ঢাকা ছাপিয়ে সীমান্তবর্তী জেলায় করোনা বিপর্যয়: স্বস্তি চীনের টিকায়
2021-06-13 19:43:00

ঢাকা ছাপিয়ে সীমান্তবর্তী জেলায় করোনা বিপর্যয়:  স্বস্তি চীনের টিকায়_fororder_0613-4

দেশের সীমান্তবর্তী ১৬ জেলায় করোনা বিপর্যয় ঘটেছে বলা যায়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যত্র যেখানে সংক্রমণ হার ১০ শতাংশের কিছু উপরে- সেখানে সীমান্তবর্তী বেশিরভাগ জেলায় সংক্রমণ হার ৫০ শতাংশের বেশি। চাপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, খুলনা, চুয়াডাঙ্গায় এ হার ৬০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোসহ বর্তমানে দেশের ৩৬টি জেলায় করোনা সংক্রমণ ঊর্ধমুখী।

সংক্রমণের পাশাপাশি মৃত্যুও বেড়েছে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে। রাজশাহী মেডিকেলে ১২ জুন পর্যন্ত ১১ দিনে মারা গেছে ১১১ জন। শয্যা সঙ্কটে রোগী ভর্তি বন্ধ রাখতে হয় খুলনা মেডিকেল কলেজে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার ভারতীয় ডেল্টা ধরনের কারণেই সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ। এ সংক্রমণ সামনে অন্যান্য জেলায়ও ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন তারা। মহামারি বিপর্যয় ঠেকাতে কোভিড নাইনটিন সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. সহীদুল্লাহ সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রয়োজনে কারফিউ জারির পরামর্শ দিয়েছেন। এ থেকে বোঝা যায় পরিস্থিতি কতটা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়েছে।

রাজধানী ছাপিয়ে সীমান্তবর্তী জেলা ও দেশের অন্যত্র করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়াকে অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, আক্রান্তের তুলনায় পরীক্ষা না বাড়ানো, যথাযথভাবে বিধিনিষেধ কার্যকর না করা এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণেই এ করোনা বিস্ফোরণ। এখন কঠোরভাবে এর লাগাম টেনে না ধরলে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে বারবার সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

টান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির ভাষ্য মতে পরিকল্পিত উদ্যোগ ও সুশাসনের ঘাটতির কারণেই করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। সংস্থাটি বলছে বিজ্ঞানসম্মত লকডাউন না দেওয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ব্যর্থতার কারণে চলতি মাসেই করোনার তৃতীয় ঢেউ আঘাত হানতে পারে বাংলাদেশে।

স্বাস্থ্যবিভাগ তথা সরকার করোনা মোকাবেলায় দৃশ্যত অনেক কিছুই করছে। সারাদেশে লকডাউন ১৬ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সাধারণ বিধিনিষেধ থেকে শুরু করে কঠোর ও সর্বাত্মক লকডাউন দেওয়া হয়েছে স্থানভেদে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। টিকা সংগ্রহে অনেক দৌঁড়ঝাপ করছেন সরকারের মন্ত্রীরা। এত কিছুর পরও কাঙ্খিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না যেনতেন বিধিনিষেধ আর জনগণের স্বাস্থ্যবিধি মানায় অনীহার কারণে।

এরই মধ্যে টিকার অভাবে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে গণটিকাদান কর্মসূচি। অক্সফোর্ডের দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছেন না ১৫ লাখ মানুষ। যদিও কোভ্যাক্স কর্মসূচির মাধ্যমে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১০ লাখের বেশি টিকা শিগগির বাংলাদেশ আসছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন।  কিন্তু এ সহসা যে কবে- তা হলপ করে বলতে পারছেন না কেউ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তো খেদ প্রকাশ করে বলেই ফেলেছেন, সবাই দেব-দিচ্ছি করে। কিন্তু টিকা আর আসে না!

এরই মধ্যে কোভ্যাক্সের আওতায় ফাইজারের ১ লাখের কিছু বেশি টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু এ টিকা রক্ষণাবেক্ষণেই হিমসিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্যবিভাগকে। এ জন্য বাংলাদেশ সহজে রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য টিকা চেয়েছে কোভ্যাক্স কর্মসূচির কাছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকা পাওয়ার সম্ভবনা তো অনেক আগেই কর্পুরের মতো উবে গেছে।

এমনই এক উদ্ধাররহিত পরিস্থিতিতে একমাত্র স্বস্তি চীনের টিকায়। দ্বিতীয় কিস্তিতে চীনের উপহারের ৬ লাখ ডোজ টিকাও রোববার ঢাকা এসে পৌঁছেছে। এ নিয়ে দুদফায় চীন ১১ লাখ ডোজ টিকা উপহার দিলো বাংলাদেশকে। প্রথম দফায় পাঠানো ৫ লাখ ডোজ আগেই প্রয়োগ আরম্ভ হয়েছে। অচিরেই নতুন ৬ লাখ ডোজ দিয়ে কিছুটা হলেও চালু রাখা যাবে গণটিকাদান কর্মসূচি।

চীনের টিকা নিয়ে সবচেয়ে বড় সুখবরটি দিয়েছেন খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ১২ জুন তিনি জানান চীনের সিনোফার্মের টিকা কেনার চুক্তি হয়ে গেছে। শিগগিরই চলে আসবে এ টিকা। যদি অন্য কোনো জটিলতা না থাকে তবে চীনের সিনোফার্মের টিকা পাওয়াটা নিশ্চিত বলা চলে। বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তা সম্ভাব্য চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে টিকার দাম প্রকাশ করে দেওয়ায় সিনোফার্মের টিকা পাওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত চুক্তি হওয়াতে সে সংশয় দূর হয়েছে।

চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাকের সঙ্গে টিকার বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানানো হয়েছে সরকারের তরফে। পাশাপাশি রাশিয়া থেকে টিকা আনার আলোচনাও চলছে। টিকার একটি মাত্র উৎসের ওপর নির্ভর না করে যত দ্রুত সম্ভব কয়েকট উৎস নিশ্চিত করা জরুরি। না হলে টিকা নিয়ে ফের কোনো বিপর্যয়ে পড়া অসম্ভব নয়। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছে।  

মাহমুদ হাশিম

ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার