সবুজ চীন গড়ে তুলতে চীনা তত্পরতা
2021-06-11 10:21:42

সবুজ  চীন গড়ে তুলতে চীনা তত্পরতা_fororder_src=http-%2F%2Fwww.pingliang.gov.cn%2Fxwzx%2Fxqkx%2Fzl%2F201905%2FW020190507606244796509&refer=http-%2F%2Fwww.pingliang.gov

গত সোমবার চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ছিংহাই প্রদেশের রাজধানী সি নিং শহর পরিদর্শন করেছেন। এদিন বিকালে তিনি ওয়েন হুই সড়কের ওয়েন থিং সিয়াং কমিউনিটিতে জাতীয় ঐক্য এবং তৃণমূল পর্যায়ের পরিচালনা কাজের খোঁজখবর নেন।

 

ওয়েন থিং সিয়াং কমিউনিটিতে বিভিন্ন জাতির ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ বাস করেন। কমিউনিটিতে ‘সাড়ে চারটার ক্লাসরুম’ স্থাপনের মাধ্যমে শিশুদের স্কুলের ক্লাস শেষে ‘ডে কেয়ার’ সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। কমিউনিটিতে বৃদ্ধদের যত্নের ব্যবস্থাও আছে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা পরিচিত পরিবেশে অবসর সময় কাটাতে পারেন। পরিদর্শনকালে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, তিনি বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনের সময় গ্রাম ও শহরের কমিউনিটিতে যান। তিনি জনগণের জীবনযাপনের খোঁজখবর নেন। প্রতিটি কমিউনিটির ভালো কাজের পেছনে সিপিসির তৃণমূল নেতৃত্বের ভূমিকা রয়েছে।

 

প্রেসিডেন্ট সি ছিং হাই শেং ইউয়ান কার্পেট কোম্পানিতে যান। স্থানীয় কাঁচামাল দিয়ে সৃজনশীল ভাবে কোম্পানির কার্পেট তৈরি এবং স্থানীয় কর্মসংস্থান খাতে ভূমিকা রাখার বিষয়ে জানতে চান।

ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির হস্তশিল্প-তিব্বতি কার্পেট হল তিব্বতি জাতির প্রতিনিধিত্বকারী বস্তু। ছিংহাই শেং ইউয়ান কার্পেট কোম্পানির কার্পেট ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আমেরিকাসহ ৪০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে রপ্তানি হয়। ২০২০ সালে এ কোম্পানির বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪.২ কোটি ইউয়ান।

 

গত মঙ্গলবার চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দেশটির ছিং হাই হ্রদের সিয়ান নুই ওয়ানে সেখানকার পরিবেশের সার্বিক সংস্কার এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেছেন।

 

তিনি বলেন, প্রতিবেশগত সভ্যতার দিক দিয়ে ছিং হাইয়ের কৌশলগত অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভালোভাবে ছিং হাইয়ের প্রতিবেশগত সভ্যতা নির্মাণ, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ, দেশের প্রাকৃতিক কৌশল কার্যকর এবং জাতীয় পার্ক নির্মাণ করতে হবে। কারণ প্রকৃতি হচ্ছে আমাদের জন্য এক মূল্যবান গুপ্তধন।

 

এদিন তিনি ছিং হাই প্রদেশের হাই পেই তিব্বত জাতির স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যের কাং ছা জেলা পরিদর্শন করেন। সি চিন পিং ছিংহাই হ্রদের সিয়ান নুই ওয়ানে স্থানীয় প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ কাজের খোঁজখবর নেন। এরপর তিনি শা লিউ হ্য থানার কুওলুওচাংকুংমা গ্রামে যান এবং তিব্বতি মানুষদের খোঁজখবর নেন।

গত মঙ্গলবার চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ‘দ্বিতীয় চীন ও মধ্য-পূর্ব ইউরোপীয় দেশসমূহের বিনিয়োগ ও বাণিজ্যমেলায়’ এক অভিনন্দনবাণী পাঠিয়েছেন।

 

অভিনন্দনবাণীতে সি চিন পিং বলেন, এই মেলা চীন এবং মধ্য-পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর মৈত্রী বাড়ানো, সহযোগিতা সম্প্রসারণ এবং অভিন্ন উন্নয়ন অনুসন্ধানের গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। গত ফেব্রুয়ারি মাসে চীন এবং মধ্য-পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলন সফল হয়েছে। নতুন পরিস্থিতিতে চীন এবং মধ্য-পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে বাস্তবভিত্তিক সহযোগিতা চালানো এবং পাস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতা বৃদ্ধি করা উচিত্। আগামী পাঁচ বছরে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে ১৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এবং আগামী পাঁচ বছরে এসব দেশ থেকে আমদানিকৃত কৃষিজাত দ্রব্যের মূল্য দ্বিগুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। নিংপোসহ বিভিন্ন এলাকায় চীন ও মধ্য-পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার দৃষ্টান্তমূলক এলাকা নির্মাণ কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে। বিভিন্ন পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শীর্ষ সম্মেলনের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হচ্ছে।

