ প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ঘর ও জমি কোনোটাই নেই এমন পরিবারের সংখ্যা ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১টি। ভিটেমাটি আছে কিন্তু ঘর নেই বা থাকলেও জরাজীর্ণ এমন পরিবার রয়েছে ৫ লাখ ৯২ হাজার ২৬১টি। মুজিব বর্ষে সরকারের করা তালিকায় গৃহ ও ভূমিহীন পরিবারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি।  
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর গুচ্ছগ্রাম কর্মসূচির আদলে আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম ঘরেফেরা, গৃহায়ণ কর্মসূচি শুরু করে। এ কর্মসূচির আওতায় ২০২০ সালে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৩ লাখ ২০ হাজার ৫২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। পর্যায়ক্রমে সব গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। 
সরকারের বিপুলায়তন এ প্রকল্পের লক্ষ্য, ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল, অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন। ঋণ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করে তোলা এবং সর্বোপরী দারিদ্র্যদূরিকরণ।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকটি স্থান খুলনার ডুমুরিয়া,মানিকগঞ্জের শিবালয় কিংবা গোপালগঞ্জের হরিদাসপুরে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে ভিন্ন ধর্ম-শ্রেণিপেশার মানুষ সেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যে বসবাস করছে। দুই শতক করে জমির ওপর রঙিন টিনের আধপাকা বাড়িগুলো দেখতে ভারি সুন্দর। এমন স্বপ্নের আবাস পেয়ে হতদরিদ্র মানুষগুলোর খুশির সীমা নেই।
সরকারের দেওয়া ঘর-ভিটেমাটি, জমি বদলে দিয়েছে তাদের জীবন। ভাসমান, অনিশ্চিত জীবনে দিশেহারা মানুষগুলো এখন সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখছেন। নিজেদের এক টুকরো উঠোনে গরু-ছাগল, হাস-মুরগী পালছেন কেউ। কেউ বা করছেন সবজি চাষ। স্কুলে যাচ্ছে তাদের ছেলে মেয়েরা।
এ ভাবে তারা একটু একটু করে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। মাথাগোঁজার ঠাঁই পেয়ে, নতুন জীবনের স্বপ্নে বিভোর মানুষগুলোর কৃতজ্ঞতার শেষ নেই সরকারের কাছে। এখন তাদের ভাবনা সংসারযাত্রা নির্বাহের সংস্থান করা। একটু কর্মসংস্থান কিংবা ব্যবসাপাতির জন্য কিছু আর্থিক সহায়তা বা ঋণের প্রত্যাশা তাদের। 
উপকারভোগীদের কৃতজ্ঞতার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি মনে করেন, গৃহহীন মানুষদের জন্য ঘরের বন্দোবস্ত করা তার কর্তব্য। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, বঙ্গবন্ধু-কন্যা হিসেবে দেশের মানুষে জন্য কাজ করে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণই তার লক্ষ্য বলে জানান শেখ হাসিনা। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন বলে জানান। বাংলাদেশে একজন গৃহহীন, ভূমিহীন মানুষও থাকবে না- সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাবেন বলে জানান শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে তারা যেন জীবন-জীবিকার পথ খুঁজে পান সে ব্যবস্থা করবেন বলেও আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।  
দেশের মানুষ সরকারের এ মহতি উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায়। দেশের মানুষ আশা করে সরকারের গৃহীত জনকল্যাণমূলক এ প্রকল্প অব্যাহত থাকবে এবং প্রকৃত ভূমি ও গৃহহীনরা পুনর্বাসিত হবেন। এ উদ্যোগ শুধু যে হতদরিদ্র মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করবে তা নয়, বরং এর মধ্য দিয়ে দেশে দারিদ্র্য বিমোচন ত্বরান্বিত হবে এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।