সম্প্রতি চীনের জাতীয় মহাকাশ ব্যুরো এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দেশটির প্রথম মঙ্গলযানের অনুসন্ধ্যান সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেছে। ব্যুরোর মুখপাত্র সু হোং লিয়াং জানান, ‘থিয়ান ওয়েন-১’ মঙ্গলযানের সাফল্য মহাকাশ বিজ্ঞানে চীনের সৃজনশীলতা ও অগ্রগতির প্রতীক। চীনের মহাকাশ উন্নয়নের ইতিহাসে ‘থিয়ান ওয়েন-১’ এ যাবত্ ‘ছয়টি প্রাথমিক’ সফলতা অর্জন করেছে। তা হলো: প্রথমবারের মতো পৃথিবী ও মঙ্গল ট্রান্সফার ট্র্যাকে মঙ্গলযানের উতক্ষেপণ, আন্ত-গ্রহ পরিবহন, পৃথিবীর বাইরের গ্রহে অবতরণ ও পরিদর্শন, এবং অনুসন্ধ্যান, ৪০ কোটি কিলোমিটারের দূরপাল্লার পর্যবেক্ষণ ও যোগাযোগ বাস্তবায়ন, এবং মঙ্গলের সর্বশেষ তথ্য লাভ করা।
বিশ্ব মহাকাশ ইতিহাসে ‘থিয়ান ওয়েন-১’ কেবল প্রথমবারের মতো চীনাদের সফলতা এনে দিয়েছে, তা নয়, বরং প্রথমবারের মতো একবারে মঙ্গল গ্রহে উড্ডয়ন, অবতরণ ও পরিদর্শন তিনটি লক্ষ্য বাস্তবায়ন করেছে। এটি মহাকাশ অভিযানে চীনের শীর্ষ স্থান লাভের প্রতীক। তাতে চীনা মহাকাশচারীদের মেধা ও পরিশ্রমের প্রতিফলন হয়েছে।
‘থিয়ান ওয়েন-১’ মঙ্গলসন্ধ্যানের সাফল্য কেবল চীন নয়, ববং সারা বিশ্বের জন্য উপকারী। যুক্তরাষ্ট্রের প্রবীন মহাকাশবিষয়ক সাংবাদিক লিওনার্ড ডেবিড বলেছেন, মহাকাশে চীনের দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে, তা পৃথিবীর কাছের কক্ষপথে মানবজাতির তত্পরতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি চন্দ্র, মঙ্গল এমন কি মহাকাশের আরও দূরত্বে মানবজাতির অনুসন্ধ্যানের জন্য সহায়ক হবে।
মহাকাশে অনুসন্ধ্যানের ক্ষেত্রে চীন বরাবরই উন্মুক্ততা ও সমন্বিত অর্জন এবং পারস্পরিক উপকারিতা ও সহযোগিতার চেতনায় সময়যোগী প্রযুক্তিগত তথ্য প্রকাশ করে, যাতে সকলে চীনের মহাকাশ উন্নয়নের সাফল্য উপভোগ করতে পারে।
গত ১১ জুন, চীনের জাতীয় মহাকাশ ব্যুরো ‘থিয়ান ওয়েন-১’ মঙ্গলযানের মঙ্গলে অবতরণের প্রথম তথ্যউপাত্ত উন্মোচন করেছে। তথ্যউপাত্তের মধ্যে রয়েছে ‘জুরুং’ নামক মঙ্গলগাড়ির ধারণকৃত অবতরণ স্থানের পুরো দৃশ্য, মঙ্গলের ভৌগোলিক দৃশ্য, চীনের অবতরণ ও পরিদর্শনের ছবি ইত্যাদি।
গত ডিসেম্বর মাসে চীনের চন্দ্র অনুসন্ধ্যানযান চন্দ্র থেকে ১,৭৩১ গ্রাম মাটির নমুনা নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে এসেছে। মাটির পরিমাণ বেশি না হলেও চীন বিশ্বের সঙ্গে নমুনা শেয়ার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে সবাই মহাকাশ সম্পর্কে জানতে পারবে।
গত ২৯ এপ্রিল চীনের স্পেস স্টেশনের কোর মোডিউল সাফল্যের সঙ্গে উতক্ষেপণ করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২২ সালে স্পেস স্টেশন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। কোর মোডিউল সাফল্যের সঙ্গে উতক্ষেপণের সঙ্গে সঙ্গে চীন সারা বিশ্বের জন্য এটি খুলে দেবে বলে ঘোষণা করেছে। বর্তমানে ২৭টি দেশ স্পেস স্টেশনে অবস্থানের আবেদন করেছে এবং এর মধ্যে ১৮টি দেশ তার যোগ্যতা লাভ করেছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেন, চীন বরারবরই মহাকাশের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও অ্যাপলিকেশনের সৃজনশীল উন্নয়ন সাধন করে আসছে। সেসঙ্গে সক্রিয়ভাবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চালাচ্ছে। মানব জাতির কল্যাণে আরও অবদান রাখতে চায় চীন। মহাকাশ ক্ষেত্রে সি চিন পিংয়ের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছে চীন। চীনের তত্পরতা বড় দেশ হিসেবে তার দায়িত্বশীল ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে।
(রুবি/এনাম/শিশির)