 

অভিনন্দনবাণীতে সি বলেন, এবারের মেলার মাধ্যমে চীনের বাজারে বিদেশি পণ্যের প্রচার বাড়বে। শুধু তাই নয়, মেলার আয়োজন মহামারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে। বিভিন্ন পক্ষ এ মেলাকে কাজে লাগিয়ে অব্যাহতভাবে সহযোগিতার পথ খুঁজে বের করবে এবং যৌথভাবে সহযোগিতার বিশাল অবকাশ সৃষ্টি করবে বলে বাণীতে উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্ট সি।

 

গত ৫ জুন পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের অনুষ্ঠানে এক অভিনন্দনবাণী পাঠান চীনের প্রেসিডেন্ট সি।

 

অভিনন্দনবাণীতে প্রেসিডেন্ট সি বলেন, পৃথিবী হলো মানবজাতির অভিন্ন বাসস্থান। প্রাকৃতিক পরিবেশ উত্থাপিত হলে সভ্যতার উত্থান হবে। মানবজাতির উচিত্ প্রকৃতিকে গুরুত্ব দেওয়া, রক্ষা করা এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানবজাতির সম্প্রীতিময় বসবাসের নতুন পরিস্থিতি গড়ে তোলা। জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য হারানো, মরুকরণ এবং চরম আবহাওয়ার কারণে মানবজীবনে কঠিন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। গোটা বিশ্ব একই নৌকায় নদী পার হওয়া অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি। তাই আন্তর্জাতিক সমাজের ন্যায়সঙ্গত, যৌক্তিক, সহযোগিতামূলক ও অভিন্ন কল্যাণকর বিশ্ব পরিবেশ প্রশাসন-ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং মানবজাতির টেকসই উন্নয়ন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত্।

প্রেসিডেন্ট সি আরো বলেন, বিশ্বের প্রাকৃতিক সভ্যতায় অংশগ্রহণকারী, অবদানকারী ও নেতৃস্থানীয় দেশ হিসেবে চীন বহুপক্ষবাদ অনুশীলন করা, জাতিসংঘকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা রক্ষা এবং বিশ্ব পরিবেশ প্রশাসনের মান বাড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। চীন চলতি বছর ‘জীববৈচিত্র্য সম্পর্কিত কনভেনশনের’ ২৫তম স্বাক্ষরকারী দেশের সম্মেলন আয়োজন করবে। বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে প্রকৃতি সংরক্ষণের নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করতে, বৈশ্বিক পরিবেশ প্রশাসনে নতুন চালিকাশক্তি প্রদান করতে, মানবজাতি ও প্রকৃতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি নির্মাণ করতে এবং একসঙ্গে সুন্দর ও বিশুদ্ধ বিশ্ব গড়ে তুলতে চায় চীন।

 

গত ২ জুন নামিবিয়ার প্রেসিডেন্ট  হাগা গেইনগোব দম্পতি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ায় সমবেদনা জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।

 

সি চিন পিং বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হাগা গেইনগোব দম্পতি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ায় আমি ও আমার স্ত্রী ফেং লি ইউয়ান তাদেরকে আন্তরিক সমবেদনা জানচ্ছি। আমরা এই দম্পতির আশু সুস্থতা কামনা করছি।”

 

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির প্রাদুর্ভাবের পর থেকে চীন ও নামিবিয়া মহামারি প্রতিরোধে একে অপরকে সহযোগিতা করে আসছে। চীন নামিবিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব দেয়। দু’দেশের সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক নতুন পর্যায়ে উন্নীত করতে ইচ্ছুক চীন।

 

 

 

সবুজ  চীন গড়ে তুলতে চীনা তত্পরতা

 

গত ৫ জুন সারা বিশ্বে পালিত হয়েছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘মানুষ ও প্রকৃতির সম্প্রীতিময় সহাবস্থান’।  বহু বছর ধরে চীন দূষণ রোধ, প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের বিন্যাস সাধনে মানুষ ও প্রকৃতির সম্প্রীতিময় সহাবস্থানের জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছে।

 

সম্প্রতি বেইজিংয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্যুরো এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বর্তমানে বেইজিংয়ে নানা প্রজাতির পাখির পরিমাণ ৫০৮৬টি। এখানে  নতুন করে আরো ৭০টি প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়েছে।

