সিনচিয়াং নিয়ে ফের অভিযোগ; চীনের আদমশুমারিতে প্রকৃত তথ্য প্রকাশ
2021-06-18 15:55:34

সম্প্রতি চীনের সিনচিয়াংয়ে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর লোকজনকে গণহারে আটকে রাখা ও তাঁদের ওপর নির্যাতন-সংক্রান্ত প্রমাণহীন খবর নিয়ে চীনের সমালোচনায় যোগ দিলেন জাতিসংঘ মানবাধিকার কর্মকর্তা মিশেল ব্যাশেলেট। সম্প্রতি জার্মানির বিতর্কিত গবেষক অ্যাদ্রিয়ান জেনজ দাবি করেন যে, সিনচিয়াংয়ে চীন সরকারের জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতির কারণে উইঘুর জাতির জনসংখ্যা আগামী ২০ বছরে এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তার প্রমাণহীন দাবির ওপর ভিত্তি করে পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করে এবং জাতিসংঘ কর্মকর্তা ওই সমালোচনা করেন। অন্যদিকে সম্প্রতি চীনে সপ্তম জাতীয় আদমশুমারির তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বিস্তারিত থাকছে আজকের সংবাদ পর্যালোচনায়।

 

দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিমা দেশগুলো চীনে মানবাধিকার পরিস্থিতির সমালোচনা করছিল। যদিও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো প্রমাণ তারা উল্লেখ করে নি। বিশেষ করে সিনচিয়াং ইস্যুতে চীনের সমালোচনায় এবার যুক্ত হলেন জাতিসংঘের মানাবাধিকার কর্মকর্তা মিশেল ব্যাশেলেট। এদিকে গত বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডসের পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব পাস হয়। এতে বলা হয়, উইঘুর মুসলিমদের সঙ্গে যা করা হচ্ছে, তা গণহত্যার শামিল।

পাশাপাশি, বহু বিতর্কিত তথাকথিত জার্মান গবেষক অ্যাদ্রিয়ান জেনজ সম্প্রতি দাবি করেন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য চীন সরকার যে আঞ্চলিক নীতি গ্রহণ করেছে তাতে সিনচিয়াংয়ে বসবাসরত সংখ্যালঘু জাতির জনসংখ্যা আগামী ২০ বছরে ২৬ লাখ থেকে ৪৫ লাখ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে সিনচিয়াং প্রদেশে জোরপূর্বক জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু পশ্চিমা দেশ চীনকে গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করে আসছে।

আমরা দেখেছি সম্প্রতি চীনে সপ্তম জাতীয় আদমশুমারির তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। ওপরোক্ত অভিযোগের সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সপ্তম জাতীয় আদমশুমারিতে দেখা গেছে, সিনচিয়াংয়ের উইঘুর মুসলিম জাতির জনসংখ্যা গত আদমশুমারির তুলনায় অনেক বেড়েছে। সিনচিয়াংয়ের বিভিন্ন জাতির মানুষের জীবনযাপনের মান ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে যা গণহত্যার দাবির একেবারে বিপরীত। শুধু তাই নয়, সিনচিয়াংয়ে কর্মসংস্থান খাত ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার অতীতের যে কোনো সময়ের তুলানায় বেড়েছে; যা বাধ্যতামূলক শ্রমের অভিযোগকে ভিত্তিহীন প্রমাণ করেছে। পাশাপাশি বাড়ছে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ও শহরবাসী জনসংখ্যার হার।

 

সপ্তম জাতীয় আদমশুমারির তথ্যে দেখা যায়, সিনচিয়াংয়ের স্থায়ী লোকসংখ্যা দুই কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার। যা ২০১০ সালের ষষ্ঠ আদমশুমারির তুলনায় ১৮.৫২ শতাংশ বেশি। অর্থাত্, ১০ বছরে সিনচিয়াংয়ে ৪০ লাখ ৩০ হাজার মানুষ বেড়েছে। বার্ষিক গড় বৃদ্ধির পরিমাণ ১.৭১ শতাংশ।

আদমশুমারিতে দেখা গেছে, ২০২০ সালে সিনচিয়াং উইঘুর জাতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে অশিক্ষিতের হার ২.৬৬ শতাংশ। যা সারা দেশের চেয়ে ০.০১ শতাংশ কম।

পাশাপাশি, ২০২০ সালে সিনচিয়াংয়ে ১৫ বছর ও এর বেশি বয়সের মানুষের ‘গড় শিক্ষা গ্রহণের সময়’ ছিল ১০.১১ বছর। যা ২০১০ সালে ছিল ৯.২৭ বছর। চীনের ৩১টি প্রদেশের মধ্যে সিনচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ও কেন্দ্র-শাসিত মহানগর দশম স্থান অর্জন করেছে।

 

২০১০ সালে ষষ্ঠ আদমশুমারির তুলনায় সিনচিয়াংয়ে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করেছিল ১০ হাজার ৬৩৫জন। যা ২০২০ সালে এসে  ১৬ হাজার ৫৩৬জনে উন্নীত হয়। এ পরিমাণ সারা দেশের গড় মানের চেয়ে এক হাজার ৬৯জন বেশি।

সিনচিয়াংয়ে স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা ২ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার, যা ২০১০ সালের তুলনায় ১৮.৫২ শতাংশ বেশি। এর মানে, গত ১০ বছরে সিনচিয়াংয়ে ৪০ লাখ ৩০ হাজার মানুষ বেড়েছে। এক্ষেত্রে বার্ষিক গড় বৃদ্ধি  ১.৭১ শতাংশ।

 

সিনচিয়াংয়ের স্থায়ী অধিবাসীদের মধ্যে হান জাতির মানুষের সংখ্যা এক কোটি নয় লাখ ২০ হাজার এবং সংখ্যালঘু জাতির মানুষের সংখ্যা এক কোটি ৪৯ লাখ ৩০ হাজার। এর মধ্যে উইঘুর জাতির মানুষের সংখ্যা এক কোটি ১৬ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি।

চীনের সিনচিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের শহুরে অধিবাসীদের সংখ্যা গোটা অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশেরও বেশি। মোট এক কোটি ৪৬ লাখেরও বেশি মানুষ সিনচিয়াংয়ের রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরের স্থায়ী বাসিন্দা। ২০১০ সালের তুলনায় বর্তমানে সিনচিয়াংয়ের শহরবাসীর সংখ্যা ৫২.৭ লাখ বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার ১৩.৭৩।

চীনের সিনচিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের শহরের অধিবাসীদের সংখ্যা গোটা অঞ্চলের ৫৬ শতাংশেরও বেশি।

 

এদিকে, গত সপ্তাহে চীনের দক্ষিণ ও পশ্চিম রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আইন বিশ্ববিদ্যালয় সিনচিয়াংয়ে তুলা উত্পাদনসম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ে তুলা উত্পাদনে এখন ব্যাপকভাবে যন্ত্রের ব্যবহার করা হচ্ছে। দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের আখ্যসু, কাশি ও হ্যথিয়ানসহ বিভিন্ন স্থান পর্যবেক্ষণ করে বলা হয় সেখাকার অধিকাংশ অঞ্চলে তুলার চাষ থেকে শুরু করে সুতা উত্পাদন পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে যন্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। যেখানে মানবশ্রমের ব্যবহারই অনেক কম, সেখানে বাধ্যতামূলক শ্রম কীভাবে থাকতে পারে?

জাতীয় আদমশুমারির এসব তথ্য পশ্চিমা রিপোর্টকে আবারও মিথ্যা প্রমাণ করেছে।