২০ বছরে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা বিশ্বকে কি দিয়েছে?
2021-06-16 15:35:35

২০ বছরে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা বিশ্বকে কি দিয়েছে?_fororder_0616

২০ বছরে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা বিশ্বকে কি দিয়েছে?_fororder_06161

জুন ১৫: ১৫ জুন হলো ‘শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা’ প্রতিষ্ঠার দুই দশক পূর্তি। শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশের সংখ্যা আগে ছিল ৬টি; বর্তমানে এর ৮টি সদস্য দেশ রয়েছে। আরো আছে ৪টি পর্যবেক্ষক দেশ এবং ৬টি সংলাপের অংশীদার দেশ।

শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা শক্তিশালীভাবে আঞ্চলিক শান্তি ও উন্নয়ন বেগবান করার পাশাপাশি, বহুপক্ষবাদ রক্ষা করা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতন্ত্রায়ন এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

 

আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহলে একটি কথা প্রচলিত আছে। তা হলো- ইউরেশিয়া বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপের আকার নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা ইউরেশিয়ার দুই পঞ্চম অংশে বিস্তৃত এবং এর লোকসংখ্যা বিশ্বের প্রায় অর্ধেক। যা নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খুব গুরুত্বপূর্ণ গঠনমূলক শক্তি হয়ে উঠেছে। আঞ্চলিক সহযোগিতার ব্যবস্থা হিসেবে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা ২০ বছর ধরে প্রাণবন্ত হয়েছে। এর কারণ হলো- প্রতিষ্ঠার শুরুতে ‘শাংহাই চেতনা’ নির্ধারণ করা হয়। এই চেতনা হলো- পারস্পরিক আস্থা, কল্যাণ, সম্মান ও আলোচনাকে গুরুত্ব দেওয়া। পাশাপাশি বিভিন্ন সভ্যতার প্রতি সম্মান করা এবং অভিন্ন উন্নয়ন খুঁজে বের করা।

এটি হলো সহযোগিতার অগ্রসর চিন্তাধারা এবং বিভিন্ন সামাজিক ব্যবস্থা ও উন্নয়ন পথের দেশগুলোর মধ্যে মহাসম্প্রীতিতে বাস করার নতুন ধারনা। নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সভ্যতার সংলাপসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষণীয় ফলাফল অর্জন করেছে সংস্থার সদস্য দেশগুলো। যেন, শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার মহাসচিব ভ্লাদিমির ইমামোভিচ নোরোভের কথা অনুযায়ী, ২০ বছর ধরে ‘শাংহাই চেতনা’ ইতোমধ্যেই এর প্রাণবন্ত শক্তি ও আন্তর্জাতিক আকর্ষণীয় শক্তি প্রমাণ করেছে।

 

নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলো যথাক্রমে ধারাবাহিক সন্ত্রাসদমনের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং দশ বারেরও বেশি ‘শান্তির মিশন’ শীর্ষক যৌথ সন্ত্রাসদমন মহড়ার আয়োজন করেছে। পরিস্থিতি পরিবর্তন মোকাবিলায় নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রে সম্মিলিতভাবে সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও উগ্রবাদ দমন থেকে মাদকদ্রব্য পাচার রোধ, আইন প্রশাসনের নিরাপত্তা, অর্থ পাচার প্রতিরোধ এবং আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত হয়েছে। ফলে কার্যকরভাবে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।

 

বিগত ২০ বছরে আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার ক্ষেত্রও প্রসারিত হয়েছে। শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলোতে চীনের আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ আগের ১৭১৪ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ২৪৪.৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নতি হয়েছে। বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি হার ১৫ শতাংশ। ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগকে কাজে লাগিয়ে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার বিভিন্ন সদস্য দেশ উন্নয়নের ‘ঘনিষ্ঠতর অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটিতে’ পরিণত হয়েছে। চীন ও রাশিয়ার তেল সরবরাহ পাইপ লাইন, চীন-মধ্য এশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন, চীন-ইউরোপ এক্সপ্রেসসহ আন্তঃযোগাযোগ প্রকল্প এ অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য বাস্তব কল্যাণ বয়ে এনেছে।

 

আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা বরাবরই বহুপক্ষবাদে সমর্থন করে এবং তা চর্চা করে আসছে। পারস্পরিক সম্মান, ন্যায়সঙ্গত অবস্থান ও সহযোগিতার মাধ্যমে অভিন্ন কল্যাণের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে।

 

নভেল করোনাভাইরাস মহামারী প্রকোপের পর শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশ মহামারী প্রতিরোধের অভিজ্ঞতা বিনিময় করা, টিকা গবেষণা, চিকিত্সা সামগ্রীর নিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে সহযোগিতা জোরদার করেছে। তা ছাড়া, রাজনৈতিকভাবে আঞ্চলিক উত্তপ্ত সমস্যার সমাধানে ‘শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার পরিকল্পনা’ উত্থাপন করেছে সংস্থাটি।

 

শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার সহযোগিতা অব্যাহতভাবে গভীর হলেও তা সামরিক জোট হবে না। ন্যাটোসহ পশ্চিমা জোটের সঙ্গে এর বিশাল পার্থক্য আছে। সংস্থাটি জোট নিরপেক্ষ, সংঘাতহীন ও কোনো তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা না-করার নীতি মেনে চলে।

 

বর্তমানে বিশ্ব ক্রমেই অস্থির হচ্ছে। পশ্চিমা কিছু দেশ নতুন স্নায়ুযুদ্ধ শুরু করা এবং আদর্শিক দ্বন্দ্ব তৈরি করার চেষ্টা করছে। এ প্রেক্ষাপটে শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার ২০ বছরের উন্নয়নের দিকে ফিরে তাকানো গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে জনগণকে বলা হয় যে, মানবজাতির অভিন্ন কল্যাণের জন্য বরাবরই বহুপক্ষবাদের পথে, ন্যায্যতার পথে এবং ঐতিহাসিক পথে এগিয়ে যেতে হবে।

(লিলি/তৌহিদ/শুয়েই)