ফলে বেইজিং জীববৈচিত্র্যের দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ নগরগুলোর অন্যতম এবং বিশ্বের বৃহত্তম পাখির সমাবেশস্থল। ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য ও অধিক জনসংখ্যার মহানগর হওয়া সত্ত্বেও বেইজিংয়ে মানুষ ও প্রকৃতির সম্প্রীতিময় সহাবস্থান নিশ্চিত হয়েছে।

 

এ প্রসঙ্গে বেইজিংয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্যুরোর পরিচালক ছাও চি পিং বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিং প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণস্থল নির্মাণকাজ জোরদার, আবাসস্থল রক্ষা ও জল পরিবেশ পুনরুদ্ধারসহ নানা ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ নিশ্চিত করেছে।

 

তিনি বলেন,‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা কেন্দ্রীয় অঞ্চলে উত্তর-পূর্ব হেজহগ, ও মুসতেলা সিবিরিকাসহ নানা প্রজাতির পশুপাখি দেখতে পাচ্ছি। তাতে প্রতিফলিত হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় অঞ্চলে নানা পদ্ধতিতে নগরের সবুজায়ন বাড়িয়ে সেসব পশুপাখির জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ সরবরাহ করা গেছে।’

 

সরকার পার্ক নির্মাণ ও জলাভূমি পুনরুদ্ধারসহ নানা পদ্ধতিতে সবুজ অঞ্চল বাড়িয়েছে। এ প্রসঙ্গে একজন নাগরিক বলেন,‘আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের নিচেই সুবজ বাগান আছে, সর্বত্র সবুজ চোখে পড়ে।’

 

কেবল বেইজিং নয়। মানুষ ও প্রকৃতির সম্প্রীতিময় সহাবস্থান নিশ্চিত করতে চীন জাতীয় পর্যায়ে পরিবেশ সংরক্ষণ অঞ্চলের পরিমাণ বাড়িয়ে ৪৭৪টিতে উন্নীত করেছে, যার মোট আয়তন নয় লাখ ৮৩ হাজার ৪শ বর্গকিলোমিটার।

 

একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে একদিকে কঠোর নীতিতে  পরিবেশ সংরক্ষণ করতে হয়, অন্যদিকে, পরিবেশ সরংক্ষণ অঞ্চলে আদিবাসীদের নিজস্ব জীবন-যাত্রা নিশ্চিত করতে হয়।

 

চীনের ছিং হাই প্রদেশে সান চিয়াং ইউয়ান জাতীয় উদ্যানে মোট ১২০টিরও বেশি পশুপাখি বাস করে। তাছাড়া, এখানে মালভূমির বৈচিত্র্যময় উদ্ভিতও রয়েছে। এ জাতীয় উদ্যানের আদিবাসীদের নিজস্ব জীবন-যাত্রা নিশ্চিত করতে ‘এক পরিবার, এক কর্ম’ নীতি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। উদ্যানটি আগেকার পশুপালক জাতীয় উদ্যান থেকে বর্তমানে  নির্মাণ শক্তিতে পরিণত হয়েছে। গ্রামবাসী ল্য গা জাতীয় উদ্যানের পরিবেশ সংরক্ষকদের অন্যতম।

 

তিনি বলেন,‘আগে ভাবি নি, নিজের গ্রামীন বাড়ী একদিন জাতীয় উদ্যানে পরিণত হবে। জাতীয় উদ্যানের সংরক্ষক হিসেবে নিজের বাড়ী আরও ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে পারছি। আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণের ভাবনাও উন্নত হয়েছে। এ প্রবণতা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য খুবই উপকারী।’

 

সম্প্রতি চীনের প্রাকৃতিক পরিবেশ মন্ত্রণালয় ‘২০২০ সালের চীনের প্রাকৃতিক পরিবেশের অবস্থা বিষয়ক ইস্তেহার প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে যে, ২০২০ সালে চীনজুড়ে ৩৩৭টি জেলা পর্যায়ের শহরে সুষ্ঠু আবহাওয়ার দিনের পরিমাণ ৮৭ শতাংশ ছাড়িয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে পাঁচ শতাংশ বেশি।

 

পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠা মার্কিন ক্যামেরাম্যান  ক্যালি ওবামা এক সময় বেইজিং ও ছেং তুতে বাস করতেন। তিনি বলেন,  পরিবেশ সংরক্ষণে অর্থবরাদ্দ জোরদারের ফলে চীনের পরিবেশ দিন দিন উন্নত হচ্ছে।

 

তিনি বলেন, ‘স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে যে, বেইজিং, হ্য পেই ও ছেং তুসহ অনেক জায়গায় বাস্তব পরিবর্তন আনা হয়েছে। সরকারের কার্যক্রম ও নীতি পরিবেশ সরংক্ষণে ফলপ্রসু হয়েছে। এটি খুবই স্পষ্ট।’

রুবি/এনাম