চীনা কমিউনিস্ট পার্টি কেন পারে? (৫)
2021-06-17 19:19:27

জুন ১৭: নিজের চারণভূমির মধ্য দিয়ে গ্যাস পাইপলাইন যাওয়ায় ৪০ হাজার ইউয়ান ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন চীনের ইনার মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের একজন পশুপালক। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট অভিযোগ দায়েরের দুই দিনের মাথায় ফোনে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নেয় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। আর তিনি ক্ষতিপূরণ পেয়ে যান এক মাসের মধ্যে। ২০২০ সালে ইনার মঙ্গোলিয়ায় জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষায় যে-কার্যক্রম শুরু হয়, এটি সে কার্যক্রমের অংশ। গত বছরের নভেম্বরে এই কার্যক্রমের আওতায় মামলা হয়েছে ৫৫৮৭টি। এর মধ্যে মামলার রায় হয়েছে ১২৭৬টির। এসব মামলায় ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার ইউয়ান।

অনিয়মের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি গ্রহণ করেছে চীনের কেন্দ্রীয় সরকার। রাশিয়ান কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি দিমিত্রি নোভিকভ ২০১২ সালে চীনের অনিয়ম-বিরোধী অভিযানের বিষয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতি থেকে মুক্ত থেকেই কেবল দেশের উন্নতি করা যায়। চীন সরকার জনগণের স্বার্থবিরোধী যে-কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর। চীনা জনগণ একে খুব ভালোভাবেই গ্রহণ করেছে।

২০২০ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুল থেকে প্রকাশিত এক জনমত রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৬ সালে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চীনা সরকারকে সমর্থন করেছে ৭১.৫ শতাংশ উত্তরদাতারা। মার্কিন ‘ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স মনিটর’ জানিয়েছে, দুর্নীতিদমন কার্যক্রম দ্বারা ক্ষমতার অপব্যবহার ব্যাপকভাবে কমানো সম্ভব হয়েছে চীনে। আর এতে দেশজুড়ে জনগণের মধ্যে সিসিপি-র গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোসেফ নাই বলেছেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ‘সফ্ট পাওয়ার’ এর মূল শক্তি। অনিয়ম ও  দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান মানুষের মন জয় করে। পার্টির ‘সফ্ট পাওয়ার’ বৃদ্ধির এটা অন্যতম মূল কারণ।

২০১৪ সালে, সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সি চিন পিং প্রথমবারের মতো ‘সার্বিকভাবে পার্টি পরিচালনা’-কে  চারটি মূল কৌশলের একটি হিসেবে ঘোষণা করেন। ২০১৬ সালে সিসিপি, নতুন পরিস্থিতিতে, সদস্যদের জন্য বেশ কয়েকটি গাইডলাইন প্রণয়ন করে এবং ‘চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরীণ তত্ত্বাবধান নিয়ম-বিধি’ সংশোধন করে। সিঙ্গাপুরের ‘লিয়ানহে জাওবাও’ বলছে, উক্ত দুটি নথি সিসিপি-র অভ্যন্তরে কঠোরভাবে বিভিন্ন নিয়ম-নীতি বাস্তবায়নের ভিত্তি যুগিয়েছে। মার্কিন ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ ওয়েবসাইটের ভাষ্য অনুসারে, সিসিপি পার্টিসদস্য ও ক্যাডারদের দুর্নীতি থেকে দূরে রাখতে একটি সিস্টেম গড়ে তুলেছে।

আমেরিকান বহুজাতিক কর্পোরেশনের উপদেষ্টা, রবার্ট লরেন্স কুহন মনে করেন, সিসিপি’র দুর্নীতিবিরোধী অভিযান ব্যবসা-পরিবেশ উন্নত করেছে এবং বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলর জন্য চীনে ব্যবসা করা সহজতর করেছে।

বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘ব্যবসা পরিবেশ, ২০২০’ রিপোর্ট’ অনুসারে, চীনের ব্যবসা-পরিবেশের বৈশ্বিক র‍্যাঙ্কিং ২০১১ সালের ৯১তম থেকে উন্নত হয়ে ২০১৯ সালে ৩১তম হয়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে চীনে বৈদেশিক পুঁজি ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ১৪৪.৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৪.৫ শতাংশ বেশি। এ বছরের প্রথম চার মাসে বৈদেশিক পুঁজির বাস্তব ব্যবহার ছিল আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৮.৬ শতাংশ বেশি।

অনিয়ম ও দুর্নীতি দমন হচ্ছে জনগণের চাওয়া। ফরাসি ‘ইউরোপ টাইমস’ মন্তব্য করেছে যে, বিগত কয়েক বছরে এই অনুশীলন প্রমাণ করেছে যে, দলের মধ্যে কঠোর নিয়ম-নীতির প্রয়োগ জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য কার্যকর। এই অভিজ্ঞতা কেবল চীনের ভবিষ্যতের উন্নয়নের জন্যই নয়, বিশ্ব রাজনীতির জন্য একটি নতুন দৃষ্টান্তস্বরূপ। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)