২০১৪ সালের ২৮ থেকে ২৯ মে দ্বিতীয় সিনচিয়াং বিষয়ক কাজকর্ম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তৃতা করেন। সেটি ছিল চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি)-এর অষ্টাদশ জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনের পর সিনচিয়াংবিষয়ক সর্বোচ্চ বিশেষ সম্মেলন। সম্মেলনে জাতীয় পর্যায়ে দক্ষিণ সিনচিয়াং উন্নয়নের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। এরপর বিগত ৭ বছর ধরেই সি চিন পিং দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি বহু বার সিনচিয়াংয়ের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার কথা জোর দিয়ে বলেছেন। জনগণের কাজ ও আয়ের সুযোগ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এখন দক্ষিণ সিনচিয়াং অনেক উন্নত হয়েছে ও হচ্ছে। দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের ২৬ লাখেরও বেশী দরিদ্র বাসিন্দা দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছেন।
২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে সি চিন পিং সিনচিয়াং পরিদর্শন করেন। তাঁর প্রথম স্টেশন ছিল কাশগার। তিনি কাশগারের জাতীয় দারিদ্র্যবিমোচন গুরুত্বপূর্ণ জেলা শুফু জেলার আয়গমনগন গ্রামের বাসিন্দা আবদূকিউমু রউজির বাড়ি পরিদর্শন করেন। রউজির এ বিষয়ে বলেন,
‘প্রেসিডেন্ট সি আমাদের গ্রামে কেন্দ্রীয় সরকারের জনগণের সুবিধার নীতি কার্যকর হওয়ার অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। তিনি বলেন, জনগণের জীবনমান উন্নয়নকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে হবে।’
দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ ভাল না। অঞ্চলটিতে ৯০ শতাংশই হলো গোবি মরুভূমি। দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের চারটি বান্নার ছিল চীনের ১৪টি দারুণ দরিদ্র অঞ্চলের মধ্যে একটি। আগে দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের দরিদ্র বাসিন্দা গোটা সিনচিয়াংয়ের ৮৫ শতাংশ ছিল। প্রায় তিন জনের মধ্যে একজন ছিল দরিদ্র বাসিন্দা। কর্মসংস্থানের হারও খুবই কম ছিল। জীবনযাত্রার মান অনেক নিম্ন ছিল।
সেজন্য দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের দারিদ্র্যবিমোচনের বিষয় ছিল সিনচিয়াং কাজকর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সি চিন পিং সিনচিয়াং পরিদর্শনের সময় বলেন, স্থানীয় অবস্থা অনুযায়ী দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে হবে। বাসিন্দাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার চেষ্টা করতে হবে। কৃষকদেরকে অগ্রণী প্রযুক্তি শিক্ষা দিতে হবে। প্রতিটি গ্রামে নিজের বৈশিষ্ট্যময় শিল্প গড়ে তুলতে হবে। কৃষকদের মুনাফা নিশ্চিত করতে হবে।
২০২০ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সিনচিয়াং কাজকর্ম সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের অর্থনীতি ও সমাজ উন্নয়ন এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে হবে।
বিগত সাত বছরে দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের জনগণের জীবনমান অনেক উন্নত হয়েছে। দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের স্যিদি বান্নারে কয়লা পরিবর্তে বিদ্যুত্ শক্তি ব্যবহারের পরিকল্পনা কার্যকর হওয়ায় প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য শীতকালে হিটিং ব্যবস্থা করা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের বিনামূল্যের শিক্ষা ১৫ বছরে উন্নীত হয়েছে। চীনের সাধারণ অঞ্চলে বিনামূল্য শিক্ষা নয় বছরের। দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের বাসিন্দারা টানা পাঁচ বছর বিনামূল্যে শরীর পরীক্ষা করে আসছেন। ২০২০ সালে দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের ২৬ লাখ বাসিন্দা দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সিপিসি’র অষ্টাদশ জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনের পর দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের পরিবর্তনের ইতিহাস আগের সমস্ত পরিবর্তনের চেয়েও বেশি।
আসলে সিনচিয়াংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জাতিগত ঐক্যের বিষয়। সি চিন পিং বলেন, নিজের চোখের যত্ন নেওয়ার মতো করে জাতিগত ঐক্য সুরক্ষা করতে হবে। নিজের জীবনের মতো করে জাতিগত ঐক্যের মূল্যায়ন করতে হবে। বিভিন্ন জাতির মানুষকে ডালিমের বীজের মতো ঘনিষ্ঠভাবে থাকতে হবে। শিশুকাল থেকে জাতিগত ঐক্যের ধারণার প্রশিক্ষণ নিতে হবে। (ছাই/আলিম/রুবী)