মে মাসে চীনের সিপিআই ছিল স্থিতিশীল
2021-06-16 11:14:15

গত ৯ জুন চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মে মাসে চীনের ভোক্তা মূল্য সূচক তথা সিপিআই গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১.৩ শতাংশ বেড়েছে। তবে, তার আগের মাসের চেয়ে ০.২ শতাংশ কমেছে। সবমিলিয়ে মাসজুড়ে সিপিআইয়ের স্থিতিশীল প্রবণতা বজায় ছিল। কিন্তু এ সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেল, লৌহ আকরিক ও অলৌহ ধাতুসহ নানা পণ্যের মূল্যের ব্যাপক বৃদ্ধির প্রভাবে চীনের শিল্প পণ্যের দামও বেড়েছে।

 

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মে মাসে জাতীয় সিপিআই ছিল গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১.৩ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে খাদ্য পণ্যের দাম ছিল ০.৩ শতাংশ বেশি, অ-খাদ্য পণ্যের ১.৬ শতাংশ বেশি, ভোক্তা মূল্য ১.৬ শতাংশ বেশি, এবং সেবা মূল্য ০.৯ শতাংশ বেশি। জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয় যে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সিপিআই বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো গত বছরের দাম পরিবর্তনের পরবর্তী প্রভাব  সম্প্রসারিত হওয়া। এর মধ্যে খাদ্য পণ্যের দাম গত মাসে ০.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ফলে এটি সিপিআই বৃদ্ধির ওপর ০.০৫ শতাংশের বেশি প্রভাব ফেলে।

 

জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের সামষ্টিক অর্থনীতি গবেষণালয়ের গবেষক কুও লি ইয়ান বলেন, সাধারণভাবে খাদ্যের মূল্য সিপিআই বৃদ্ধি সম্প্রসারণ রোধে ভুমিকা পালন করে। অ-খাদ্যের দামে ঋতুনির্ভরতার বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট। পর্যটনের মতো সেবার দামও এখানে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, পোশাক ও বসবাস খাতের মূল্যের  খুব বেশি প্রভাব পরিলক্ষিত হয় না।

 

এ দিন জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো মে মাসে প্রযোজক মূল্য সূচক বা পিপিআই প্রকাশ করে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯.০ শতাংশ বেশি এবং আগের মাস তথা এপ্রিলের চেয়ে ১.৬ শতাংশ বেড়েছে। জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, চীনে শিল্প পণ্যের দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে, প্রধাণত আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেল, লৌহ আকরিক ও অলৌহ ধাতুসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব  স্থানীয় বাজারে পড়ছে।

 

চীনের মিন শেং ব্যাংকের প্রধান গবেষক ওয়েন বিন বলেন, পিপিআই ও সিপিআই বৃদ্ধি পরিমাণ অব্যাহতভাবে বাড়ছে। একইসঙ্গে উত্পাদন উপকরণ ও জীবিকার উপায় বৃদ্ধিকারী পণ্যের দাম ও কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী । এসবের চাহিদার ওপর প্রভাব ফেলা ছাড়াও সিপিআই কাঠামোর সঙ্গে কিছুটা সম্পর্ক রয়েছে। চীনের সিপিআইয়ে খাদ্যের দামের বড় একটি স্থান রয়েছে।  

 

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কবে হ্রাস পাবে? এ সম্পর্কে চীনের আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিনিময় কেন্দ্রের উপ-সাধারণ অর্থনীতিবিদ জাং ইয়োং চুন বলেন, এটা প্রধাণত দু’টো শর্তের ওপর নির্ভর করে। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের শিথীল মুদ্রা নীতি ফিরিয়ে আনতে হবে। দ্বিতীয়ত, মহামারী প্রশমিত হবার পর বিশ্বের সরবরাহ চেইন উন্নতির উপর নির্ভর করবে। যুক্তরাষ্ট্রের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিথীল মুদ্রা নীতি গ্রহণ এবং বিশ্ব সরবরাহ চেইনের উন্নতি দ্রুত হলে, দ্রব্য মূল্য হ্রাস পাবে।’

 

মিন শেং ব্যাংকের প্রধান গবেষক ওয়েন বিন মনে করেন, বিশ্ব মহামারী পরিস্থিতির সামগ্রিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে দ্রব্যের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। কিন্তু দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সৃষ্ট চাহিদাও বাড়বে। তিনি বলেন, চীন দ্রব্য সরবরাহ নিশ্চিত ও দাম স্থিতিশীলতা করার ব্যবস্থা নিয়েছে। ফলে আংশিক দ্রব্য মূল্য কিছুটা প্রশমিত হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, পিপিআই বৃদ্ধির পরিমাণ বর্তমানে সবচেয়ে বেশি। তাই অ-খাদ্যের দাম হয়তো কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু খাদ্যের দাম সিপিআইয়ের ওপর প্রভাব ফেলবে। সুতরাং মূদ্রাস্ফীতি মুদ্রা নীতির ওপর তেমন প্রভাব ফেলবে না। সামষ্টিক নীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে, অভ্যন্তরীণ পুনরুদ্ধারে সমর্থন বাড়াতে এবং অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ চালিকাশক্তির উন্নয়ন করতে হবে।

 

প্রেমা/এনাম