নীল সাগরের মাঝে একটি ছোট নৌকা । যেখানে একজন বাবা তার প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বসে আছে। আশাহীনভাবে সাগরের পানে তাকিয়ে আছেন তিনি। একপর্যায়ে ভারী পাথরের সাথে নিজের ও ছেলের পা বেঁধে একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়েন সাগরে।
চীনা চলচ্চিত্র: ওশন হ্যাভেন
ওয়াং সিন ছেং এর ছেলে ‘তা ফু’। ছোটবেলা থেকে সে মানসিক প্রতিবন্ধী। নিজে থেকে কিছুই করতে পারেন না সে। এমন কি নিজের ব্যক্তিগত কাজ গুলোও না। তা ফুর মা তার অসুস্থ হওয়ার পর একটি আকস্মিক দুর্ঘটনায় মারা যান। বাবা সিন ছেং দায়িত্ব নেন ছেলের।
কিন্তু তা ফুর বয়স যখন ২১ বছর তখন সিন ছেংয়ের যকৃতের ক্যান্সার ধরা পরে। ডাক্তার বলেছেন তিনি বাঁচবেন মাত্র তিন থেকে চার মাস।
কুয়াশার একটি মেঘ চলে আসে বাবার হৃদয়ে । এখন তার একটাই ভাবনা ছেলে কে নিয়ে। তিনি চান চলে যাওয়ার আগে ছেলে আত্মনির্ভরশীল করে যাওয়া।
কিন্তু অনেক প্রচেষ্টার পরও ব্যর্থ হন বাবা। কষ্টে-অভিমানে একবার তিনি চেয়েছেন ফুকে নিয়ে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে। সিনেমার শুরুতেই যেটি আমরা দেখতে পাই।
এর পর বাবা শরণাপন্ন হন একজন শিক্ষকের। তার সাহায্যে তিনি ফু কে ভর্তি করান একটি গণ-কল্যাণ সংস্থায়। কিন্তু কিছু দিন পরে সেখান থেকে ফোন আসে যে ফু একা একা এখানে থাকতে অভ্যস্ত হতে পারছে না। সিন ছেং আবার চেষ্টা করেন, কিন্তু সফল হতে পারলেন না। অবশেষে তিনি নিজের বাড়ি বিক্রি করে ফুর সাথে থাকা শুরু করলেন সেই গণ-কল্যাণ সংস্থায় ।
তা ফু ছোটবেলা থেকেই পানি পছন্দ করতো। সে বাবার সাথে এ্যাকুরিয়ামে সাঁতার কাটতে বেশি পছন্দ করতো। তাই সিন ছেং কাজ নেন সেখানকার একটি মাছের অ্যাকুরিয়ামে । ফু যেন মাছের অ্যাকুরিয়ামে কাজ করতে পারে এবং আত্মনির্ভরশীল হতে পারে সে জন্য প্রায় অসম্ভব একটি পরিকল্পনা নেন সিন ছেং। মাছের পিঠে চড়ে সাঁতার কাটা শেখাতে শুরু করলেন ফুকে ।
বিভিন্ন ভাবে ফু কে সাঁতার শেখানোর চেষ্টা করে বাবা । নিজের অসুস্থতা উপেক্ষা করে নিজের তৈরি জামা পরে কচ্ছপের অভিনয় করে ফুর সাথে সাঁতার কাটেন তিনি।
অবশেষে সফল হন বাবা। ছেলে আত্মনির্ভরশীল হয়েছে- এই স্বস্তিটুকু নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে যান সিন ছেং। তা ফু এখন মাছের অ্যাকুরিয়ামে চাকরি করছে। নিজের কাজ গুলো নিজে করছে।
সিনেমার শেষে দেখা যায় তা ফু ছোটবেলার মত একটি সাগর কচ্ছপের পিঠে সাঁতার কাটতে। এই সিনেমা নিয়ে চলচ্চিত্র বোদ্ধারা বলেন, ‘ocean heaven’ হলো বর্তমানে চীনের ইতিহাসের একটি ব্যতিক্রমি গল্পের সিনেমা। বাবা ও ছেলের ভালোবাসার সত্যিকার ভাবানুভূতি অবশ্যই মুগ্ধ করবে আপনাকে।
এই সিনেমার শুরুর গল্প নিয়ে পরিচালক সুয়ে সিও লু বলেন, ১৯৯৪ সালে আমি যখন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে প্রথমবারের মতো অটিস্টিক রোগীদের সঙ্গে কাজ করি - তখন তাদের আত্মীয়স্বজনদের পারিবারিক ত্যাগ নিয়ে অসংখ্যবার অভিভূত হয়ে পড়ি। তাদের মনোকষ্ট উপলব্ধি করি। সেখান থেকেই এই সিনেমা নির্মাণের আগ্রহ জেগে ওঠে। বাবাকে নিয়ে নির্মিত এই সিনেমা আপনাকে বাবার স্নেহ-মায়া আর ভালোবাসার একটি হৃদগ্রাহী বিশ্লেষণ দেবে।
হোসনে মোবারক সৌরভ